হলি টাইমস রিপোর্ট :
ইরান আর সৌদি আরব কি সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছে? লেবাননকে ঘিরে তাদের মধ্যে একটি সংঘাতের আশংকা কতটা? কী নিয়ে দুদেশের মধ্যে এত দ্বন্দ্ব? বিশ্লেষণ করেছেন বিবিসির পল এডামস:
ইরান আর সৌদি আরবের মধ্যে যদি যুদ্ধ বাধে, সেটা হবে একটা বিরাট বিপর্যয়।কেউই আসলে মনে করে না, এই দুই দেশের মধ্যে এরকম যুদ্ধের সম্ভাবনা আছে।
কিন্তু তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত দিনে দিনে বাড়ছে।
পুরো মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে বিভিন্ন দেশে ইরান আর সৌদি আরব কার্যত এক 'প্রক্সি' বা ছায়া যুদ্ধে লিপ্ত।
দুদেশের মধ্যে কী নিয়ে দ্বন্দ্ব?
মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতা আর প্রভাব বিস্তার নিয়ে সৌদি আরব আর ইরানের দ্বন্দ্ব চলছে গত প্রায় চল্লিশ বছর ধরে।
ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র দুটি স্থান, মক্কা এবং মদিনা হচ্ছে সৌদি আরবে। কাজেই সৌদি আরব মনে করে তারা ইসলামী বিশ্বের অবিসংবাদিত নেতা।
কিন্তু ১৯৭৯ সালে ইরানে এক ইসলামী বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় এলেন আয়াতোল্লাহ খোমেনি।
এটি সৌদি আরবকে খুবই শংকিত করে তুললো। হঠাৎ তারা দেখলো, ইসলামী বিশ্বে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী এক রাষ্ট্রের উত্থান ঘটছে।
গত ৪০ বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের বিরাট অংশ জুড়ে ইরানের প্রভাব-প্রতিপত্তি দিনে দিনে বেড়েছে। ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, ওমান, ইয়েমেন—এসব দেশ যেভাবে ইরানের প্রভাব বলয়ে চলে গেছে বা যাচ্ছে, তাতে সৌদিরা রীতিমত আতংকিত।
এর সঙ্গে ইসলামের বহু পুরোনো দ্বন্দ্ব শিয়া-সুন্নী বিরোধ তো আছেই।
সৌদি আরব সুন্নী আর ইরান শিয়া ইসলামের পৃষ্ঠপোষক।
কাজেই সৌদি-ইরান ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের একটা ধর্মীয় মাত্রাও আছে।
সৌদি আরব এবং ইরান লড়ছে কোন কোন দেশে
ইয়েমেনে গত কয়েক বছর ধরে চলছে গৃহযুদ্ধ।
সৌদি আরব লড়ছে এক পক্ষে, ইরান হুথি বিদ্রোহীদের পক্ষে।
সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট আসাদকে সমর্থন করছে ইরান। সেখানে তারা সৈন্য এবং অস্ত্রশস্ত্র পাঠিয়েছে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে।
অন্যদিকে সৌদি আরব সমর্থন যোগাচ্ছে বিদ্রোহীদের। তারা অর্থ, অস্ত্র, প্রশিক্ষণ সবই দিচ্ছে বিদ্রোহীদের।
ইরাকে সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর ইরানের প্রভাব অনেক বেড়ে গেছে।
সৌদি আরবও সম্প্রতি ইরাকে তাদের প্রভাব বাড়াতে সক্রিয় হয়েছে।
এখন লেবাননকে ঘিরেও শুরু হয়েছে তীব্র ইরান-সৌদি দ্বন্দ্ব।
লেবানন এমনিতেই খুব জটিল রাষ্ট্র। সেখানে শিয়া, সুন্নি এবং খ্রীষ্টানদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য খুবই স্পর্শকাতর একটি বিষয়।
ইরান বহু বছর ধরে লেবাননের শিয়া দল হেযবোল্লাহ এবং তাদের মিলিশিয়াকে নানাভাবে সমর্থন যুগিয়ে চলেছে।
হেযবোল্লাহ লেবাননের সরকারের অংশ। কিন্তু একই সঙ্গে তারা সিরিয়া, ইয়েমেন এবং ইরাকে লড়াই করছে।
যেভাবে ইরান এবং হেযবোল্লার প্রভাব বলয় বাড়ছে, তাতে সৌদি আরব রীতিমত আতংকিত।
তাহলে এখন কী ঘটবে?
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, এমবিএস নামে যাকে ডাকা হয়, তিনিই কার্যত এখন দেশ চালান।
সাম্প্রতিককালে তিনি ইরানের বিরুদ্ধে খুবই কড়া ভাষায় কথা বলছেন। নানা হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। তিনি অভিযোগ করছেন, ইরান মুসলিম বিশ্বে একক আধিপত্য কায়েম করতে চাইছে।
বেশিরভাগ মানুষের বিশ্বাস, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানই আসলে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সা'দ হারিরিকে পদত্যাগ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
সা'দ হারিরি সৌদি রাজধানী রিয়াদ থেকেই হঠাৎ পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে চমকে দিয়েছিলেন সবাইকে।
সন্দেহ করা হচ্ছে, সৌদি আরব আসলে লেবাননের হেযবোল্লাহর সঙ্গে আগ বাড়িয়ে একটা যুদ্ধ বাধাতে চাইছে। তাদের উদ্দেশ্য লেবাননে হেযবোল্লাহকে দুর্বল করা, এবং ইরানের প্রভাব খর্ব করা।
যদি এটাই সত্যি হয়, এটি খুবই বিপদজনক এক খেলা। সৌদি আরব আর ইরানের চলমান স্নায়ু যুদ্ধে এক নতুন বিপদজনক লড়াই শুরু হয়ে যেতে পারে লেবাননকে ঘিরে।খবর বিবিসির