Contact For add

Fri, Feb 17 2017 - 12:00:00 AM +06 প্রচ্ছদ >> শিল্প সাহিত্য

Lalitaললিতা

ললিতা


শ্যামল কান্তি নাগ :


এ্যাই ললিতা,   ললিতা। জোরে জোরে ডাকতে থাকে বিজয়। হাত দিয়ে বিছানায় এপাশে হাতরিয়ে হাতরিয়ে ললিতার অস্তিত্ব খোঁজে।  ডাকতে ডাকতেই নেশার ঘোরে আবার ডুবে যায়।
ওর দিকে একবার ফিরে তাকিয়ে ফের রুমের মধ্যে  টানানো রশিতে ক্লিপ দিয়ে ব্রা’টা ঝুলিয়ে দিতে থাকে ললিতা। হাতের নাড়া পেয়ে দুলতে থাকে পাশে ঝোলানো প্যান্টি। এরই অদূরে অগোছালো অবস্থায় রাখা  একটা কামিজ হাতে ভাজ করে পাশে বাঁশের র‌্যাকের  মাঝের তাকে রাখে। এখানে ওর আরো কিছু জামা কাপড় রয়েছে। ওপর তাকে তেল সাবান পাউডার আর পারফিউমের নতুন পুরাতন কিছু বোতল । তারই মাঝে একটা মাঝারি আকারের আয়না, লিপিস্টিকের লাল দাগ লেগে আছে তাতে।  একটা বড় চিড়–নি, কয়েকটা চুলের ক্লিপ,ব্যান্ড রাখা ওখানে। অনেক পুরানো দিনের হলি টাইমস পত্রিকার একটি কপি গড়াগড়ি খাচ্ছে র‌্যাকের ভিতর।
রুমের দক্ষিণ কোনায় কয়েকটি রান্নার হাড়ি পাতিল, প্লেট, একটা জগ, কাচের গ্লাস এবং একটা বসার টুল।  সেমিডাবল একটা কাঠের চৌকি উত্তর দক্ষিণ করে পাতানো। সাদা আর ঘিয়ে জমিনে  গোলাপ ফুলের প্রিন্টের একটি চাদর বিছানো তাতে। খাঁচ খাঁচ ভাজে এলোমেলো করা।  বাংলা মদ আর বিয়ারের  ভোঁতকা গন্ধ আসে বিছানা থেকে। আছে সিগারেটের পোড়া গন্ধও।  কোল বালিশটা চৌকি থেকে অর্ধেক ঝোলানো। বিজয়ের উরুর নিচে চাঁপা পড়ে আছে একটি   তেল চিটচিটে মাথার বালিশ। ওর মাথার কাছে একটা কাঁথা  গোঁজা। আড়াআড়ি উবু হয়ে শুয়ে আছে  সে।
 চৌকির পাশে মেঝেতে পড়ে আছে দুটি পোড়া সিগারেটের ফিল্টার।  ছাইয়ের মধ্যে গড়াগড়ি খাচ্ছে একটা   ছেঁড়া প্যান্থার কনডমের প্যাকেট। পাশে ছড়ানো বিজয়ের প্যান্ট, জাঙ্গিয়া। ললিতার কালো স্যালোয়ারটাও তার সঙ্গে জড়ানো।
চাটাইয়ের বেড়ায় এ বছরের  ডিসেম্বর মাসের একটা ক্যালেন্ডার ঝুলছে। “জীবন সঙ্গী” ছবির একটি ঢাউস পোস্টার তারই সাথে।  পাশে গুজে রাখা আছে ইনভেলাপ সাইজের ললিতার লেমিনেটিং করা বিভিন্ন পোজের তিনটি ছবি। ফ্রেম নেই, চাটাইয়ের শলা দিয়ে আটকানো। লিপিস্টিক আর নেইল পলিসের দাগ  যেখানে সেখানে। দু’টো লাল রংয়ের টিপ আটকে আছে তার ওপর।
এরুমে জানালা বলতে এক একটু খানি বাশের চটা দিয়ে জাল বোনার মতো ফাঁক করা। আলো বাতাস খুব একটা এপথে আসেনা। এরই ফাঁকে আটকে আছে লোলিতার মাথার একগুচ্ছো চুল। একটু বাতাসের দেখা পেলেই চুলগুলো  দোল খেয়ে নিচ্ছে মনের সুখে । বাইরের পাখির ডাক, গাড়ির হর্নের শব্দ, মানুষের কোলাহল এ পথ ধরে প্রবেশ করেনা।
