Contact For add

Tue, May 23 2017 - 9:51:49 PM +06 প্রচ্ছদ >> বিশেষ খবর

Dikdarshan Publications Printed the book by Imetatedনকল করে বই ছাপায় দিকদর্শন প্রকাশনী

নকল করে বই ছাপায় দিকদর্শন প্রকাশনী




সৈয়দ আলম :
নকল বা টুকলিফাই করে বই প্রকাশের অভিযোগ উঠেছে দিকদর্শন নামের একটি প্রকাশনা সংস্থার বিরুদ্ধে। এমনকি শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই এমন সব লেখক দিয়ে বই লিখিয়ে বাজারে ছেড়েছে ওই সংস্থাটি।
সরকার শিক্ষার্থীদের মূল ধারায় পড়াশুনা করাতে গাইড বই, নোট বই বাতিলে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহন করার পরও বাজার সয়লাব এই সব বিকল্প বইয়ে।
নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, দিকদর্শন প্রকাশনীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রতন চন্দ্র পাল সম্পাদিত ডিগ্রি প্রথম বর্ষের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বইটির অনেকাংশের লেখা হুবহু এম আবদুল্লাহ এন্ড সন্স এর  প্রকাশিত মনিমুক্তা প্লাস গার্হস্থ্য অর্থনীতি থেকে নকল বা কপি করা।  যেটা কপিরাইট আইনে বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
ওই সূত্রগুলো বলেছেন, রতন চন্দ্র পাল সম্পাদিত গার্হস্থ্য অর্থনীতির বইটিতে তিন জন লেখিকার নাম ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে দু’জনই ওই বই সম্পর্কে কিছু জানেন না। আর মূল যে লেখিকা বইটি লিখিছেন সেই নুসরাত শালতানার এই বই লেখার শিক্ষাগত যোগ্যতাই ন্ইে।


সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দিকদর্শন গার্হস্থ্য অর্থনীতি বইতে রচয়িতা হিসেবে যাদের নাম রয়েছে তাদের একজন হলেন মুহাইমুন্নেছা সালমা । যার শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএসসি (অনার্স) (গৃহ ব্যবস্থাপনা ও গৃহায়ন) গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  লেখা হয়েছে। এই নাম এবং  শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে এটি ভূয়া কোনো ব্যক্তির নাম হতে পারে। সাগরিকা মন্ডল নামে অন্য যে লেখিকার নাম ব্যবহার করা হয়েছে তিনি ইডেন মহিলা কলেজ থেকে গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিষয়ে মার্স্টাস করেছেন। তবে  এই বই তিনি রচনা করেননি বলে জানিয়েছেন।
এম আবদুল্লাহ এন্ড সন্স গাইড থেকে অনেকাংশ লেখা নকল করে বা টুকলিফাই করে যে লেখিকা পুরো দিকদর্শনের গার্হস্থ্য অর্থনীতি গাইডটি রচনা করেছেন সেই নুসরাত সালতানা লেখাপড়া করেছেন বিএসসি ফার্মেসি বিভাগে। এই গাইডে ফার্মেসির কোনো বিষয় বস্তুই অন্তুর্ভুক্ত নয়। ফার্মেসি বিভাগের একজন শিক্ষার্থী কিভাবে গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের বই লেখেন তা নিয়ে লেখকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। দিকদর্শন প্রকাশনী এভাবে ভূয়া লেখকদের দিয়ে কীভাবে উচ্চ শিক্ষার বই রচনা করান সেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।


নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলেছেন, এম আবদুল্লাহ এন্ড সন্স গার্হস্থ্য অর্থনীতি বইটির ১৩৯ পৃষ্ঠায় পিতা মাতার প্রতি শিশুর মনোভাব শীর্ষক পরিচ্ছদটির উপসংহার পর্যন্ত হুবহু দিকদর্শন বইটির ১৬২ পৃষ্ঠায় প্রকাশ করা হয়েছে। এম আবদুল্লাহ বইয়ের ২০১ পৃষ্ঠার আরাআরি পদ্ধতির প্রথম সাড়ে চার লাইন এবং দীর্ঘায়িত পদ্ধতির প্রথম এক লাইন পর সাড়ে সাত লাইন হুবহু দিক দর্শন বইয়ের ৪৪৮ পৃষ্ঠায় ছাপানো হয়েছে। কোনো  কোনো প্যারায় , পরিচ্ছদ বা অনুচ্ছেদে একটি দুটি শব্দ যেমন মা-বাবা’র জায়াগায় পিতা-মাতা এরকম সাদৃশ্য শব্দ ব্যবহার করে বাকি সব লাইন হুবহু ছাপানো হয়েছে।
নুসরাত সুলতানা এ প্রতিবেদক’কে বলেছেন, এই বইয়ের কিছু অংশ মুহাইমুন্নেছা সালমা লিখেছেন। সাগরিকা মন্ডল এই গাইডের কোনো কিছুই লেখেননি। বাকি সব টুকুই তিনি লিখেছেন। তার ফার্মেসি শিক্ষার অনেক কিছুই এই বইয়ের বিষয়বস্তু বলে তিনি জানান। তবে গাইডটি পড়ে ফার্মেসির কোনো বিষয়বস্তুই খুঁজে পাওয়া যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মুহাইমুন্নেছা এই বই সম্পর্কে কিছুই জানে না। পুরো বইটিই নকল বা টুকলিফাই করে লিখেছেন নুসরাত শালতানা।


দিকদর্শন প্রকাশনীর সম্পাদনা বিভাগের চেয়ারম্যান নারায়ন চন্দ্র পাল বলেছেন, অন্য বিষয়ে লেখাপড়া করলেও গার্হস্থ্য অর্থনীতি বই লেখায়  কোনো বাধা নেই। এম আবদুল্লাহ এন্ড সন্স শুধু নয় বাজারে প্রকাশিত অন্য যে কোনো গাইড বই থেকেই নকল করা যাবে। কারণ বইগুলোর বিষয়বস্তু এক। কপিরাইটেও এমন গাইড লিখলে কোনো অন্যায় হয় না। অধিকাংশ প্রকাশনী এভাবেই বই রচনা করে বাজারে বিক্রি করে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তিনি এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান ছিলেন । তখনও  এরকম অনেক গাইড বই বাজারে এসেছে, ব্যবসা করেছে। এতে কোনো দোষ নেই।


নারায়ন পাল যে অভিমত ব্যক্ত করেছেন তা পুরোপুরি কপিরাইট আইনের চরম লঙ্ঘন। কপিরাইট আইনের  ৮২ ও ৮৩ ধারায় বলা হয়েছে, মালিকের অনুমতি ছাড়া কপিরাইটযুক্ত কর্মের কোনো কিছু চুরি, নকল, মুদ্রণ, পুনঃমুদ্রণ, অনুবাদ, প্রকাশ, পুনঃপ্রকাশ, পুনরুৎপাদন, অভিযোজন, প্রচার, সম্প্রচার, প্রদর্শন,  রেকর্ডিং ও ভাড়া বা অধিকার লঙ্ঘন করলে আইনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে সর্বোচ্চ চার বছরের কারাদন্ড এবং জরিমানা হিসেবে ৩ লাখ টাকা অর্থদন্ডের বিধান রয়েছে।

‌এম আবদুল্লাহ এন্ড সন্স এর এই বই  থেকেই হুবহু কপি করে ছাপিয়েছে দিকদর্শন প্রকাশণী ।
এ বিষয়ে জাতীয় পাঠ্যক্রম এবং পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য ( টেক্সবুক) প্রফেসর ড. মিয়া এনামুল হক সিদ্দিকী বলেছেন, নিয়ম অনুযায়ী কোন বই থেকে বা কোন লেখকের  লেখা হুবহু ৫ লাইন প্রকাশ করলে তাকে ওই বই বা লেখকের লেখার সূত্র উল্লেখ করতে হবে। ৫ লাইনের পর একটি শব্দ কিংবা একটি লাইনও হুবহু লিখলে বা যোগ করলে অনুমতি নিতে হবে।এটা মানা না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া অনুমতি না নিয়ে লেখা ছাপালে বা লেখকের নাম প্রকাশ করলে ওই লেখক প্রতারণার মামলা করতে পারে এবং একই সঙ্গে লেখক সম্মানি পাওয়ার মামলাও করতে পারবেন।

বিশেষ দ্রষ্টব্য : সম্মানিত পাঠক এর পরের সংখ্যায় প্রকাশিত হবে , নারায়ান চন্দ্র পাল এনসিটিবি’তে  চেয়ারম্যান থাকাকালে কী কী কাজ করেছেন তার ওপর ধারাবাহিক প্রতিবেদন। প্রতিবেদনটি পড়ার জন্য হলি টাইমসের সঙ্গে থাকুন।
 



Comments

Place for Advertizement
Add