Contact For add

Mon, Jan 9 2017 - 12:00:00 AM +06 প্রচ্ছদ >> পরিবেশ

Forgotten booksভুলে ভরা পড়ার বই

ভুলে ভরা পড়ার বই

 

হলি টাইমস রিপোর্ট :

ইংরেজি বছরের প্রথম দিনে বাংলাদেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া বিনামূল্যের বই নিয়ে এখন চলছে তুমুল বিতর্ক৷ বইয়ে আছে লিঙ্গবৈষম্য প্রকাশক আলামত৷ আরো আছে কবিতার বিকৃতি আর বানান ভুলের ছাড়াছড়ি৷

এমনকি মুদ্রণের মান ও অলংকরণ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে৷ প্রথম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবইয়ে অক্ষরজ্ঞান সূচিতে পাঠ ১২-তে ‘ও' অক্ষর চেনানোর উপকরণ হিসেবে ‘ওড়না'কে ব্যবহার করা হয়েছে৷ ‘শুনি ও বলি' পাঠে ‘ও' অক্ষর চেনাতে ওড়না পরা এক কন্যাশিশুর ছবি দিয়ে লেখা হয়েছে- ‘ওড়না চাই'৷   খবর ডয়চে ভেলি।

প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ের লেখা ও ছবিতে ‘ছাগল গাছে উঠে আম খাচ্ছে' বোঝাতে চেয়েছেন লেখক৷ বাংলা পাঠ্যবইটির ১১ পাতায় অ-তে অজ (ছাগল) বোঝাতে গিয়ে ছাগলের ছবি জুড়ে দেয়া হয়েছে৷ ছাগলের গাছে উঠে আম খাওয়ার মতো অসম্ভব বিষয় শিখতে হবে শিশুদের!

তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ে কুসুমকুমারী দাশের ‘আদর্শ ছেলে' কবিতা বিকৃত করা হয়েছে৷ ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে' না লিখে লেখা হয়েছে ‘আমাদের দেশে সেই ছেলে কবে হবে?' এছাড়া ‘মানুষ হইতে হবে- এই তার পণ' না লিখে ‘মানুষ হতেই হবে- এই তার পণ' লেখা হয়েছে৷ ‘হাতে প্রাণে খাট সবে শক্তি কর দান' এই লাইনে ‘খাট' শব্দটির বানান বদলে দিয়ে লেখা হয়েছে ‘খাটো'৷

এছাড়া চতুর্থ শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়' বইয়ের ৭৮ পাতায় ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ' লেখায় মুক্তিযুদ্ধ শব্দটি কখনো ‘মুক্তিযুদ্ধ' আবার কখনো ‘মুকতিযুদ্ধ'৷ ‘বঙ্গবন্ধু' বানানটি ভেঙে ঙ-গ আলাদা আলাদা করে লেখা৷

ও’তে ওড়না - যা নিয়ে বিতর্ক হয়েছে।

অষ্টম শ্রেণির ‘আনন্দপাঠ' বইটির সাতটি গল্পের সবগুলোই বিদেশি লেখকদের গল্প, উপন্যাস অবলম্বনে লেখা বা ভাষাগত রূপান্তর করা হয়েছে৷ গল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে-আরব্য উপন্যাস অবলম্বনে ‘কিশোর কাজী', মার্ক টোয়েনের ‘রাজকুমার ও ভিখারির ছেলে', ড্যানিয়েল ডিফোর ‘রবিনসন ক্রুসো', মহাকবি আবুল কাশেম ফেরদৌসীর ‘সোহরাব রোস্তম', উইলিয়াম শেকসপিয়ারের ‘মার্চেন্ট অব ভেনিস', ওয়াশিংটন আরভিং রচিত গল্প অবলম্বনে ‘রিপভ্যান উইংকল' এবং লেভ তলস্তয়ের গল্প অবলম্বনে ‘সাড়ে তিন হাত জমি'৷ এটা নিয়ে সমালোচনা করেছেন অনেকেই৷ আবার হুমায়ূন আজাদসহ অনেক বাঙালি লেখকের লেখা বাদ দেয়া হয়েছে৷ 

