Contact For add

Tue, Oct 17 2017 - 7:35:48 PM +06 প্রচ্ছদ >> স্বাস্থ্য

Do Yemen doctors come to Dhaka?ঢাকায় এসে কী শিখলেন ইয়েমেনের চিকিৎসকেরা?

ঢাকায় এসে কী শিখলেন ইয়েমেনের চিকিৎসকেরা?

হলি টাইমস রিপোর্ট :

ঢাকার আইসডিডিআরবি হাসপাতালটিকে অনেকেই এখনো কলেরা হাসপাতাল নামেই ডাকেন।হাসপাতালের ওয়ার্ডে এখন ততটা বেশি রোগী নেই। যাও আছে তার মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি।হাসপাতালটিতে এক সপ্তাহের এক প্রশিক্ষণ নিয়ে গেলেন যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইয়েমেন থেকে আসা ১৭ জন চিকিৎসক ও নার্স।আদেন শহরের চিকিৎসক আরিসি নাহলা মোহাম্মেদ আব্দুল্লাহ তাদের একজন।

তিনি বলছিলেন, "আমি একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ। আমাদের যে সমস্যায় সবচাইতে বেশি পরতে হয়, তা হল ভয়াবহ পানি শূন্যতা নিয়ে আসা কলেরা রোগী। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে এটা অনেক দেখা যায়। এছাড়া পানি শূন্যতার কারণে কিডনির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে এমন রোগী। এগুলো নিয়েই আমরা সবচাইতে বেশি সমস্যায় পড়ি। এখানে আমরা শিখেছি কিভাবে এমন রোগীদের সামাল দিতে হয়। আমরাও আমাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করার চেষ্টা করেছি।"

তিয়াজ শহর থেকে এসেছেন ডাঃ হেজাম ফাতেহী আলী মোহাম্মেদ।

তিনি বলছিলেন, "আমাদের মুল উদ্দেশ্য ছিল কলেরা সম্পর্কে জানা। আমরা আমাদের আশার চেয়ে অনেক বেশি কিছু শিখেছি। আমরা অনেক খুশি কারণ আমরা অনেক নতুন শেখা জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরবো"

ডাইরিয়ার রোগীছবির কপিরাইটAFP
Image captionগ্রীষ্ম ও বর্ষায় ডাইরিয়া ও কলেরা সবচাইতে বেশি হয়।

যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইয়েমেনে রোগ আর অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের ছবি হয়ত অনেকেই দেখেছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সেখানে কলেরায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

ঢাকায় সেখান থেকে যারা এলেন তারা দেশে ফিরে নিজেরাই অন্য ডাক্তার ও নার্সদের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করবেন।

বাংলাদেশে তাদের আসার কারণ হল নিরাপত্তার অভাবে ইয়েমেন পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব হয়নি বিশেষজ্ঞদের।

সাধারণত আইসডিডিআরবির চিকিৎসকেরা বিশ্বব্যাপী কলেরা বা ডাইরিয়ার প্রকোপ রয়েছে এমন দেশগুলোতে গিয়ে নিজেরাই প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।

কাছাকাছি সময়ে তাদের চিকিৎসকেরা সুদান, হাইতি, ইরাক, সিরিয়া ও ইথিওপিয়ার মতো দেশে গেছেন।

কিন্তু ইয়েমেনে নিরাপত্তার অভাবে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তাই সেখান থেকেই চিকিৎসকদের বাংলাদেশে আসতে হল।

কিন্তু বাংলাদেশকে তারা বেছে নিলেন কারণ কলেরা ও ডাইরিয়া জনিত রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি তৈরিতে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী পথিকৃৎ হিসেবে স্বীকৃত।

ডাঃ সারিকা নুজহাতছবির কপিরাইটBBC BANGLA
Image captionডাঃ সারিকা নুজহাত বলছেন, অনেকে খাবার স্যালাইন ভুলভাবে বানান।

কিন্তু স্বয়ং বাংলাদেশে এর প্রকোপ কতটা নিয়ন্ত্রণে আছে?

