Contact For add

Thu, Sep 14 2017 - 11:34:52 AM +06 প্রচ্ছদ >> আন্তর্জাতিক

What is the power of Aung San Suu kyi to solve the Rohingya problem?রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে অং সান সু’চির ক্ষমতা কতটুকু

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে অং সান সু’চির ক্ষমতা কতটুকু

হলি টাইমস রিপোর্ট :

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সেনাবাহিনীর অভিযানের প্রেক্ষাপটে অং সান সু চির ভূমিকা নিয়ে বেশ সমালোচনা চলছে। কারণ তিনি তাঁর সরকারের পক্ষে সাফাই দিয়ে বলছেন, রাখাইনে 'রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী'দের বিরুদ্ধে এই সেনা অভিযান। আসলে সু চির ক্ষমতা কতটুকু। সেই প্রশ্নও চলে এসেছে সামনে। বিবিসির দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সংবাদদাতা জোনাথন হেডের বিশেষ প্রতিবেদনে সেই বিষয়টি উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি হুবহু তুলে ধরা হলো।

গতকাল বুধবার মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জানিয়েছেন যে দেশটির ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সু চি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেবেন না।

চলতি মাসেই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে।

আর এমন প্রেক্ষাপটে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগছে অং সান সু চি আসলে তার দেশে কতটা ক্ষমতা রাখে?

অং সান সু চি'র সরকারি পদবী হচ্ছে 'রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা'।

তিনি এই পদ সৃষ্টি করেছেন, সংবিধানের একটি বিশেষ ধারাকে কেন্দ্র করে; যে ধারাটা মূলত তৈরি করা হয়েছিল তাকেই লক্ষ্য করে।

কারণ মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী কারো স্বামী বিদেশি হলে বা বিদেশি নাগরিকত্ব আছে এমন কোনো ব্যক্তি দেশটির প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না।

মিয়ানমারের অত্যন্ত জনপ্রিয় রাজনীতিক অং সান সু চি এবং ২০১৫ সালে দেশটির জাতীয় নির্বাচনে ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি বাএনএলডির বিপুল জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি।

মন্ত্রিসভা এবং তার দলের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্বেও আছেন মিস সু চি।

দেশটির প্রেসিডেন্ট তিন কিয়াউ মিস সু চি'র কাছে জবাব দিতে হয়।

দেশটির সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল পূর্ববর্তী সামরিক সরকারের আমলে।

১৯৬২ সাল থেকে শাসন ক্ষমতায় ছিল এই সামরিক সরকার । ২০০৮ সালে অবিশ্বাস্য এক গণভোটের মাধ্যমে এই সংবিধানের অনুমোদন দেয়া হয়।

সে সময় সংবিধানের এই অনুমোদনে মিস সু চি কিংবা তার দল এনএলডির কোনো সায় ছিল না।

সেনাবাহিনী ঘোষিত 'ডিসিপ্লিন-ফ্লোরিশিং ডেমোক্রেসি'র পরিকল্পনা ‌নিশ্চিত করাই ছিল এর মূল উদ্দেশ্য।

এছাড়াও সংবিধানের এই সংশোধনীর আওতায় সংসদের এক চতুর্থাংশ আসন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়।

মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে অং সান সু চিছবির কপিরাইটGETTY IMAGES
Image captionতিন কিয়াউ মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট হলেও অং সান সু চি'র কাছে তাকে জবাব দিতে হয়।

স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা এবং সীমান্তসহ গুরুত্বপূর্ণ তিনটি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রেখেছে সেনাবাহিনী। এর অর্থ হচ্ছে দেশটির পুলিশের ওপরও নিয়ন্ত্রণ রয়েছে সেনাবাহিনীর।

শক্তিশালী জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা পরিষদের ১১টি আসনের মধ্যে ছয়টি আসনেও রয়েছে সেনাবাহিনী মনোনীত ব্যক্তিরা। গণতান্ত্রিক সরকার বাতিলের ক্ষমতা রয়েছে এই পরিষদের।

অনেক শীর্ষস্থানীয় পদের দখল করে আছেন সাবেক সামরিক কর্মকর্তারা। সেনাবাহিনীর ব্যবসায়িক স্বার্থও রয়েছে।

স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা খাতের যৌথ বাজেটের চেয়েও ১৪ শতাংশ বেশি ব্যয় হয় প্রতিরক্ষা খাতে।

