Mon, Nov 13 2017 - 12:35:35 PM +06

কেন হয় মেয়েদের ভ্যাজিনাল ক্যান্ডিডায়াসিস !


News Image

হলি টাইমস রিপোর্ট :


অধিকাংশ নারী জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে যোনীর ছত্রাক জনিত রোগ হয় যা ভ্যাজাইনাল থ্রাশ নামে পরিচিত। এ সমস্যার কারণে যৌনাঙ্গ ও তার পারিপার্শ্বিক অংশে চুলকানি বা যন্ত্রণা, জ্বালাবোধ এবং ফুলে যেতে পারে। কিছু কিছু সময়ে পনিরের ন্যায় সাদা, সর-সদৃশ্য স্রাব হয়ে থাকে।

যোনির ক্ষত সাধারণত ক্ষতিকারক হয় না, তবে তা অস্বস্তিকর কারণ হয়ে থাকে। এটি বারবার ফিরে আসতে পারে – যা পৌনপুনিক অথবা জটিল ভ্যাজাইনাল থ্রাস নামে পরিচিত।

যোনীয় রোগের লক্ষণ
যোনীয় রোগের লক্ষণ হিসেবে যেগুলো দেখা যায়, ফোঁড়া, তরলক্ষরণ, সূতিকা, জেনিটাল ওয়ার্ট (যৌনাঙ্গীয় আঁচিল) এবং বিভিন্ন যৌনরোগ ।

কেন যোনিতে ক্ষত হয়ে থাকে:

যোনিগাত্র এবং গোড়ার অংশে ফোঁড়ার উদ্ভব সচারচর দেখা যায় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটি বার্থোলিনের ছত্রাকের কারণে হয়ে থাকে। ছত্রাকটি দেখতে অনেকটা মটরদানার মতো, এবং বার্থোলিনের গ্রন্থিতে বাধার সৃষ্টির কারণে এর সৃষ্টি। এর ফলে এটি যোনির প্রবেশমুখে ক্ষরিত তরল পৌঁছতে বাধা দেয়। এ ধরনের সমস্যা ছোটোখাটো শল্যাচিকিৎসা বা সিলভার নাইট্রেট নামীয় রাসায়নিকের দ্বারা সহজেই দূর করা যায়।ক্ষত হচ্ছে একটি ঈস্ট-ছত্রাক সৃষ্ট সংক্রমণ, যা সাধারণত ক্যানডিডা অ্যালবিকানস নামক ঈস্ট জাতীয় ছত্রাকের কারণে হয়ে থাকে।কোনো ধরনের লক্ষণ সৃষ্টি ছাড়াই ক্যানডিডা অনেক নারীর যোনিতে উপস্থিত থাকে। যোনির নিঃসরণ ও যোনিতে অবস্থানরত অন্যান্য সহায়ক ব্যাকটেরিয়া এই ছত্রাককে নিয়ন্ত্রিত রাখে। যখন যোনির ভেতরের অনুজীবদের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নিয়ন্ত্রিতহীন হয়ে পড়ে আর ক্যানডিডা ছত্রাকের সংখ্যা বেড়ে যায়, তখন সমস্যার সৃষ্টি হয় এবং যৌনাঙ্গে ঘা ঘা হয়ে যায়  ।একে ভ্যাজিনাল ক্যান্ডিডায়াসিস ও বলা হয় ।

যোনিতে সৃষ্ট ক্ষত যৌনবাহিত সংক্রমণের অন্তর্ভূক্ত নয়, তবে কখনো কখনো যৌন মিলনের সময় এটি পুরুষদের মধ্যে সংক্রমিত হয়ে পড়ে। তাই ক্ষত আক্রান্ত হলে চিকিৎসা গ্রহণ চলা অবস্থায় এবং সব উপসর্গ প্রশমিত না হওয়া পর্যন্ত যৌন মিলন এড়িয়ে চলাই ভালো। যৌন মিলনের ফলেও ক্ষত বৃদ্ধি পেতে পারে। বিশেষত যদি আপনি যৌন মিলনের সময় সহজ হতে না পারেন ও পিচ্ছিলকারক পদার্থ উৎপন্ন না হয়, তাহলে ক্ষত আরো বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

কারা এ জাতীয় ভ্যাজাইনাল থ্রাশে আক্রান্ত হয় :
যোনিতে ক্ষত হওয়া খুবই সাধারণ বিষয়। জীবনের কিছু সময়ে বিশ্বের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ নারীই কয়েকবার এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এদের মধ্যে অর্ধেক নারীরা একের অধিক বার ক্ষততে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