তবে এই মুহুর্তে হালকা সাউন্ডে লোলিতার ঘর মোহিত করে তুলছিল মান্না আর সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের বিখ্যাত গান “ আমি যে জলসা ঘরে, বেলোয়ারি ঝাড় / নিশি ফুরালে কেহ ,চায়না আমায়, জানিগো আর”। না লোলিতার ঘর থেকে নয় এই ভোরে পাশের অট্টালিকার কোন একটি ফ্লাট থেকেই ভেসে আসছিল গানের সুর। এমন গান কে এই  ভোর বেলায় শোনে, শোনায়। হয়তো ললিতার মতো এই মতিঝিলের ...।
খুব মনোযোগ দিয়ে এই গানটাই শুনছিল লোলিতা। তার জীবনে এই গানটি  যে চির সত্য। করুন বাস্তবতায় প্রতি রাতে আসে, আবার ফিরে ফিরে যায়।
কাল রাত দুপুরে হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে ঘুম ভাঙে লোলিতার। মতিঝিলের এই বস্তিতে, এ্যাতো রাতে কে আসতে পারে। কিছু বুঝে উঠতে পারেনা।  কোন খদ্দের এলেতো আগেই ফোন করে। এভাবে না জানিয়ে কেউ আসেনা। অনেকটা দুরু দুরু মনে দরজায় গিয়ে জিজ্ঞেস করে -- কে  ?
কিছুটা চ্যাঁচানো কন্ঠে বাইরে থেকে উত্তর  দেয়। এই বিজয়কে কোন স্যালে না চেনে। এ্যা, খোল দরজা। শালি, তুই মুজকো ভুল্  গেয়্যা। ধমক দিয়ে বলে - খোল।
 ললিতার ওই কন্ঠ চির চেনা। ও যত মদ খেয়ে আসুক খিস্তি খেউর দিক , ললিতার তাতে কোন রাগ হয়না। শুধু কন্ঠটা শোনার জন্যই অধীর আগ্রহে মাসের পর মাস, কখনো বছর পেরিয়েও অপেক্ষা করে। মতিঝিলের এই বস্তিটাও ছাড়া হয়না শুধু ওর জন্য। এই জায়গাটা ছাড়লে হয়তো ওঁকে আর খুঁজে পাওয়া যাবেনা। যে কারণে অনেক কষ্ট সহ্য করেই ওর জন্য এখানে পড়ে থাকা।
কন্ঠ শুনে, চমকে ওঠে ললিতা। বিজয় ! বিষ্ময়ের আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়। ঘরের দরজা খোলার আগে খুলে যায় মনের সব দরজাগুলো। তাড়াতাড়ি দরজা খুলে , কাছে টেনে নেয়। পিছে অন্য রুমের কেউ জেগে না যায়। ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটে।
বিজয়কে কাছে পেয়ে লোলিতার রাতটাই রঙিন হয়ে ওঠে। মুহুর্তেই নুপুরের রিনিক ঝিনিক ছন্দে উম্মাতাল হয়ে ওঠে মনের জলসা ঘর। সুর, লয়, তালের সঙ্গমে  সবকিছু উজার হয়ে যায়। ওর কাছে শুধু দেহ নয়, বিনিময় হয় মনও  ।  
 ভোর  বেলা বিছানা ছেড়েছে ললিতা। এখনো নিতম্বের ওপর শুধু একটা কাথা ফেলে উপুর হয়ে পড়ে আছে বিজয়। মদের নেশা তার এখনো কাটেনি।  লোলিতারও পড়া হয়নি স্যালোয়ারটা। দরজাটা ছিটকানি দিয়ে ভেজানো থাকায় অর্ধনগ্নতা আরো একটু  বেশি করে উপভোগ করার সুযোগ হয়েছে।
