Tue, Nov 14 2017 - 9:23:01 AM +06

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার বিচার হয় না কেন ?


News Image

হলি টাইমস রিপোর্ট :

বাংলাদেশে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেয়া একটি পোস্টের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে হিন্দুদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ এবং সংঘর্ষের ঘটনায় ১০৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বাংলাদেশে গত পাঁচ বছরে এই একই ধরনের আরো অন্তত তিনটি ঘটনা ঘটেছে।

সেসব ঘটনার কোনটিরই এখনো পর্যন্ত বিচার হয়নি। কোনটির তদন্ত এখনো শেষ হয়নি, কোনটি আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় আছে।

গঙ্গাচড়া গ্রামের একজন হিন্দু যুবক ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননামূলক পোস্ট দিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলে শুক্রবার কয়েকশো মানুষ ঐ গ্রামে হামলা চালায়। তারা বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় পুলিশের পাল্টা গুলিতে অন্তত এক জন নিহত হয়।

এই ঘটনায় আজ পর্যন্ত ১০৮জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রংপুরের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান।

"ঘটনার সময় যা ঘটেছে, পুরো মিছিল, লুটপাট সবই ক্যামেরা-বন্দী করেছি আমরা। এখন সেসব যাচাই করে সবাইকে চিহ্নিত করছি। সেই সঙ্গে হামলার মোটিভ নিয়েও তদন্ত চলছে," বলেন তিনি।

গঙ্গাচড়া গ্রামের টিটু রায় নামে এক ব্যক্তির কথিত ফেসবুক পোস্ট নিয়ে সেখানে গত ক'দিন ধরে উত্তেজনা চলছিল।

পুলিশ অফিসার মি. রহমান জানিয়েছেন, কথিত ফেসবুক পোষ্টটি আসল কি না, সে তদন্ত শেষ হবার আগেই হিন্দু গ্রামে হামলা চালানো হয়েছে।

বাংলাদেশে গত পাঁচ বছরে এই একই ধরনের আরো অন্তত তিনটি হামলার ঘটনা ঘটেছে, যেখানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর পোষ্ট দেবার অভিযোগ তুলে হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন দেয়া হয়েছে।

২০১২ সালে কক্সবাজারে রামুর এক বৌদ্ধ পল্লীতে ফেসবুকে ধর্ম অবমাননাকর পোষ্ট দেবার অভিযোগ তুলে হামলা চালিয়ে বাড়িঘরে ও মন্দিরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল।

নাসিরনগরে ক্ষতিগ্রস্ত একটি মন্দিরছবির কপিরাইটMASUK HRIDOY
Image captionনাসিরনগরে ক্ষতিগ্রস্ত একটি মন্দির

ওই ঘটনায় মোট ১৯টি মামলা দায়ের হয়েছিল, পরবর্তীতে এরমধ্যে একটি মামলা প্রত্যাহার করা হয়।

ঐ ঘটনায় যে ব্যক্তি ফেসবুকে পোষ্ট দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ তিনি গত পাঁচ বছর ধরেই নিখোঁজ। রামুর ঘটনাটি এখন আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় আছে।

এই মামলার আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, "প্রাথমিকভাবে ১৫ হাজার লোকের নাম থাকলেও, পরে ১৯টি মামলায় ৩৮৪ জনের নামে অভিযোগ-পত্র দেয়া হয়। এরপর কোন মামলায় তদন্ত সঠিক হয়নি বলে অধিকতর তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কোন মামলাই শেষ পর্যন্ত তদন্তের পরে পরিণতির দিকে যায় নি।"

"ঘটনার পর পাঁচ বছর তো হয়ে গেল, কিন্তু কার্যত কারো বিচারের ব্যবস্থা বা ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা সেসব কিছুই এখনো হয়নি," বলে তিনি।

২০১৩ সালে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বনগ্রাম বাজারে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে অর্ধশত হিন্দু বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

কিন্তু পরে পুলিশের তদন্তে কথিত ধর্মীয় অবমাননার কোনো পোস্ট পাওয়া যায় নি।

এরপর ২০১৬ সালের ২৯শে অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে অনেকটা একই কায়দায় একটি হিন্দু পল্লীতে হামলা চালানো হয় একই ধরণের অভিযোগ তুলে। এক বছর পরেও সে ঘটনার তদন্ত শেষ হয়নি।

ঐ ঘটনায় স্থানীয় থানায় সাতটি এবং আইসিটি আইনে একটি মোট আটটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেইন বলছেন, এখনও তদন্ত চলছে।

"আমরা তদন্তের প্রায় শেষ পর্যায়ে আছি, আশা করি ডিসেম্বরে অভিযোগ-পত্র দিতে পারব।"

আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, এসব ক্ষেত্রে পরে তদন্ত করে দেখা গেছে ধর্মীয় অবমাননাকর পোষ্টগুলোর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না।

কিন্তু এধরনের ঘটনার বিচারে যে দীর্ঘসূত্রিতা তার কারণ কি? জানতে চাইলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, "এ ধরনের মামলার তদন্ত প্রক্রিয়ায় যতো দেরি হবে, বিচার প্রক্রিয়া ততোটাই পিছিয়ে যাবে।"

"এর প্রমাণ আমরা দেখেছি, পুলিশের একটা পরিসংখ্যান বলছে, আশি শতাংশ মামলায় আসামীরা খালাস পেয়ে গেছে। আমরা তো নিশ্চিতভাবে বলতে পারব না যে, তারা সবাই নিরপরাধ ছিল," বলেন তিনি।

নাসিরনগরে পুড়িয়ে দেয়া একটি পূজামন্ডপছবির কপিরাইটAZIZUL SHONCHAY
Image captionনাসিরনগরে পুড়িয়ে দেয়া একটি পূজামন্ডপ

মি হক বলেন, "কিন্তু আদালতে এটা তো প্রমাণ করতে হবে যে সে দোষী, আমরা সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছি, আমাদের সরকারি কৌঁসুলিদের পক্ষ থেকে সেটা প্রমাণে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।"

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া দণ্ডবিধি এবং ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের বিভিন্ন ধারায় শাস্তিযোগ্য একটি অপরাধ।

কিন্তু বিভিন্ন সময় ধর্ম অবমাননাকর বিভিন্ন ঘটনার যেসব অভিযোগ শোনা যায়, সেসবের বিচারের কথাও তেমন শোনা যায় না।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মি. হক বলেছেন, বেশিরভাগ সময় ধর্মীয় ইস্যুটিকে ব্যবহার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এসব ঘটনায় দ্রুত ন্যায়বিচারের উদাহরণ সৃষ্টি করা না গেলে মানুষ ক্রমেই বিচার ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রের প্রতি আস্থা হারাবে। সে ক্ষেত্রে সরকারকে এ বিষয়ে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। খবর বিবিসির