Contact For add

Wed, Nov 1 2017 - 7:37:59 PM UTC প্রচ্ছদ >> নারী ও শিশু

why Important nutrition for kanya shishu and womenজানুন কেন জরুরি কন্যা শিশু ও নারীদের খাদ্য পুষ্টি

জানুন কেন জরুরি কন্যা শিশু ও নারীদের খাদ্য পুষ্টি

সাগরিকা মন্ডল  :

 কন্যা শিশুর ও নারীদের জন্য পুষ্টি অতিব জরুরি ।একটি কন্যা শিশুকে যদি ছোটবেলা থেকে পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়ানো না হয় তাহলে সে অপুষ্টিতে ভুগবে ।একজন কন্যা শিশু যদি ছোট থেকে পুষ্টি সর্ম্পকে না জানে তা হলে সে কি করে একজন পরির্পূণ নারী হবে এবং কি করে পুষ্টির্পূণ সন্তানদানে সক্ষম হবে ।তাই আমাদের আজকের এই পুষ্টি বার্তা ।
পুষ্টি কি :
দেহ সুস্থ ও সবল রাখার প্রক্রিয়াকে পুষ্টি বলে৷ পুষ্টির ইংরেজি শব্দ (Nutrition)। অপরদিকে খাদ্যের যেসব জৈব অথবা অজৈব উপাদান জীবের জীবনীশক্তির যোগান দেয় , তাদের একসঙ্গে পরিপেষক বা নিউট্রিয়েন্টস  বলে ৷ যেমন :—   গ্লুকোজ,খনিজ লবন,ভিটামিন ইত্যাদি ।
প্রাণী বিভিন্ন উপাদান থেকে পুষ্টি পেয়ে থাকে ৷ আর এই উপাদান গুলো ৬ টি ৷ যথা:-  আমিষ, শর্করা, স্নেহ পদার্থ, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানি। এর অভাবজনিত রোগগুলো হলোঃ গলগন্ড, রাতকানা, রিকেটস, রক্তশূন্যতা  । যা কন্যা শিশুদের বেশি হয়ে থাকে কন্যা শিশুদের ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস ভালো স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি। আর ভারসাম্যপূর্ণ খাবার খেতে হলে পুষ্টির বিষয়টি মাথায় রাখতেই হয়।প্রতিদিন ভাত, আটা, বার্লি বা সিরিয়াল ধরনের খাবার রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়। এরপর আলু, মিষ্টিআলু, গাজর ইত্যাদি মাটির নিচে জন্মে এমন সবজি খেতে হবে। পাশাপাশি স্টার্চ বা শ্বেতসার সমৃদ্ধ ফলও রাখতে হবে তালিকায়। এভাবে সামঞ্জস্য রেখে খাদ্যতালিকা সাজালে প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান পাওয়া যাবে ।শিশুদের খাদ্যাভাবের বহুদৃষ্ট প্রকাশ হলো প্রোটিন শক্তির অর্থাৎ প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য ও শক্তিসমৃদ্ধ দানাশস্যের অভাবজনিত পুষ্টিহীনতা কোয়াশিওরকর ও অস্থিচর্মসার ম্যারাসমাস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৩০% আর শিশুদের ৪৮% অপুষ্টিতে আক্রান্ত। দেশের ০-৭২ মাস বয়সী শিশুদের মধ্যে মাত্র ৬.২% স্বাভাবিক, বাকি প্রায় ৯৩.৮% নানা ধরনের অপুষ্টিজনিত রোগব্যাধির শিকার।দেহের উচ্চতা ও ওজনভিত্তিক শ্রেণিকরণ পদ্ধতি অনুযায়ী ১৯৭৫-১৯৯০ সাল পর্যন্ত সময়কালে স্বাভাবিক উচ্চতা ও ওজনসম্পন্ন শিশুদের অনুপাত কিছুটা বাড়লেও দুর্বল ও দেহের ব্যাহত বৃদ্ধি হার অপরিবর্তিত রয়েছে। লিঙ্গবৈষম্যগত বিশ্লেষণ থেকে দেখা গেছে যে, একই বয়সের ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এবং শহরের শিশু অপেক্ষা গ্রামের শিশুরা অধিক অপুষ্ট। এক বছরের কমবয়সী শিশুমৃত্যুর হার এখন নিম্নমুখী এক লক্ষে ২৫০ (১৯৬২), ৯৪ (১৯৯০) ও ৭৭ (১৯৯৪) এবং এক বছরের বেশি বয়সীর মৃত্যুহার ১৯৯০ সালের ১৫১ থেকে কমে ১৯৯৪ সালে ছিল ১৩৪। পাঁচ বছরের কমবয়সী এসব শিশুর ৫০-৬০% মারা যায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অপুষ্টির কারণে।

 বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান সেলিনা হোসেন কন্যা শিশুর অধিকার সুরক্ষায় বলেন, কন্যা শিশুদের মৌলিক অধিকারসমূহ যথা শিক্ষা, পুষ্টি, খাদ্য ইত্যাদি নিশ্চিত করতে হবে, কোনোভাবেই তাদের মৌলিক অধিকারসমূহ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। শিশুর প্রতি সকল প্রকারের সহিংসতা বন্ধ করার ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধভাবে সবকিছু মোকাবিলা করতে হবে।নারীদের শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে । এছাড়াও তিনি বলেন, যে বাবা-মা তাদের মেয়েকে শিশুবয়সে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে তারা কেন সচেতন হবেন না? তাদেরকে এবং আমাদের সমাজকে বোঝাতে হবে—কী কী সমস্যা হয় একটা মেয়ের অল্প বয়সে বিয়ে হলে। একটা মেয়ে যখন স্কুলে পড়তে পড়তে ছেড়ে দিচ্ছে আর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, সেই স্কুলের কি দায়িত্ব না তার সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে তার শিক্ষা অবিরত রাখার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া? সেই কর্তৃপক্ষেরও সচেতনতা বাড়াতে কাজ করতে হবে। আমাদের দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে এবং এসডিজির লক্ষ্যসমূহ অর্জন করতে হলে কন্যা শিশুর প্রতি কোনো বৈষম্য করা যাবে না।

ফরহাদ হোসেন বলেন এক সম্মেলনে বলেন, “দামি খাবার হলেই পুষ্টিকর খাবার হয় না। আমাদের চারপাশেই অনেক পুষ্টিকর খাবার রয়েছে। জানা থাকলে এগুলো থেকেইঅনেক পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে।”এছাড়া খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞানে ১০ ধরনের পুষ্টি কথা বলা হযেছে , যেগুলো কন্যা শিশু ও নারীদের সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। যার অভাবে আপনার কন্যা শিশু অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন।

 

জেনে নেওয়া যাক এ ১০ ধরনের খাদ্য ওপুষ্টি সম্র্পকে -  

১. আঁশ
একজন কন্যা শিশু ছোট থেকে সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক নারীর জন্য  প্রতিদিন ২১ থেকে ২৫ গ্রাম আঁশজাতীয় খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এটি শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, শরীরে শক্তি জোগায়। পেট ফোলা ভাব, গ্যাস ইত্যাদির সমস্যা প্রতিরোধ করে।

