Contact For add

Thu, Sep 14 2017 - 11:08:54 AM +06 প্রচ্ছদ >> আইন

The government will take legal action against the cancellation of the sixteenth Amendmentষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবে সরকার

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবে সরকার

হলি টাইমস রিপোর্ট :

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে সংসদে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সংসদ সদস্য মইন উদ্দিন খান বাদল সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ ধারায় ওই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা আলোচনা শেষে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
প্রস্তাবটির ওপর আলোচনার সময় সংসদ সদস্যরা প্রধান বিচারপতির কঠোর সমালোচনা করেন। এসময় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তদন্তের দাবিও তোলা হয়। আইনমন্ত্রী তার বক্তব্যে এ বিষয়টি নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘দিস জাজমেন্ট উইল নট গো উইদাউট লিগ্যাল চ্যালেঞ্জ। আমি সংসদে জানাতে চাই— এই আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রস্তাবের ওপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদসহ ১৮ জন সংসদ সদস্য বক্তব্য রাখেন।
প্রস্তাবে এমপি বাদল বলেন, ‘‘সংসদের অভিমত এই যে, ‘সংবিধান ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ে সংবিধান ষোড়শ সংশোধনী Ultra Vires ঘোষণাকে বাতিল করার জন্য ও প্রধান বিচারপতি কর্তৃক জাতীয় সংসদ সম্পর্কে এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যে অসাংবিধানিক, আপত্তিকর ও অপ্রসাঙ্গিক পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে, তা বাতিল করতে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।’
বাদল তার নোটিশে বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনী সংক্রান্ত রায়ে প্রধান বিচারপতি তার পর্যবেক্ষণে অনেক অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে অপ্রয়োজনীয়, অবাঞ্ছিত বক্তব্যের পাশাপাশি সংসদ সদস্যদের অপরিপক্ক আখ্যায়িত করেছেন। এ বিষয়টি নিয়ে এমনভাবে গুঞ্জন চলছে যা জাতির জন্য বাঞ্ছনীয় নয়।’
এর আগে, রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দশম সংসদের সপ্তদশ অধিবেশন শুরুর পর স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী সংসদে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল বিষয়ে আপিল বিভাগের রায় নিয়ে অনির্ধারিত আলোচনা শুরু করলে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া তাকে থামিয়ে দিয়ে সংসদে নোটিশ নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ ধারায় এই বিষয়ে আলোচনার কথাও বলেন।
সংসদে প্রস্তাব তুলে ধরার পর মইন উদ্দীন খান বাদল বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি ও অন্য বিচারপতিদের পরিষ্কার করে বলতে হবে, সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ কোথায় মূল কাঠামোকে ধাক্কা দিয়েছে। মূল প্রশ্ন, কোনও বিচারপতি অন্যায়–অবিচার করলে তার অপসারণ পদ্ধতি কী হবে। প্রধান বিচারপতি এমনভাবে বিষয়টি এনেছেন, মনে হচ্ছে সংসদের সঙ্গে বিচার ব্যবস্থার দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।’
প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে জাসদের এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘জাতির পিতার হাতে প্রণীত এই বিধান আপনি কোন অধিকারে বাতিল করলেন— জাতির কাছে তার জবাব দিতে হবে। এই সংসদের অনেকেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে অনেক কথা বলেছেন, আপনি তা বেমালুম ভুলে গেছেন। আপনি মনে করছেন বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য অস্ত্রধারী উত্তরপাড়াই উত্তম।’
আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক প্রস্তাবটির আলোচনায় বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, সম্মান ও বিচারপতিদের অপসারণের বিষয়টি দৃঢ় করা হয়েছে। আর যা-ই হোক, ৭২-এর সংবিধানের বিধান অসাংবিধানিক হতে পারে না।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর পর ওই সংশোধনীর আলোকে বিচারক অপসারণের আইনের খসড়া করে তা স্টেকহোল্ডার হিসেবে প্রধান বিচারপতির কাছে আমি পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও মতামত না দিয়ে ম্যাটার অব সাব-জুডিস বলে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তখনই বোঝা গিয়েছিল তাদের উদ্দেশ্য কী।’
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল হচ্ছে তাইরে নাইরে খেলা। আছি আর নাই। উনারা যা খুশি তাই করবেন, কিছুই বলা যাবে না। আমি তিন-চারটি প্রমাণ দিতে পারি যেখানে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে না নিয়ে শ্রদ্ধেয় বিচারপতিদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। যেমন— বিচারপতি আব্দুর রহমান চৌধুরী, বিচারপতি এস এম হোসেন, বিচারপতি কে এম সোবহান, বিচারপতি দেবেশ ভট্টচার্য্য। আমি আরও অনেক নাম বলতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘সংবিধান প্রণেতা আমরা, আইনের দ্বারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত। সংবিধান সংশোধন আমরা করতে পারি। সংবিধান আমাদের ক্ষমতা দিয়েছে। সংবিধান হচ্ছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন। সরকারের উদ্দেশ্য ছিল ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখা, আমাদের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখা। আমাদের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা আছে। এজন্য সাবধানে কথা বলি। সুযোগ থাকলেও কম কথা বলি। আমাদের অনেক কথা বলার সুযোগ আছে। কিন্তু ওইখানে যারা আছেন, তাদের কথা বলার কম সুযোগ আছে।’
প্রধান বিচারপতি নারী সংসদ সদস্যদের নিয়ে আপত্তিকর কথা বলেছেন উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এই কথাগুলো বলে তিনি (প্রধান বিচারপতি) বিচার বিভাগের ইজ্জতই শুধু নষ্ট করেননি, সারাদেশেরই ইজ্জত নষ্ট করেছেন। সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা এই সংসদেরই রয়েছে। প্রধান বিচারপতির এমন বক্তব্যে নিশ্চয়ই আমাদের ক্ষুব্ধ হওয়ার যথেষ্ট কারণ হয়েছে। তার বক্তব্য আবেগতাড়িত ও বিদ্বেষপ্রসূত। এর আইনি প্রতিকার চাই।’