 কিছুক্ষণ পড়েই ব্রা’টা রশিতে  রেখে সন্ধ্যার ওই গানটিতে মন দিয়েছিলো সে। কি মনে করে সামনে ছোট্ট টেবিলের ওপর রাখা ১৭ ইঞ্চি কালার ক্যাঙ্কা টেলিভিশন ছাড়তেই গর্জে উঠলেন বঙ্গবন্ধু। বৈশাখী টিভির পর্দা জুড়ে হাজার হাজার জনতা শুনছে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ।

তিনি যখন বলছিলেন “২৩ বছরের করুন ইতিহাস, বাংলায় অত্যাচারের, বাংলার মানুষের রক্তের ইতিহাস। ২৩ বছরের করুণ ইতিহাস’ মুমূর্ষ নর-নারীর আত্মত্যাগের ইতিহাস। বাংলার ইতিহাস, রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস......। আবেগ সামলাতে পারেনি ললিতা। মনের অজান্তেই সাউন্ড বাড়িয়ে দেয়।
আচমকা চিৎকার করে লাফিয়ে ওঠে বিজয়। এ্যাই থাম, ধরা গলায় খেঁকিয়ে ওঠে - স্টপ, স্টপ। ধরফর  করে দাঁড়াতে গিয়ে  পড়ে যায়। আবার উঠে নূয়ে পড়ে মেঝেতে।
 কোনমতে পায়ে ভর দিয়ে  চেঁচিয়ে বলে, অ-য় ভাচন থামা, ছা-লা আমার ঘুমটাই ভেঙে দিলি। কী হবে ওই ভাচণ ছুনে, অ্যা। কী হবে। আরে তি-বি বন্ধ কর। কথা জড়িয়ে যায় বিজয়ের।
-কি বলছ তুমি। কিছুটা ধমকের সুরে থামাতে চেষ্টা করে ললিতা।
-কী বলচি মানে। কী বলচি, তুই, ছ্যাপোর্ট করিচ। আঙুল দিয়ে টিভির স্ক্রীণ দেখিয়ে বলে , ওই বাচনইতো আইমারে বেজন্মা বিজয় বানিয়েচে। তুই জানোস না। আমি ভাচন ছুনতে চাইনা, ছুনতে চাইনা।
পা থর থর করে উত্তেজনায় কেঁপে ওঠে। আবারও উঠতে গিয়ে পড়ে যায়। টিভি দ্রুত বন্ধ করে বিজয়কে ধরে ফেলে ললিতা। মেঝেতেই বসে বুকের মধ্যে  জড়িয়ে রাখে।
-    ওতো বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা।
ক্রুদ্ধ হাসি খেলে যায় বিজয়ের ঠোটে।   তো-। পি--তা।  অনেকটা শান্তভাবে বলে - আরে ছালা, বেজন্মা বিজয়ের কোন পিতা  নেই, মাতা নেই, কেউ নেই, কিছু নেই। আ- আ-মি  একটা বে-জন্মা। বুঝেছস..।
লোলিতার বুকে আঙুল ঠুকে বলে - এ্যাই তুই আর আমি....। তারপর মুখে আর কিছু বলতে পারেনা। কন্ঠ রোধ হয়ে যায় বিজয়ের। শুধু হাতের কবজি ,আঙুল ঘুরিয়ে বোঝাতে চায়, বেজন্মা, এই সমাজে  ললিতা আর বিজয়ের মূল্য  নেই , সম্মান নেই। তাদের পরিচয় শুধু বেজন্মা, বেশ্যা হিসেবে।
বিজয়ের এই না বলার কথার অভিবক্তি  বোঝে লোলিতা। তাইতো ওর কথা থামিয়ে দেয়না, প্রতিবাদ করেনা।
ভুলে গিয়েছিল, আজ ১৬ ডিসেম্বর, বিজয় দিবস। এই দিনটি এলেই বিজয়ের বুকটা এক ব্যগ্র ব্যাথায় হাহাকার করে ওঠে। কাউকে কিছু বলেনা, বোঝাতে চায়না। মদ, গাঁজা, তারি খেয়ে বুদ্ হয়ে থাকে। অনেক দূরে না থাকলে ছুটে আসে তার কাছে।
