Contact For add

Mon, Sep 18 2017 - 4:25:25 PM +06 প্রচ্ছদ >> বিশেষ খবর

Preparing the last moment of Durga Puja! How to worship now!চলছে দূূর্গা পূজার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি! কেমন হবে এবার পূজা !

চলছে দূূর্গা পূজার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি! কেমন হবে এবার পূজা !

 

সাগরিকা মন্ডল,বিশেষ প্রতিবেদক :

সনাতন ধর্মালম্বীদের নিয়ে ১২ মাসে ১৩ পূজার উল্লেখ থাকলেও দূর্গা পূজাই সবথেকে বড় ধর্মীয় উৎসব সনাতনীদের নিকট। আশ্বিন বা চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে দুর্গাপূজা করা হয়।আশ্বিন মাসের দুর্গাপূজা শারদীয়া দুর্গাপূজাএবং চৈত্র মাসের দুর্গাপূজা বাসন্তী দুর্গাপূজা নামে পরিচিত।

শারদীয়া দুর্গাপূজার জনপ্রিয়তা বেশি। বাসন্তী দুর্গাপূজা মূলত কয়েকটি পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ।সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত শারদীয়া দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে"দুর্গাষষ্ঠী","মহাসপ্তমী", "মহাষ্টমী", "মহানবমী" ও "বিজয়াদশমী" নামে পরিচিত।

আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা-২০১৭ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠান ও সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে সারা দেশে আইন শৃঙ্খলার কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।এ উপলক্ষে সারা দেশে নেয়া হচ্ছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এ সময় শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উৎযাপনের জন্য বিভাগের প্রতিটি থানা এলাকার সকল অনুষ্ঠানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়ন থাকবে।  পূজায় প্রতিটি মন্ডপে কেউ যেন নাশকতা চালাতে না পারে তার জন্য নিরাপত্তা ঘিরে থাকবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।  সব ধরণের বিশৃঙ্খলা এড়াতে সর্বদায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও আনসার বাহিনী সদস্য মোতায়ন থাকবে।

 

 

দুর্গাপূজা এদেশের হাজার বছরের ঐতিহ্য ।এটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আয়োজন হলেও সার্বজনীন উৎসবে পরিণত । সারা দেশের মতন এ বছর বাগেরহাটে ও ৬০৬ টি পূজা মন্ডপে শারদীয় দুর্গা  পূজা অনুষ্ঠিত হবে।  বাগেরহাটের ৯ থানার মধ্যে চিতলমারীতে বেশী মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। অন্যান্য থানাতে ও পূজার তোরজোড় কম নয় ! চিতলমারীতে এ বছর ১৩৯ টি পূজা মন্ডপে পূজার সাজ সজ্জা চলছে ।দেখা যায় ,কোনো কোনো মন্দিরে পতিমা তৈরি শেষ হয়ে গেছে আবার কোনো কোনোটাতে চলছে রং তুলির কাজ ।

 

 

আগামি কাল ১৯ সেপ্টেম্বর ভোর ৬টায় শুভ মহালয়ার মধ্য দিয়ে দুর্গা পূজার সূচনা , ২৫ সেপ্টেম্বর দেবী মায়ের বোধনে মধ্য দিয়ে ও ১৯ শে সেপ্টেম্বর বিসর্জনে শেষ হবে ৫ দিন ব্যাপী  এ উৎসব । দূর্গার আগমন হবে নৌকায় আর গমন হবে ঘোড়ায় । তবে দেখা যায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর  মন্ডপ গুলোকে একটু বিশেষভাবে সাজানো হয়েছে ।  জানা যায়, বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায় বলেন, জেলার সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সর্বদাই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও আনসার বাহিনী সদস্য মোতায়ন থাকবে এবং পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে দায়িত্ব প্রাপ্ত সকল কর্মকর্তার নাম ও মোবাইল নং প্রিন্ট করে প্রত্যেক মন্ডপের গায়ে লাগিয়ে দেয়া হবে ।যাতে কোনো প্রকার সমস্যা হলে দ্রুত পুলিশকে  জানাতে পারে।তিনি আরো বলেন,ধর্ম যার যার, উৎসব সবার!সবাইকে শারদীয়ার শুভেচ্ছা।

এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান ,দেশজুড়ে পূজা মণ্ডপগুলোতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে একলাখ ৬৮ হাজার আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে  ।

ঢাকাতে বিভিন্ন মঠ ও মন্দিরে ২৩১টি ,খুলনা জেলা ও মহানগরীতে ৯২৪টি ,যশোরে ৬৪৬টি,সাতক্ষীরায় ৫৬৪টি,কুষ্টিয়া জেলায় ২২৪টি এ ছাড়াও কিশোরগঞ্জ জেলার ১৩ টি উপজেলায় ৩৫৭টি পূজা মন্ডপ সহ এ বছর সারা দেশে ৩০ হাজার ৭৭টি মণ্ডপে পূজা হবে ।

 

 

মহালয়া: 

মহালয়া দুর্গোৎসবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।মহালয়ার মাধ্যমে দেবী দুর্গা আজ পা রেখেছেন মর্ত্যলোকে। বছর ঘুরে আবারও উমা দেবী আসছেন তার বাপের বাড়ি। পুরাণমতে, অশুভ অসুর শক্তির কাছে পরাভূত দেবতারা স্বর্গলোকচ্যুত হওয়ার পর চারদিকে শুরু হয় অশুভ শক্তির প্রতাপ। এই অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে একত্র হন দেবতারা। তখন দেবতাদের তেজরশ্মি থেকে আবির্ভূত হন অসুরবিনাশী দেবী দুর্গা। মহালয়ার সময় ঘোর অমাবস্যা থাকে। তখন দুর্গা দেবীর মহাতেজের আলোয় সেই অমাবস্যা দূর হয়। প্রতিষ্ঠা পায় শুভশক্তি।
শাস্ত্রমতে, হিমালয়ের কৈলাশ থেকে সুদূর পথ পাড়ি দিয়ে প্রতিবছর দুর্গা দেবী আসেন সমতল ভূমির এই বাংলায়। সঙ্গে নিয়ে আসেন গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী আর সরস্বতীকে। প্রতিবছরের শরৎকালে দেবী দুর্গার এই আগমন হয় নিজ ভূমিতে। বিশুদ্ধ পঞ্জিকামতে, এবার দুর্গা দেবী আসছেন ‘ঘোটক’-এ চড়ে। গমনও করবেন একই বাহনে। ফল-ছত্রভঙ্গস্তুরঙ্গমে। হিন্দু শাস্ত্রমতে দেবী দুর্গার আবাহনই মহালয়া হিসেবে পরিচিত।

 

 

দেবী দূর্গার প্রকাশ:


কৈলাস পর্বতে জন্ম নেয়া অতি প্রেমভক্তির আদুরে মেয়ে দক্ষ তনয়া প্রয়োজনের নিরীক্ষে কালের আবর্তে মোষের ছদ্মবেশধারী প্রবল পরাক্রমশালী অসুর নিধনের নিমিত্তে রূপান্তর ঘটে দেবী দূর্গায়। উচ্ছ্বিষ্ট অপশক্তির অসুর দলনে রণরঙ্গিনী দেবী দূর্গাকে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিতে হয়েছিল। রণক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়ে পরাক্রমশালী অসুর অপশক্তিকে পরাস্ত করে দেবকুল তথা বিপদাকুল সমাজকে চরম বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছিলেন।দেবী দূর্গা হলেন শক্তির রূপ।অনান্য দেব দেবী মানুষের মঙ্গলার্থে তাঁর বিভিন্ন রূপের প্রকাশ মাত্র। হিন্দু ধর্মশাস্ত্র অনুসারে দেবী দূর্গা সকল দুঃখ দুর্দশার বিনাশকারিনী। পুরাকালে দেবতারা মহিষাসুরের অত্যাচারে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হয়েছিল। ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর’র শরীর থেকে আগুনের মত তেজরশ্মি একত্রিত হয়ে বিশাল এক আলোক পূঞ্জে পরিণত হয়। ঐ আলোক পুঞ্জ থেকে আর্বিভূত এক দেবী মূর্তি। এই দেবীই হলেন দূর্গা। মহাশক্তি শ্রীদুর্গা দেহ দূর্গের মূল শক্তি। আধ্যাত্মিক ভাবনা দূর্গা কাঠামোতে অন্তর্নিহিত। দূর্গার দশহাত দশ দিক রক্ষা করার প্রতীক, দশ প্রহরন এক দেবতার সাধনালব্ধ বিভূতি। দেবী ত্রিভঙ্গা-ত্রিগুণাত্মিকা শক্তির প্রতীক অর্থাৎ সত্ত্ব,রজঃ তমঃ গুণের প্রতীক। দেবী ত্রিনয়নী-একটি নয়ন চন্দ্রস্বরুপ, একটি সূর্যস্বরুপ এবং তৃতীয়টি অগ্নিস্বরুপ।