 

সংসদে আলোচনায় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘সংসদ সদস্যরা জনগণের প্রতিনিধি। তাদের ছোট করার চেষ্টা করলে গোটা জাতিকেই ছোট করা হয়।’ এসময় তিনি ষোড়শ সংশোধনীর শুনানিতে অংশ নেওয়া অ্যামিকাস কিউরিদের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেন।

প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বেশি কথা বলা ভালো নয়। তিনি (প্রধান বিচারপতি) বলেছেন, তাকে ‘মিস কোট’ করা হয়েছে। ‘মিস কোট’ কাকে করা হয়? যিনি বেশি কথা বলেন, তাকেই ‘মিস কোট’ করা হয়। অন্য কোনও বিচারপতি নিয়ে তো কোনও কথা আমরা শুনি না। বিনয়ের সঙ্গে বলি, কথা কম বলা ভালো।’

সংসদকে অপরিপক্ক বলা হয়েছে— এমন মন্তব্য করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের এখানে অনেকে রয়েছেন যারা গণপরিষদের সদস্য ছিলেন। আমরা যখন সংবিধান প্রণয়ন করি তখন এই বিচারপতিদের মধ্যে অনেকেই স্কুলের ছাত্র ছিলেন। আর আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা হচ্ছি অপরিপক্ক। কিন্তু আমাদের দ্বারা নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারকরা হলেন পরিপক্ক!’

‘পার্লামেন্ট ডিসফাংসনাল’— রায়ের এই পর্যবেক্ষণের প্রসঙ্গ টেনে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি বলেছেন, নির্বাহী বিভাগ শেষ, আইন বিভাগ শেষ, বিচার বিভাগ কোনোমতে মাথা উঁচু করে হাবুডুবু খাচ্ছে। টিমটিম করে চলছে। এর মাধ্যমে তিনি বলতে চাচ্ছেন, বাংলাদেশ ইজ আ ডিজফাংশনাল কান্ট্রি। আর এটা এমন সময় বলছেন, যখন প্রধানমন্ত্রী দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। জনগণ দ্বারা নির্বাচিত এই সরকার। অনেক পোড় খাওয়া নেতারা এখানে আছে। প্রধানমন্ত্রী যখন সুন্দরভাবে দেশ চালাচ্ছেন, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, সেই সময় এই রায়টি দিয়ে বিএনপিকে উৎফুল্ল করার চেষ্টা করেছেন প্রধান বিচারপতি।’

বিচারপতিদের দুর্নীতির তদন্ত প্রসঙ্গে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘সবার বিরুদ্ধে দুর্নীতি তদন্ত করা যাবে। সংসদ সদস্যদের দুর্নীতি তদন্ত করা যাবে। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি তদন্ত করা যাবে। অবসরের পরে রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধেও দুর্নীতির তদন্ত করা যাবে। কিন্তু বিচারপতিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি তদন্ত করা যাবে না! কী বিষ্ময়কর!’ তিনি ষোড়শ সংশোধনী রায়টি রিভিউতে পাঠাতে আইনমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এই রায়ের বিষয়ে বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাই।’