সাভারের বনবিথী ঘেরা ছোট্ট গ্রাম শিমুলতলা। মুক্তি যুদ্ধ শুরু হওয়ার দুই মাস পরে হঠাৎ একদিন রাজাকার - হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী হামলা করে ওই গ্রামে। তুলে নিয়ে আসে অনেক নারীকে। ওর মধ্যে লোলিতার মাও ছিল। কয়েক মাস পাক হানাদার ক্যাম্পে আটকে রেখে যাচ্ছেতাইভাবে ধর্ষণ করে পাক সেনারা। মাকে পাক বাহিনী অস্ত্রের মুখে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার পরে মুক্তিযুদ্ধে চলে যায় ওর বাবা।
স্বাধীনতার কিছুদিন আগে মাকে ফিরে পেলেও মা তখন অসুস্থ্য, মানসিক ভারসম্যহীন ছিল। ওর জন্মের তিন বছর পর মারা যায় । যখন সাত বছর বয়স তখন হঠাৎ মারা যায় বাবা। গ্রামের মানুষ আত্মীয় স্বজন সবাই ওকে অলুক্ষণে বলতো, ঘৃণা করতো। কি সব আজেবাজে কথা বলতো। এসবের অর্থ না বুঝলেও খারাপ লাগতো ললিতার।
বাবা বলতো,  তোর মায়ের সম্ভ্রম, ইজ্জত, আত্মত্যাগের বিনিময়ে আর আমরা যুদ্ধ করে দেশটা স্বাধীন করেছি। বঙ্গবন্ধুর কথা বলতো, যুদ্ধের গল্প শোনাতো।
বাবা মরে যাওার পর কেউ তাকে আশ্রয় দেয়নি, দু’বেলা দু’মুঠো খেতে দেয়নি। অনাদর অবহেলা আর একমুঠো ভাতের জন্য এই জীবন যৌবন বিক্রি করার পথে চলে এসেছে ললিতা।
আজ সেই মায়ের বিমর্ষ মুখ, বাবার কথা মনে পড়তেই মনটা  কেমন যেন ছটফট করে। ব্যাকুল হয়ে পড়ে। বাবার জন্য মা’র জন্য কেঁদে ওঠে মনটা। দু’চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে ক’ফোটা তপ্ত অশ্রু।
আর এই যে ওর বুকে মুখ লুকিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে যে বিজয়। অনেকবার তার কাছে ওর মা বাবার কথা জানতে চেয়েছে, শুনতে চেয়েছে।
অনেক শান্ত আর ধীর গলায় ও বলেছে - বেজন্মার আর পরিচয় কী বলো। ওর এই ছোট্ট উত্তরটার মধ্যে ছিল হাজার রাজ্যের অভিমান, ক্ষোভ, যন্ত্রণা।
শুধু একদিন বলেছিল, যুদ্ধের সময় ওর যুবতী মাকে পাকিস্তানীরা ধরে নিয়ে যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার  কয়েকমাস পর জন্ম হয় ওর। তারপর একদিন লজ্জায় , দু:খে মা রাতের আধারে কোথায় যেন চলে যায়। মরে গেছে না বেঁচে আছে কেউ বলতে পারেনা।
শেরপুরে ওদের বাড়ি। দাদুর নাম দেবেন্দ্র চৌধুরী। দাদুই ওর নাম দিয়েছিল বিজয়। ওখানে কেউ আর নেই ।
মা’র কথা মনে করতেই চোখ দু’টো ছল ছল করে উঠেছিল বিজয়ের। বলেছিল, মায়ের কোন ছবি সে দ্যাখেনি। মুখটা কেমন ছিল তাও মনে করতে পারেনা।
বড় হওয়ার পর থেকে সে মাকে খুঁজে চলেছে। গ্রাম শহর যেখানে যায় চোখ দুটো মায়ের মতো কাউকে খোঁজে। কিন্তু কি করে পাবে ? কে তার মা, কোথায় আছে ?
