Contact For add

Tue, May 23 2017 - 11:56:43 AM UTC প্রচ্ছদ >> নারী ও শিশু

Women at the filling stationফিলিং স্টেশনে নারী

ফিলিং স্টেশনে নারী
হলি টাইমস রিপোর্ট :

সম্প্রতি পাবনা থেকে চাটমোহরের দিকে যেতে চোখে পড়ল এ রকম দৃশ্য। আটঘরিয়া উপজেলার উত্তর চক গ্রামে মহাসড়কের পাশে শালুক ফিলিং স্টেশনে নীল অ্যাপ্রোন পরা নারী কর্মীরা সারি দিয়ে থাকা নানা রকম যানবাহনে জ্বালানি তেল ভরে দিচ্ছেন। কৌতূহলের বশেই এগিয়ে গিয়ে কথা বলতে চাইলাম তাঁদের একজনের সঙ্গে। হাতের কাজ শেষ হতেই বললেন, ‘কী জানতে চান বলেন।’ সূত্র প্রথমআলো

তাঁর নাম মোছা. আরিফা খাতুন। এই ফিলিং স্টেশনের অল্পখানিক দূরেই বাড়ি। এখানে কাজ করছেন ছয় বছর থেকে। মাঝেমধ্যেই মোটরসাইকেল আর ট্রাক এসে থামছিল পাম্পের সামনে। সেগুলোর ট্যাংকে তেল ভরে দেওয়ার ফাঁকে ফাঁকে কথা বলছিলেন তিনি। একটিই মেয়ে আরিফা খাতুনের। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। স্বামী নেই। বড়ই দুঃসময় চলছিল। তখনই এই ফিলিং স্টেশনে কাজ নেন। আগে থেকেই এখানে আরও কয়েকজন নারী কর্মী ছিলেন। তাঁদের দেখেই কাজের জন্য এখানে এসেছিলেন। ভোর ৬টা থেকে বেলা ২টা এবং বেলা ২টা থেকে রাত ১০টা দুই পালায় কাজ চলে। এক সপ্তাহ পর পর পালা বদল হয়। বেতন পান ৫ হাজার টাকা। মা-মেয়ের সংসার চলে যাচ্ছে।

 

এই ফিলিং স্টেশনটি চালু হয়েছে ২০০৮ সালে। তখন থেকে মূলত নারীরাই এটি চালান। ব্যবস্থাপক, হিসাবরক্ষক, পাম্প অপারেটরসহ সবাই নারী। মোট ছয়জন। তবে অন্য একটি বেসরকারি নিরাপত্তা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ করা পুরুষ নিরাপত্তাকর্মী আছেন চারজন। আর এই প্রতিষ্ঠানেরই একজন পুরুষ ব্যবস্থাপক আছেন। তিনি পালা করে কাউন্টারে বসেন। তবে এদিন কাউন্টারে ছিলেন রুখসানা খাতুন। তিনি প্রথম থেকেই এখানে আছেন। তাঁর কাছে জানা গেল, ফিলিং স্টেশনের নারী কর্মীদের কাজের সূচনা হয়েছে পাবনা শহরের লস্করপুরের ইয়াকুব ফিলিং স্টেশনে।

ইয়াকুব ফিলিং স্টেশনে গিয়ে দেখা গেল আটঘরিয়া গ্রামের ফিলিং স্টেশনটির মতোই দৃশ্য। তবে এখানে পাম্পের সামনে যানবাহনের, বিশেষ করে মোটরসাইকেলের সারি বেশ লম্বা। তেল ভরে দিচ্ছেন রানু খাতুন আর ফাতেমা খাতুন। পাশে দাঁড়িয়ে রসিদ দিচ্ছেন এবং তদারক করছেন জুলেখা আক্তার। এই ফিলিং স্টেশন চালু হয়েছে ২০০২ সালের ২৪ জুন। জুলেখা সেদিন থেকেই এখানে কাজে যোগ দিয়েছেন। তখন বেতন ছিল আড়াই হাজার টাকা, এখন পাচ্ছেন মাসিক ১২ হাজার টাকা। মাসের শেষ দিনে বেতন। বছরে তিনটি বোনাস, সঙ্গে দুপুরে খাবার ফ্রি। এই পাম্পটি স্কয়ার গ্রুপের।