বিশ ও ত্রিশোর্ধ নারীরা যোনিতে সৃষ্ট ক্ষতে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। যাদের মাসিক এখনো শুরু হয়নি কিংবা যাদের মেনোপজ (রজঃনিবৃত্তি) শুরু হয়ে গেছে তাদের মধ্যে ক্ষত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

যদিও যেকোনো নারী ক্ষততে আক্রান্ত হতে পারেন, তবে বিশেষ করে নিম্নোক্ত অবস্থায় ক্ষত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকেঃ

  1. গর্ভবতী থাকাকালে
  2. অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণকালে
  3. অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকলে

গর্ভাবস্থায় ক্ষততে আক্রান্ত হওয়া
গর্ভবতী থাকাকালে ক্ষততে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। গর্ভবতী হওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষতর প্রভাব সম্পর্কে কোনো প্রমাণ নেই। এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, গর্ভবতী থাকাকালে ক্ষত হলে তা অনাগত শিশুর ক্ষতির কারন হয় না। তবে, গর্ভবতী থাকাকালে অথবা শিশুকে স্তন্যদানকালে ক্ষত আক্রান্ত হয়ে থাকলে তখন মুখে গৃহীত ক্ষত বিরোধী চিকিৎসা নেয়া থেকে বিরত থাকুন। তার পরিবর্তে ইন্ট্রাভ্যাজিনাল মলম অথবা জোলাপ ব্যবহার করুন এবং প্রয়োজন মনে হলে ছত্রাক বিরোধী মলম ব্যবহার করতে পারেন।

ক্ষতের বিভিন্ন ধরণ

  1. মুখ, ত্বক এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে শিশ্নের অগ্রভাগে ক্ষত হতে পারে
  2. মুখ গহ্ববরের থ্রাস
  3. শিশুদের ওরাল বা মুখে সৃষ্ট ক্ষত
  4. পুরুষদের যৌনাংগের থ্রাস

যখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে
যোনির ক্ষত দ্বারা সৃষ্ট লক্ষণ বা উপসর্গ যদি আপনার প্রথমবারের মত দেখা যায় এবং বিশেষ করে যদি ব্যথা অনুভব করেন, তাহলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিৎ।

কারণ যোনির ক্ষতের লক্ষণ অনেক সময়ই ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা বা মাঝে মধ্যে কোনো যৌনবাহিত সংক্রমণের (STIs) লক্ষণের মত হয়ে থাকে। আগে কখনো  এ জাতীয় ক্ষত শনাক্ত করে থাকলে আপনি যদি তার লক্ষণ বুঝতে পারেন তাহলে কাছের ফার্মেসিতে থেকে ক্ষতবিরোধী ঔষধ সংগ্রহ করে নেয়া ভালো ।

 চিকিৎসা গ্রহণের পরেও যদি সমস্যা দূর না হয় অথবা যদি ক্ষতের পুনরাবৃত্তি হতে থাকে (কয়েক মাসে অন্তত একবার করে),  অধিকতর অনুসন্ধানের জন্য আবার ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।


ক্ষতের চিকিৎসা

যৌন বিশেসজ্ঞ র্শমিষ্ঠা ঘোষাল বলেছেন, সহজেই মুখে খাওয়ার ট্যাবলেট অথবা যা যোনিতে স্থাপন করার জোলাপ দ্বারা ক্ষতের চিকিৎসা করা যায় । যে কোনো ধরনের ব্যথা বা যন্ত্রণা উপশমের জন্য যৌনাঙ্গের চারপাশে ক্ষত বিরোধী মলম লাগাতে পারেন। যদি ছত্রাক বিরোধী ট্যাবলেট গ্রহণ করেন, তাহলে যোনির চারপাশে সাধারণ প্রলেপ (ময়েশ্চারাইজার) লাগাতে পারেন, কারণ ছত্রাক বিরোধী ক্রীম ব্যবহারে কখনো কখনো জ্বালাবোধ হতে পারে।

বেশিরভাগ নারীদের ক্ষেত্রে ক্ষতের চিকিৎসা গ্রহণ ফলপ্রসূ হয়ে থাকে এবং কয়েকদিনের মধ্যেই ক্ষত নিরাময় হয়ে যায়।  প্রতি ২০ জনের মধ্যে ১ জন নারীর ক্ষেত্রে ক্ষতের পুনরাবৃত্তি (বছরে ৪ বার বা ততোধিক) ঘটে । ১০০ জনের মধ্যে ১ জন মহিলা প্রতিনিয়ত ক্ষতে আক্রান্ত হতে পারেন। এসব ক্ষেত্রে, লম্বা সময় ধরে চিকিৎসা গ্রহণ প্রয়োজন হতে পারে, যা ৬ মাস পর্যন্ত চলতে পারে।