আইসিডিডিআরবির হাসপাতালগুলোর প্রধান ডাঃ আজহারুল ইসলাম খান বলছেন, "কলেরাও এক ধরনের ডাইরিয়া। এখন যেটা হয়েছে কলেরা নিয়ে বাঁচতে শিখেছে মানুষ। ডাইরিয়ার মধ্যে কলেরাও অন্তর্ভুক্ত। সেটি হলে মানুষজন দৌড়ে গিয়ে দোকান থেকে ওরাল স্যালাইন খাওয়া শুরু করে। বাংলাদেশে ৮৪ শতাংশ মানুষের কাছে ওরাল স্যালাইন পৌঁছেছে। কলেরা হলে ওআরএস খাবো, অবনতি হলে হাসপাতালে যাবো এই জিনিসটা বাংলাদেশে এখন খুবই প্রচলিত আছে। মানুষজন খুবই সচেতন কিন্তু তারপরও অনেকসময় যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে অনেকে রাস্তায় মারা যায়। যেটা খুবই দুঃখজনক"

ডঃ খান বলছেন, বাংলাদেশে কলেরা নিয়ন্ত্রণে আছে কিন্তু তারপরও বাংলাদেশের মতো দেশে কলেরা কিছুটা হলেও রয়েই গেছে।

তার কারণ ব্যাখ্যা করে ডাঃ খান বলছিলেন, "উন্নয়নশীল দেশে অবকাঠামো কখনোই ফুলেস্ট ক্যাপাসিটিতে যাচ্ছে না। পানি ও পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থায় ঘাটতি রয়েই যাচ্ছে। এ দুটো উন্নত না হওয়া পর্যন্ত কলেরা কিছুটা থাকবেই। আর অবকাঠামো যেহেতু দীর্ঘমেয়াদি পলিসির ব্যাপার অতএব সময় লাগবে"

বাংলাদেশে বিশেষ গ্রীষ্ম ও বর্ষার মৌসুম এলে ব্যাপকভাবে ডাইরিয়ার প্রকোপের কথা খুব শোনা যায়।

উন্নয়নশীল দেশে পানি ও পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থায় ঘাটতি রয়েই যাচ্ছে।ছবির কপিরাইটGETTY IMAGES
Image captionউন্নয়নশীল দেশে পানি ও পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থায় ঘাটতি রয়েই যাচ্ছে।

শুধু আইসিডিডিআরবিতেই ডাইরিয়ার রোগী আসে বছরে দুই লাখের বেশি।

যার মধ্যে ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত কলেরা রোগী, বিশেষ করে এর মৌসুমে। ইয়েমেন থেকে আসা ডাক্তারদের হাসপাতালে হাতে কলমে শিখিয়েছেন ডাঃ সারিকা নুজহাত।

তিনি বলছিলেন কলেরা প্রতিরোধে খাবার স্যালাইন খাওয়া নিয়ে অনেক সচেতনতা হয়েছে বটে কিন্তু এখনো অনেকেই সেটি ভুলভাবে বানান।

তিনি বলছেন, "স্যালাইন খেতে হবে এই নলেজটা অনেক ভালো হয়েছে কিন্তু বানানোর পদ্ধতি, পানি কম বেশি দেয়া বা তা কতক্ষণ ভালো থাকছে সেটি নিয়ে নলেজে কিছুটা ঘাটতি থাকছে। আমি রেগুলার রোগী দেখি তো। আমার তাই মনে হচ্ছে। স্যালাইনের প্যাকেটের গায়ে পানির পরিমাণ লেখা থাকে। সেই অনুযায়ী বানাতে হবে। স্যালাইন বানানো পর কত ঘণ্টা ভালো থাকে সেটাও লেখা থাকে। সেই সময়ের মধ্যে স্যালাইন খাওয়া শেষ হোক বা না হোক তা ফেলে দিতে হবে"

খাবার স্যালাইন সম্পর্কে বাংলাদেশে ব্যাপক প্রচারণা হয়েছে। তবে এত প্রচারণার পর সাধারণ মানুষজন স্যালাইন নিয়ে কিছুটা ভুল করছেন।

বাংলাদেশে এক সময় কলেরা রোগ নিয়ে একটা ব্যাপক ভীতিও ছিল মানুষজনের মধ্যে।

চিকিৎসকরা বলছেন সেই ভয়টা অন্তত মানুষজনের এখন প্রায় অনেকটাই কেটে গেছে।খবর বিবিসির



Comments

Place for Advertizement
Add