উইমেন চ্যাপ্টারের সম্পাদক সুপ্রীতি ধর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ওড়না চাই- বিষয়টিকে আমরা জেন্ডার ইস্যুতে দেখছি৷ এখানে প্রথম শ্রেণি থেকেই পোশাকের ব্যাপারে ছেলে-মেয়ে বিভাজন করা হচ্ছে৷ একটি পাঁচ বছর বয়সের বাচ্চা ছেলেকে বলা হচ্ছে, ‘তোমাকে ওড়না পরতে হবে না৷' আর মেয়েটিকে বলা হচ্ছে, ‘ওড়না পরতে হবে৷' অল্প বয়সে শিশুদের মধ্যে এই জেন্ডার বিভাজনের শিক্ষা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ পুরুষতান্ত্রিক সমাজ এই যে বিভাজন করতে চায় তার প্রতিফলন পাঠ্যপুস্তকেও পাওয়া গেল৷''

তাঁর কাছে প্রশ্ন ছিল, ‘আরো তো অনেক ভুল আছে, সেগুলো বাদ দিয়ে শুধু ওড়না প্রসঙ্গেই আপনারা সোচ্চার কেন?'' জবাবে তিনি বলেন, ‘‘হ্যাঁ আছে৷ বানান ভুল আছে,  হুমায়ূন আজাদের কবিতা বাদ দেয়া হয়েছে৷ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার না লিখে লেখা হয়েছে বাংলাদেশ সরকার৷ এসব বিষয় নিয়েও আমাদের লেখকরা লেখা প্রস্তুত করছেন৷ কেউ হয়তো প্রশ্ন করবেন, এত বিষয় থাকতে ওড়না নিয়ে কেন এত সিরিয়াস আমরা৷ আমাদের কথা হলো, ওইসব বিষয় নিয়ে লেখার জন্য মেইন স্ট্রিম মিডিয়া আছে৷ আর আমরা প্রথম হেফাজতের ১৪ দফার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আত্মপ্রকাশ করি৷ এটা বুঝতে হবে৷''

তিনি বলেন, ‘‘আমরা পাঠ্যপুস্তকের সবগুলো ভুল আর বিকৃতির বিরুদ্ধেই মাঠে নামছি৷''

এইসব পাঠ্যপুস্তকের লেখকদের মধ্যে আছেন শিক্ষাবিদ হায়াৎ মামুদ৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কবিতা বা লেখার যদি কোনো বিকৃতি হয়ে থাকে, তা অন্যায়৷ এ ধরণের বিকৃতি গ্রহণযোগ্য নয়৷ তবে সাধারণ ভুল ভ্রান্তি বা ছাপার ভুল মানবিক ভুল হিসেবে দেখা যায়৷'' তিনি মনে করেন পাঠ্যপুস্তকে কেনো ধরণের ভুল গ্রহণযোগ্য নয়৷

অন্যদিকে ‘ওড়না  দাও' বিষয়টিকে তিনি নেতিবাচক হিসেবে দেখেন না৷ তিনি বলেন, ‘‘ওড়না তো প্রয়োজনীয়৷ আর পরিবারে তো সবাই মিলে থাকে৷ তাই প্রথম শ্রেণিতে ‘ও' চেনাতে গিয়ে ওড়না দাও  লিখলে দোষের কী হয়েছে?''

তবে তাঁর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পাঠ্য পুস্তকের আরেকজন লেখক অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরিন ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘এটা তো জেন্ডার বৈষম্যমূলক শব্দ৷ আমার কাছে খটকা লাগছে এই ধরণের শব্দ ব্যবহারের কথা জেনে৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘২০১৩ সালে আমরা একটি পর্ষদ গঠন করে এই বইগুলো লেখার কাজ শুরু করি৷ তারপর কী হয়েছে আমার জানা নেই৷ তবে ভুল ভ্রান্তি ঠিক করা দরকার৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘অনেক সময় তাড়াহুড়ো করে এগুলো করা হয়৷ কিন্তু পাঠ্যপুস্তক তাড়াহুড়ো করে করার বিষয় নয়৷''

এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক নায়ায়ণ চন্দ্রের সঙ্গে শুক্রবার ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি৷ তবে আগে তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘প্রতি বছর এ ধরনের কিছু ভুল হয়৷ পরে বিশেষজ্ঞ কমিটি এগুলো সংশোধন করে৷ এবারও ভুল জমা হওয়ার পর কমিটি এগুলো সংশোধন করে পরবর্তী বছর ছাপানোর সময় ঠিক করে দেবে৷''



Comments