সংরক্ষিত আসনের ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি যেসব কাজকর্ম করছেন, তাতে বিচার বিভাগ ধ্বংসের জন্য ভবিষ্যত প্রজন্ম তাকেই দায়ী করবে।’ রায়কে আল্টা ভাইরেস আখ্যায়িত করে বাপ্পী এই রায় ও পর্যবেক্ষণ বাতিলের জন্য আইনমন্ত্রীকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানান।

রায়ে বঙ্গবন্ধুকে ইচ্ছাকৃতভাবে খাটো করা হয়েছে উল্লেখ করে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘দেশের উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে আইন না থাকায় এ ধরনের জটিলতা ও রায় এসেছে। এই রায় ঠিক আছে, তা প্রমাণ করতে একটি পত্রিকা বিভিন্ন ব্যক্তির ইন্টারভিউ নিয়েছে। কেন জানি না, বিএনপি খুশি হয়ে দুই মণ মিষ্টিও বিতরণ করেছে।’

চুন্নু বলেন, ‘‘ইমপিচমেন্ট’ বলে কোনও শব্দ ষোড়শ সংশোধনীতে নেই, রয়েছে ‘রিমুভাল’। আমরা যা করেছিলাম তাতে বিচারপতিরা আরও অনেক বেশি সুরক্ষিত ছিলেন। এখন যে পদ্ধতি আছে, তাতে কোনও বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ হলে সেখান রাষ্ট্রপতির অনুমতি ছাড়া প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা নেই তা তদন্ত করা।’ ‘সংসদ ইমপিচ করে দেবে, সংসদ রিমুভ করে দেবে’— এমন আতঙ্ক থেকে বিচারপতিরা না বুঝে, ইমোশনাল হয়ে এই রায়টি দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন চুন্নু। তিনি আরও বলেন, ‘এই রায়ের কোনও ভিত্তি নেই। এই রায় দেওয়ার ক্ষমতা আপিল বিভাগের নেই। এই রায় সংসদের ওপর বাইন্ডিংসও নয়।’

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য তাহজীব উল আলম সিদ্দিকী প্রধান বিচারপতিকে ‘আইনের স্বঘোষিত দেবতা’ আখ্যায়িত করে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি অন্তত সাত দিনের জন্য এই ঘোষণা দিন যে, বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে জনগণ ও সাংবাদিকরা কিছু বললে সেটা আদালত অবমাননা হবে না। তাহলেই প্রধান বিচারপতির দম্ভ বোঝা যাবে।’ তিনি রায়কে অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্ক্ষিত ও প্রধান বিচারপতির এখতিয়ার বহির্ভূত বলে মন্তব্য করেন।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে সিনহা বাবুর (প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা) না জানারই কথা। তিনি একজন আত্মস্বীকৃত পিস কমিটির সদস্য। মহান আদালতে তিনি এটা স্বীকার করেছেন। এমন একজন আত্মস্বীকৃত পিস কমিটির সদস্য যদি বঙ্গবন্ধুর সম্পর্কে কিছু না জানেন, তাতে দুঃখ পাই না। তবে ব্যথিত হই তখন, যখন দেখি এমন একজন ব্যক্তি প্রধান বিচারপতির চেয়ারে বসেছেন। অসাংবিধানিক শক্তিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনতে প্রধান বিচারপতির এই অপপ্রয়াস। আমাদের এটা গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে হবে।’

প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে এই মন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু একক নেতা নন, তাহলে আর কোন ঠাকুর ও দেবতা আছে— তা জানালে জাতি অনেক উপকৃত হতো। পাকিস্তানে কী হয়েছে না হয়েছে তাকে কেন্দ্র করে উসকানিমূলক কথা বলেন, কত বড় সাহস তার!’