 

 

দূর্গা ও দূর্গাপূজা সংক্রান্ত কাহিনীগুলোর মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় ও লোকমান্য হল দেবীমাহাত্ম্যম্-এ বর্ণিত কাহিনীটি। দেবীমাহাত্ম্যম্ প্রকৃতপক্ষে ‘মার্কন্ডেয় পুরাণ’-এর একটি নির্বাচিত অংশ। সাতশত শ্লোকবিশিষ্ট এই দেবীমাহাত্ম্যম্-ই শ্রীশ্রী চন্ডি গ্রন্থ। চন্ডি পাঠ দূর্গোৎসবের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গও বটে। দেবীমাহাত্ম্যম্-এর কাহিনী অনুসারে পুরাকালে মহিষাসুর দেবগণকে একশ বছর ব্যাপি এক যুদ্ধে পরাস্ত করে স্বর্গের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল । অসুরদের অত্যাচারে পৃথিবী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল। শান্তিপুরী স্বর্গ থেকে বিতাড়িত দেবগণ প্রথমে প্রজাপতি ব্রহ্মা এবং পরে তাকে মুখপাত্র করে শিব ও নারায়ণের সমীপে উপস্থিত হন। মহিষাসুরের অত্যাচার কাহিনী শ্রবণ করে তারা উভয়েই অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হন। সেই ক্রোধে তাদের মুখমন্ডল ভীষণাকার ধারণ করে। ইন্দ্রাদি অন্যান্য দেবতাদের দেহ থেকেও সুবিপুল তেজ নির্গত হয়ে সেই মহাতেজের সঙ্গে মিলিত হয়। সুউচ্চ হিমালয়ে স্থিত ঋষি কাত্যায়নের আশ্রমে সেই বিরাট তেজপুঞ্জ একত্রিত হয়ে এক নারীমূর্তি ধারণ করল।আর এই নারী মূর্তিকেই বলা হয় দেবী দূর্গা।

দূর্গা পূজার আরম্ভ :