ও বলেছিল, কেউ তাকে খোকা বলে ডাকেনি। মায়ের মতো কাউকে দেখলেই ওর মনটা ব্যাকুল হয়ে ওঠে। এই বুঝি ওকে খোঁকা বলে কোলে তুলে নেবে, এই বুঝি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করবে।
বলতে বলতে গুমরে কেঁদে ওঠে বিজয়। বলে - আমি শুধু একবার যদি মাকে দেখতে পেতাম, একবার যদি মা বলে ডাকতে পারতাম, আমার এই জীবনের সব সাধ পূর্ণ হয়ে যেত। আর কোন দু:খ থাকতো না, যন্ত্রণা থাকতো না।  অথচ আমি কতো অভাগা....। বাষ্পরুদ্ধ হয়ে যায় কন্ঠ, আর কিছু বলতে পারেনা।
যতবারই ললিতা ওকে নিয়ে ঘর বাঁধার কথা বলেছে ততবারই বলেছে, একটু সময় দাও। মা’কে খুঁজে দেখি।
ললিতা বুঝতে পারতো, ওর মনের মধ্যে বড় একটি ক্ষত তৈরি হয়েছে মা’কে না পাওয়ায়। মনের এই কষ্ট, ব্যথা, যন্ত্রণায় প্রলেপ দেওয়ার ভাষা তার নেই। তাই বাধা দেয়নি। বিজয় আসাম ত্রিপুরা থেকে শুরু করে বাংলাদেশের  যেখানে  গেছে সেখানেই মা’কে খুঁজেছে। ওর বিশ্বাস বেঁচে থাকলে মাকে খুঁজে পাবেই। এজন্য ললিতাও বাধা দেয়নি। যৌবনের শেষ প্রান্তে এসেও শুধু অপেক্ষা করে গেছে।
ওর এবং বিজয়ের কষ্টগুলো একাকার হয়ে ব্যাথার ঝড় তুলে দেয় ললিতার অন্তরে।   পোড়া চোখ দুটো  বেয়ে দরদর করে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু । বুকে চেপে ধরে বিজয়কে। এই বুকেই লুকিয়ে রাখতে চায় , একটু শান্তির পরশ দিতে চায় ললিতা ।
এমনই মুহুর্তে  চৌকির শিয়র থেকে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে বিজয়ের জামা। পকেট থেকে ছিটকে যায়  বঙ্গবন্ধুর একটা লকেট ব্যাজ। পকেট থেকে অর্ধেকটা বেরিয়ে পড়ে ছোট্ট একটা পতাকা, একটা অর্ধফোটা গোলাপের কলি।
বিষ্ময় ভরা দৃষ্টিতে সে দিকে  তাকিয়ে থাকে ললিতা। বাম হাত দিয়ে বিজয়কে আরো একটু শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ডান হাত দিয়ে তুলে নেয় পতাকাটা।  চোখের পলক ফিরিয়ে আনে বিজয়ের দিকে। বড় শান্তিতে, নির্ভাবনায় ঘুমিয়ে পড়েছে ললিতার বুকে। ফের দৃষ্টি চলে যায় ওই গোলাপ কলিটার দিকে। অর্ধফোটা গোলাপের নানা অর্থ এসে ভিড় করে ওর মাথায়। তারপর পতাকাটা  নেড়ে  চেড়ে দ্যাখে। সবুজ বুকে লাল ফোটা ফোটা রক্তে রাঙানো।
সব হারানোর বিনিময়ে পাওয়া এই লাল সূর্য , সবুজ জমিন। কিছুক্ষণ অপলকে দেখে কি যেন ভাবে ললিতা। সেই ভাবনায় জেগে ওঠে একটা নতুন স্বপ্ন, ফুল  ফোটানোর সংকল্প।
####

 



Comments