২. ক্যালসিয়াম
প্রতিটি কন্যা শিশু জন্য পরিমানমত ও নারীর সুস্থ থাকার জন্য এক হাজার মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম খাওয়া প্রয়োজন। দুধ, দই, মটরশুটি, সবুজ শাকসবজি ইত্যাদিতে ক্যালসিয়াম রয়েছে। ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁতকে সুরক্ষিত রাখে; পেশির গঠনে সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম আমাদের দেহের হাড় মজবুত করার গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। আমাদের শরীরের প্রায় ৯৯% ক্যালসিয়াম থাকে হাড়ে, কিছু থাকে দাঁতে, কিছু সফট টিস্যুতে এবং কিছু ফ্লুইডের মধ্যে থাকে। তাই হাড় মজবুতভাবে গঠনে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া প্রয়োজন।
৩. ম্যাগনেসিয়াম
১৯ থেকে ৩০ বছর বয়সের নারীদের ৩১০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম খাওয়া জরুরি। ত্রিশের বেশি বয়সের নারীদের ৩২০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ করতে হয়।
ম্যাগনেসিয়াম শরীরের জন্য খুব প্রয়োজনীয় একটি মিনারেল। এটি পেশির কার্যক্রমকে ভালো রাখে; শরীরকে কর্মক্ষম রাখতে কাজ করে। কাঠবাদাম, শাক, শিমের বিচি ইত্যাদিতে ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়।
৪. ভিটামিন-ই
প্রতিদিন ১৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন-ই গ্রহণ করা প্রয়োজন। ভিটামিন-ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের চাবি। এটি ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকেল থেকে শরীরকে সুরক্ষা দেয়। ফ্রি র্যাডিকেল কোষকে নষ্ট করে দেয়। পালংশাক, কাঠবাদাম, পেস্তাবাদাম ইত্যাদিতে ভিটামিন-ই রয়েছে।
৫. ভিটামিন-সি
এটি ত্বককে ভালো রাখে; শরীর পুনর্গঠনে সাহায্য করে ।প্রতিদিন ৭৫ গ্রাম ভিটামিন-সি শরীরে প্রয়োজন। কমলা, মাল্টা, ব্রকলি, জলপাই ইত্যাদির মধ্যে ভিটামিন-সি রয়েছে। ভিটামিন-সিও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভালো উৎস। ।
৬. প্রোটিন
পূর্ণবয়স্ক সুস্থ নারীর প্রতিদিন ৪৬ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করতে হয়। মাংস, ডাল, দইয়ের মধ্যে প্রোটিন থাকে। পেশির গঠনে এবং শরীরে শক্তি জোগাতে প্রোটিনের প্রয়োজন রয়েছে।
৭. আয়রন
প্রতিদিন ১৮ গ্রাম আয়রন শরীরে প্রয়োজন। কাঁচা কলা, কলিজা, লতি, ডালিম ইত্যাদির মধ্যে আয়রন রয়েছে। আয়রন শরীরে অক্সিজেন পরিবহনে সাহায্য করে। যাঁদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি রয়েছে, তাঁদের রক্তশূন্যতা ও অবসন্নতার সমস্যা হয়।তাই আপনার কন্যা শিশুকে ছোট থেকে আয়রন খাবারে অভস্ত করুন ।
৮. ভিটামিন-ডি
প্রতিদিন একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর  ৬০০ আইইউ ভিটামিন-ডি গ্রহণ করা প্রয়োজন। ভিটামিন-ডি পাওয়া যায় সূর্যের আলোতে। এ ছাড়া টুনা, স্যামন, ম্যাকরেল ইত্যাদি মাছে ভিটামিন-ডি পাওয়া যায়। ভিটামিন-ডি  শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে। এটি পেশির গঠন ও হাড় ভালো রাখতে কাজ করে।
৯. ভিটামিন-এ
প্রতিদিন ৭০০ আইসিইউ ভিটামিন-এ গ্রহণ করতে হয়। গাজর, লালশাক, আলু ইত্যাদির মধ্যে ভিটামিন-এ রয়েছে। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্বাস্থ্যকর টিস্যু গঠনে ও কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে। এটি দৃষ্টি ভালো রাখতে কাজ করে।
১০. পটাসিয়াম
প্রতিদিন ৪ দশমিক ৭ গ্রাম পটাসিয়াম  নারীর শরীরের জন্য জরুরি। কলা, আলু ইত্যাদির মধ্যে পটাশিয়াম পাওয়া যায়। এটি কার্বোহাইড্রেটকে ভাঙতে সাহায্য করে এবং হৃদস্পন্দন ভালো রাখে।

প্রতিবার খাবার খাওয়ার আগে সাত থেকে ১০ বার গভীর এবং ধীর গতিতে শ্বাস নিতে হবে। এতে শরীর খাবার গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হবে এবং হজমও হবে সহজে। মনে রাখতে হবে,আগকের কন্যা শিশু আগামি দিনের দেশ মাতা  ।
 



Comments