দূর্গা পূজা কবে, কখন, কোথায় প্রথম শুরু হয়েছিল তা জানা যায় না।ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে আছে, সৃষ্টির আদিতে গোলকস্থ আদি বৃন্দাবনক্ষেত্রের মহারাসমন্ডলে কৃষ্ণ সর্বপ্রথম দূর্গাপূজা করেন। দ্বিতীয়বার দুর্গার আরাধনা করেন ব্রহ্মা। মধু ও কৈটভ দ্বৈত্যদ্বয়ের নিধনে তিনি শরণাপন্ন হন দেবীর। ত্রিপুরাসুরের সঙ্গে যুদ্ধকালে সংকটাপন্ন মহাদেব তৃতীয়বার দূর্গাপূজা করেছিলেন। এরপর দুর্বাসা মুনির শাপে শ্রীভষ্ট হয়ে দেবরাজ ইন্দ্র যে দুর্গাপূজা করেন। এটা চতুর্থ দূর্গোৎসব। দেবী ভাগবত অনুসারে ব্রহ্মা ও ইন্দ্রের ন্যায় ব্রহ্মার মানসপুত্র মনু পৃথিবীর শাসনভার পেয়ে ক্ষীরোদসাগরের তীরে মৃন্ময়ী মূর্তি নির্মান করে দেবী দূর্গার আরাধনা করেন। জাগতিক মায়ার বন্ধন থেকে মুক্তি পেতে ঋষি মান্ডব্য, হারানো রাজ্য পুনরুদ্ধারে সুরথ রাজা ও বৈরাগ্য লাভের জন্য সামাধি বৈশ্য, কার্তাবির্জাজুন বধের জন্য বিষ্ণুর অবতার পরশুরাম দূর্গার আরাধনা করেন।ভারতের দ্রাবিড় সভ্যতায় মাতৃতান্ত্রিক দ্রাবিড় জাতির মধ্যে মাতৃদেবীর পূজার প্রচলন ছিল। সিন্ধু সভ্যতায় (হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো সভ্যতা) দেবীমাতা, ত্রিমস্তক দেবতা, পশুপতি শিবের পূজার প্রচলন ছিল। দূর্গা শিবের অর্ধাঙ্গিনী সে হিসাবে অথবা দেবী মাতা হিসাবে পূজা হতে পারে। তবে কৃত্তিবাসের রামায়নে আছে, শ্রী রাম চন্দ্র কালিদহ সাগর (বগুড়ার) থেকে ১০১ টি নীল পদ্ম সংগ্রহ করে সাগর কূলে বসে বসন্তকালে সীতা উদ্ধারের জন্য সর্বপ্রথম শক্তি তথা দূর্গোৎসবের (বাসন্তি পূজা বা অকাল বোধন) আয়োজন করেছিলেন।আর এ জন্যেই দুই বঙ্গতে দূর্গা পূজার আমেজটা শুধু সনাতনীদের মাঝে সীমাবদ্ধ না থেকে সকল বাঙ্গালীর সংস্কৃতি স্বরুপ সৃজন হয়েছিল মনে।তবে বৈদিক যুগ থেকেই দুর্গা নাম প্রচলিত। ঋকবেদে বিশ্বদুর্গা, সিন্ধু দুর্গা, অগ্নিদুর্গা- এ তিনটি নাম পাওয়া যায়। দুর্গাপূজা কেবল শাক্ত সমাজেই নয়, প্রাচীন বৈষ্ণব সমাজেও অনুষ্ঠিত হয়েছে। মহাপ্রভু চৈতন্যদেব চণ্ডীম-পেই চতুষ্পঠী চালু করেন। বৈষ্ণব কবি চণ্ডীদাস, বৈষ্ণবাচার্য্য নিত্যান্দজীও দুর্গা দেবীর ভক্ত ছিলেন। মার্কেয় পুরাণ মতে, সত্যযুগে রাজা সুরথ, সমাধি বৈশ্য দেবীর মৃন্ময়ী মূর্তি গড়ে পূজা আরম্ভ করেছিলেন। কৃত্তিবাস রামায়ণ থেকে জানা যায়, ত্রেতা যুগে লঙ্কার রাজা রাবণ দেবী পূজার আয়োজন করে দেবীর আশীর্বাদ ধন্য হয়েছিলেন। অন্যদিকে রাবণ-বধ এবং জানকীকে উদ্ধার করার জন্য শ্রী রামচন্দ্র বসন্তকালের আগে শরৎকালে দেবী পূজা করেছিলেন। উল্লেখ্য, শ্রী রামচন্দ্র দেবী ভগবতীকে অকালে বোধন করেছিলেন। মূলত দেবী পূজা বসন্তকালে হয়ে থাকে। সেই থেকে শরতে দেবী পূজা অকাল বোধন নামে পরিচিত। শরতের এই পূজাই আমাদের দুর্গোৎসব। জানা যায়, প্রথম শতকে কুষান যুগে, পঞ্চম শতকে গুপ্ত যুগে, সপ্তম শতকে পল্লব যুগে এবং ১১-১২ শতকে সেন বংশের আমলে দেবী মহিষমর্দিনী রূপে পূজিত হয়েছেন। কুষান যুগে দূর্গা ছিলেন লাল পাথরের তৈরি। পাল যুগে অর্থাৎ ১২৮৯ সালে দেবী ত্রিনয়নী এবং চার হাতবিশিষ্ট। দশভুজা দূর্গার আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৮ শতকে।

 

 

চারদিকে আনন্দ আয়োজন সম্পন্ন করার তাড়া এখন সবার। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। খুশির আনন্দ ছুঁয়ে যাচ্ছে ঘরে ঘরে, সব বয়সী মানুষের মনে।

 

 

 

 



Comments

Place for Advertizement
Add