২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেনাবাহিনী এবং সু চি'র অবস্থান ছিল তীব্র পরস্পরবিরোধী। মিস সু চি ১৫ বছর গৃহবন্দি অবস্থায় ছিলেন।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রধানছবির কপিরাইটGETTY IMAGES
Image captionসেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মিন অং হেইং এটা পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, রোহিঙ্গাদের জন্য তার সহানুভূতি নেই।

নির্বাচনের পর তারা একসঙ্গে কাজ করার উপায় খুঁজে বের করেন। জনসমর্থন ছিল তার।

মিয়ানমারের জেনারেলদের হাতে ছিল আসল ক্ষমতা। সংবিধান সংশোধনের মতো সু চি'র অনেক চাওয়ার সঙ্গে সেনাবাহিনীর মতৈক্য রয়েছে।

গত ৭০ বছর ধরে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সীমান্তে বিভিন্ন জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে শান্তি আলোচনা নিয়েও সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিভেদ আছে।

তবে তারা অর্থনৈতিক সংস্কার, উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে একমত।

মিস সু চির জনপ্রিয় 'মন্ত্র' হচ্ছে 'আইনের শাসন'। একই সঙ্গে দেশটিতে দ্রুত পরিবর্তনের কারণে সামাজিক উত্তেজনাও বাড়ছে।মিস সু চি

 

 

 

 

Image caption২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেনাবাহিনী এবং সু চি'র অবস্থান ছিল তীব্র পরস্পরবিরোধী। মিস সু চি ১৫ বছর গৃহবন্দি অবস্থায় ছিলেন।

 

 

 

 


 

বৈরিতা বাড়ছে

রোহিঙ্গা ইস্যুতে অত্যন্ত সাবধানে পথ চলতে হবে অং সান সু চিকে। রোহিঙ্গাদের জন্য মানুষের মনে একটু হলেও সহানুভূতি রয়েছে।

রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক নয় বলে সরকারের যে দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, অধিকাংশ বার্মিজও তাই মনে করে।

এমনকি কয়েক প্রজন্ম ধরে এই রোহিঙ্গাদের অনেকেই দেশটিতে বসবাস করে এলেও অনেকেই তাদেরকে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী মনে করে।

গত বছরের অক্টোবর মাসে এবং চলতি বছরে আগস্টে পুলিশের পোস্টে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির বিদ্রোহীদের হামলার পর এই বৈরিতা বা দ্বন্দ্ব ব্যাপক বেড়েছে।

রাখাইন রাজ্যের স্থানীয় বৌদ্ধরা আরো প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।

কয়েক দশক ধরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে তাদের সংঘাত চলে আসছে।রোহিঙ্গাদেরকে বাঙালি হিসেবে দাবি করে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষেরা।

রাখাইনের অনেক বৌদ্ধদের বিশ্বাস, তারা শেষ পর্যন্ত সংখ্যালঘু হয়ে পড়বেন। এমনকি তাদের পরিচয় বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে বলেও শঙ্কা রয়েছে তাদের।

রাখাইন ন্যাশনালিস্ট পার্টি বা এএনপি স্থানীয় বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ। বৌদ্ধদের জন্য পুলিশেরও শক্তিশালী সহানুভূতি রয়েছে। পুলিশের প্রায় অর্ধৈক কর্মকর্তাই রাখাইনের বৌদ্ধ।

কারা এই রোহিঙ্গা মুসলিম?

তবে বাংলাদেশ সীমান্তের সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের রাখাইন রাজ্যের আসল ক্ষমতায় রয়েছে সেনাবাহিনী। এই রাজ্যে প্রবেশ অত্যন্ত সীমিত এবং নিয়ন্ত্রিত।

দেশটির শক্তিশালী সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মিন অং হেইং এটা পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, রোহিঙ্গাদের জন্য তার সহানুভূতি নেই।

স্বাধীন গণমাধ্যম

বর্তামানে যে অভিযান রাখাইনে চলছে সেটাকে 'ক্লিয়ারেন্স অপারেশন' উল্লেখ করে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান বলেছেন, ১৯৪২ সালের আগের একটি সমস্যা শেষ করার জন্যই এ অভিযান চালানো হচ্ছে।

তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী ওই সময়ে রোহিঙ্গা ও রাখাইন বৌদ্ধদের মধ্যে তিক্ত সাম্প্রদায়িক লড়াই দেখে জাপানি ও ব্রিটিশ বাহিনীর মধ্যে সম্মুখযুদ্ধের অবসান ঘটেছিল।

সেনাবাহিনী বলছে, রাখাইনে দেশের বাইরের অর্থায়নে চলা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে বর্তমানে লড়াই চলছে।

সেনাবাহিনীর এই মতের সঙ্গে রাখাইনের অধিকাংশ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির মিল রয়েছে।

এতে সংঘাতপূর্ণ এলাকায় ব্যবহৃত 'ফোর কাটস' কৌশলের প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে ধারণা করা হয়।

এই কৌশলের মাধ্যমে সেনাবাহিনী বিদ্রোহীদের সমর্থনকারী কোনো সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে। তবে এই ক্ষেত্রে গণমাধ্যমেরও একটি ভূমিকা রয়েছে।

গত পাঁচ বছরে মিয়ানমারে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন ঘটেছে। এর মধ্যে নতুন স্বাধীন গণমাধ্যম, মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট ব্যবহার নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এমন একটি দেশে এই উন্নয়ন ঘটেছে যা সম্ভবত এক দশক আগেও কল্পনাতীত ছিল।

রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো কে জ্বালিয়ে দিচ্ছে?

কর্তৃপক্ষ নীতিবান?

তবে দেশটির গণমাধ্যম বাংলাদেশের ভেতরে কী ঘটছে অথবা রোহিঙ্গাদের ভোগান্তি কী রকম হচ্ছে তা সীমিত করে দেখিয়েছে।

মিয়ানমারের অধিকাংশ গণমাধ্যমই রাখাইনে বৌদ্ধ এবং হিন্দুদের বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। যারা সংখ্যায় অল্প।

ঘৃণা এবং ভুল তথ্য খুব দ্রুত ছড়াতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে।

সুতরাং এটা বলাই যায়, রাখাইন রাজ্যের ঘটনাবলীর ব্যাপারে নিয়ে সু চি'র সামান্য ক্ষমতা আছে।

রোহিঙ্গাদের সমর্থনে কোনো কথা বললেই যে তিনি বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের ক্ষোভ ও তোপের মুখে পড়বেন তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।

আকাশ থেকে ধারণ করা ছবিতে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির

অং সান সু চি বুঝেছেন যে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কোনো কিছু বলা বা সিদ্ধান্ত নেয়াটা জুয়া খেলার মতো হবে।

আর মিস সু চি যে জেদি ও তার সিদ্ধান্তের বিষয়ে অনঢ় তা নতুন কিছু নয়। সবাই জানে তিনি কোনো বিষয়ে একটা কিছু ভাবলে তাতেই অটল থাকবেন।

এ ছাড়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর যেহেতু 'ক্ষমতায়' থাকার অভ্যাস পুরোনো, তাই সেনা হস্তক্ষেপের আশঙ্কাও রয়ে যায়।

আর দেশটির গণতান্ত্রিক সরকারকে সেনাবাহিনী সরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতাও রাখে, সে ক্ষেত্রে মিস সু চি'র রোহিঙ্গাদের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার ঝুঁকি কতটা আসলে কতটা যুক্তিযুক্ত, সে প্রশ্নও থেকেই যায়।

২০০৩ সালে মিস সু চি'র দল গণতন্ত্রের যে রোডম্যাপের কথা ঘোষণা করেছিল সে অনুযায়ী তারা ১৪ বছর চলেছে।

অং সান সু চি'র দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি বা এনএলডি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ২০১৫ সালে সরকার গঠন করলেও তার হাতে কর্তৃত্ব কম।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সীমান্ত সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্ব সেনাবাহিনীর হাতে।

মিস সু চি'র দল ক্ষমতায় থাকলেও দেশটির সেনাবাহিনী এখনও সবচেয়ে ক্ষমতাধর।

এই সময়ে রাখাইনে সেনাবাহিনীর অভিযানের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক যে প্রতিক্রিয়া আসছে তাতে যে সেনাবাহিনী মিস সু চি'কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে সেটা স্পষ্ট।

রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভছবির কপিরাইটGETTY IMAGES
Image caption

রোহিঙ্গা সংকটে মিস সু চি'র মন্তব্য নিয়ে বেশ সমালোচনা রয়েচে, বিক্ষো



Comments