প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মন্ত্রী বলেন, ‘বিচারক হলেই কী তিনি আইনের ঊর্ধ্বে? একমাত্র রাষ্ট্রপতি ছাড়া কেউই আমরা আইনের ঊর্ধ্বে নই। প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থাকলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করা যাবে না— এমন আইন এ দেশে নেই। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রমাণিত, তার বিরুদ্ধে দুই কোটি করে চার কোটি টাকার লেনদেনের কথা উঠেছে। এই টাকা যে নিয়েছেন, তা তো তিনি অস্বীকার করেননি। তিনি এর প্রতিবাদ করেননি। এটা তো দালিলিক প্রমাণ। একটা নয়, দুটো নয়— শত শত দুর্নীতির কথা উঠেছে। তিনি বাড়ি কিনেছেন ভাইয়ের নামে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৩ কাঠা কিনে তা ৫ কাঠায় পরিণত করেছেন। বারবার যিনি শপথ ভঙ্গ করেন, যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির দালিলিক প্রমাণ আছে, তিনি যদি প্রধান বিচারপতির আসনে বসে থাকেন তাহলে জাতি ন্যায়বিচার নিয়ে আতঙ্কিত ও শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তার কারণে বিচার বিভাগের সম্মনিত সদস্যরা মুখ দেখাতে পারছেন না।’ দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ও শপথ লঙ্ঘনকারী কেউ যেন প্রধান বিচারপতির পদে না থাকতে পারেন, সেটি প্রস্তাবে যুক্ত করার আহ্বান জানান তিনি।
রায়ের পর্যবেক্ষণ বাতিলের দাবি জানিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত তার এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে রায় দিয়েছেন। এই রায় বারবার দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা হবে। ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে।’ তিনি বলেন, ‘রায়ে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন সম্পর্কে অস্বীকারই শুধু নয়, বিদ্রুপ করারও চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমান সরকার ও নেতৃত্ব সম্পর্কে অযাচিত মন্তব্য করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতির পাকিস্তানপ্রীতির পেছনে আর কিছু আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা দরকার।’

ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, ‘সংবিধান সংশোধন করার কোনও অধিকার আদালতের নেই। এই রায় অসাংবিধানিক। সুপ্রিম কোর্টও সংবিধানের ঊর্ধ্বে নয়। সংসদ সার্বভৌম, আদালত নয়। পাকিস্তানের রায়ের ভয় দেখিয়ে কাজটা কি ঠিক করেছেন?’

প্রধান বিচারপতির প্রতি আওয়ামী লীগের সিনিয়র সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘রায়ে আপনার যুক্তি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অসাংবিধানিক। আপনার ষড়যন্ত্রের এই রায় আমরা জনগণের পক্ষ থেকে প্রত্যাখ্যান করছি। অপকর্মের জন্য আপনাকে নিন্দা জানাই। বিচারকের আসনে থেকে আপনি প্রধানমন্ত্রীকে হুমকি দেন। আপনার পাকিস্তানপ্রীতি এখানে চলবে না। আপনি রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র করেছেন। এজন্য আপনার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা যেতে পারে। আইনমন্ত্রীকে এটা দেখতে বলব। এই রায় আপনাকে বাতিল করতেই হবে। না করলে আপনার বিরুদ্ধে কী করা হবে, তার জন্য আপনি অপেক্ষা করেন। সংসদের শক্তি কী, তা বুঝতে পারবেন।’

শেখ সেলিম তার বক্তব্যে প্রধান বিচারপতিকে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘‘আপনি জনগণের কাছে ক্ষমা চান। বলেন, ‘আমার ভুল হয়ে গেছে, শুধরে দিচ্ছি।’ রায় কারেকশন করেন। তাহলে হয়তো আপনি বাঁচতে পারেন।’’

পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলম মাহমুদ বলেন, ‘এই রায় সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। সংসদ ও নির্বাহী বিভাগকে অকার্যকর করে দেশটাকে বিশ্বের কাছে অকার্যকর দেখাতেই এই রায় দেওয়া হয়েছে।’

কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে ২০০৩ সালে বিএনপির সরকার আমলে উত্তরা ১৫ সেক্টরে ৩ কাঠার প্লট বিশেষ বিবেচনায় বরাদ্ধ দেওয়া হয়। ২০০৪ সালে তিনি সেই প্লটকে ১০ নম্বরে সেক্টরে নিয়ে আসেন। দুর্নীতিবাজ মওদুদ (বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ) ও এস কে সিনহা একই সুরে কথা বলবেন– এটাই স্বাভাবিক।’

শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি বলেছেন সংসদ অপরিপক্ক। পরিপক্ক আর অপরিপক্কের সংজ্ঞা কী, প্রধান বিচারপতিকে তার ব্যাখা দিতে হবে। বিচারপতি ও বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য স্বপ্রণোদিত হয়ে এ রায় ও রায়ের পর্যবেক্ষণ বদলানো ‍উচিত।’



Comments

Place for Advertizement
Add