স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের মানবসম্পদ বিভাগের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আবদুল হান্নান জানালেন, স্বামীদের মাদকাসক্তির কারণে, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের পরিবারের নারীরা খুবই অশান্তির মধ্যে থাকতেন। নারীদের কর্মমুখী করে তাঁদের আর্থিক সামর্থ্য জোগাতে কাজে নিয়োগের বিষয়টি ভেবেছেন স্কয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী। ১৯৯৫ সাল থেকে স্থানীয় নারীদের শিক্ষা ও যোগ্যতার মান অনুসারে স্কয়ার গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়া শুরু হয়। এখন তাঁদের মোট কর্মীর মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি। টয়লেট্রিজে ৩ হাজার ৭০০ কর্মীর ৬০ শতাংশ, ফুড অ্যান্ড বেভারেজে ২ হাজার ৯০০ কর্মীর ৫৫ শতাংশ এবং ফার্মাতে ৭ হাজার কর্মীর ৫৪ শতাংশ নারী কর্মী। এরই ধারাবাহিকতায় এই ফিলিং স্টেশন যখন চালু করা হয়, তখন এখানেও নারী কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

প্রথমে কোনো নারী ফিলিং স্টেশনে কাজ করতে রাজি হননি। অগত্যা স্কয়ার গ্রুপ থেকেই সালমা খাতুন, হ্যাপা বেগম, সাবেরা বেগম ও জুলেখা আক্তারকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল সাত দিনের প্রশিক্ষণ দিয়ে। তাঁরা দিব্যি চালিয়ে নিচ্ছেন। পুরোনোদের মধ্যে দুজন এখানে আছেন। নতুন যোগ দিয়েছেন আরও চারজন। তবে এটি অনেক ব্যস্ত ফিলিং স্টেশন বলে লোকবলও বেশি। বাদবাকিরা পুরুষ। তবে তাঁো মূলত নিরাপত্তা ও অন্যান্য দায়িত্বে।

গ্রাহকেরাও বেশ সন্তুষ্ট নারী কর্মীদের সেবায়। মোটরসাইকেলে তেল নিচ্ছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে স্বপ্ননগর এলাকার সাইদুল ইসলাম। তিনি বললেন, এখানে তেলের মাপ সঠিক দেয় আর নারীদের ব্যবহারও খুব ভালো। তিনি এখান থেকেই নিয়মিত তেল নেন।

কাজটি কেমন লাগছে জুলেখা আক্তারের? ‘খুব শান্তিতে আছি।’ বেশ সোজাসাপটা কথা বলেন তিনি। এইচএসসি পাস করে এখানে ঢুকেছেন। স্বামী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। আগে নাকি তিনি নির্যাতন করতেন। এখন আর সাহস পান না। স্বামীর বিরুদ্ধে এমন করে বলছেন, ভয় পাচ্ছেন না? জিজ্ঞাসা করতেই জুলেখা বললেন, ‘সত্যি কতা কতি ভয় কী?’ তাঁর বক্তব্য হলো, সবারই উচিত সত্যি কথাটা বলে ফেলা। তাহলে নিজেদেরও ভয় ভাঙবে, আর যাঁরা নির্যাতন করেন তাঁরাও সতর্ক হয়ে যাবেন। দিন বদলে গেছে। জুলেখার একটিই মেয়ে। স্থানীয় কেজি স্কুলে ইংরেজি মাধ্যমে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। মায়ের ইচ্ছা সে অধ্যাপক হোক। কিন্তু মেয়ের শখ বড় হয়ে পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ার। অপরাধীদের খুঁজে বের করে তুলে দেবে আইনের হাতে।

 



Comments