Contact For add

Wed, Nov 22 2017 - 6:09:28 PM +06 প্রচ্ছদ >> স্বাস্থ্য

Absence of limbs many people infront of deathঅঙ্গ প্রত্যঙ্গের অভাবে মৃত্যু পথে অসংখ্য মানুষ

অঙ্গ প্রত্যঙ্গের অভাবে মৃত্যু পথে অসংখ্য মানুষ




আন্তন নাগ :
দেশে প্রতিবছর কমপক্ষে সাড়ে পনের লাখ মানুষ তাদের কোন কোন অঙ্গ বিকল হওয়ার রোগে ভুগে থাকেন। নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া এসব মানুষদের বাঁচাতে অঙ্গ-প্রতঙ্গ দান করা মানুষের সংখ্যা নগন্য। জীবন বাঁচাতে অঙ্গ দানকরার মানবিক সংস্কৃতি থেকে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।
বিবিসি’র এক প্রতিবেদন বলা হয়েছে, বিশ্বের চিকিৎসা বিজ্ঞান যেখানে মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করার ওপর এগিয়েছে সেখানে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে।
এর তিনটি কারণও বিশ্লেষণ করেছেন বিশ্লেষকরা। এর মধ্যে আবেগ, ধর্মীয় চিন্তাধারা এবং যারা অঙ্গ দান করেন তারা মারা গেলে তাদের পরিবারের দায়িত্বহীনতা অন্যতম।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব মতে, বছরে ৪০ হাজার মানুষের কিডনি বিকল হয়, এক কোটি মানুষ হেপাটাইটিস বি- ভাইরাসে আক্রান্ত হয় যাদের মধ্যে ১০ লাখ মানুষের লিভার বিকল হয়। ৫ লাখ মানুষের কর্নিয়া বিকল হয়। আর অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিকল হয় দুর্ঘটনা বা অন্য কিছু কারণে।
দেশে ১৯৮৮ সালে প্রথমবারের মতো কিডনি প্রতিস্থাপিত হয়। এর পর এত বছরে দেশে মাত্র এক হাজার কিডনি প্রতিস্থাপিত হয়েছে। তবে গত কয়েক বছর ধরে দেড়শ’এর মতো কিডনি স্থাপিত হচ্ছে বছরে। অন্য দিকে মাত্র ৪০-৫০ টি কর্ণিয়া প্রতিস্থাপিত হচ্ছে বছরে। এ পর্যন্ত চারটি লিভার প্রতিস্থাপিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ফুসফুস বা হৃৎপিন্ড প্রতিস্থাপিত হয়নি। তবে কিছু কিছু অস্থিমজ্জা সংযোজিত হয়েছে।
অন্যান্য  রোগে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে  গেলে  সেটি প্রতিস্থাপনের চিত্রও একই রকম হতাশাব্যঞ্জক। এর প্রধান কারণ বলা হচ্ছে,  দেশে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দান করার চিত্র ততটা ভালো নয় ।

দু একটি প্রতঙ্গ  নেওয়া হলেও  দেশে এখনো  মৃত ব্যক্তির সম্পর্ণ অঙ্গ  নেওয়া  দেশে এখনো শুরুই হয়নি।
কিন্তু এর কারণ কী? কেন অঙ্গ দান করা সহজ হচ্ছেনা ?
বাংলাদেশ লিভার ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অধ্যাপক  মোহাম্মদ আলী বলছেন বাংলাদেশে কুসংস্কার ও ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা এর অন্যতম প্রধান কারণ। অনেকে রিলিজিয়াস একটা গ্রাউন্ড দাড় করান  যে আমি মরে  গেলাম, আমার লিভার খুলে নিলো, আমার হার্ট খুলে নিলো, কি নিয়ে আমি কবরে যাবো। আমরা জনগণকে বুঝাই  যে ধর্মে  কোন বারণ নাই, কারণ  সৌদি আরবের মতো জায়গায় লিভার ট্রান্সপ্লান্ট, হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট সবই হচ্ছে। ধর্মও এমন বলে না  যে তুমি মরার পরে অঙ্গ দান করতে পারবা না"
অধ্যাপক আলী বলছেন বাংলাদেশে প্রতিস্থাপনের সুবিধাও খুব কম।
২০১৪ সালে তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানের  সেবায় নিজের পুরো শরীর দান করেছেন সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী। তিনি বলেছেন, অকেজো না হয়ে আমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যদি  কোন কারণে অন্য কারো কাজে আসে, তাকে বাঁচাবার  ক্ষেত্রে অথবা তার জীবন পরিচালনার  ক্ষেত্রে  কোনভাবে কাজে আসে,  সেই জায়গাটা  থেকেই  স্বেচ্ছায় আমার  দেহটা দিয়ে যাচ্ছি এবং আমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ  যেখানে যা দরকার হবে  সেইটাই এরা ব্যবহার করবে। মৃত্যুর পরেও যাতে মানুষের কল্যানে এই দেহটা কাজে লাগে সেই চিন্তা থেকেই দেহ দান।
সোসাইটি অফ অরগ্যান ট্র্যান্সপ্ল্যানটেশন বাংলাদেশের প্রধান কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হারুনুর রশিদ বলছেন, বাংলাদেশে মৃত ব্যক্তির শরীর  থেকে অঙ্গ  নেওয়া একেবারেই হয়না।  সেটি সম্ভব হলে কি হতো। একজন মৃত ব্যক্তি দুটো কিডনি, একটা লিভার, একটি হৃদপিন্ড, দুটো ফুসফুস, প্যানক্রিয়াস, ইন্টেস্টাইন দিতে পারেন।  সেক্ষেত্রে একজন মৃত ব্যক্তি অন্তত পাঁচজন অর্গান  ফেইলিওর হওয়া মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন। ক্যাডাভারিক ট্রান্সপ্লানটেশনের দিকে আমাদের  যেতেই হবে। কারণ  রোগী  তো অনেক  বেশি। তা না হলে অর্গান আমরা পাবো না। আমাদের সামনে অনেক দূর  যেতে হবে।
কোন কোন ক্ষেত্রে আত্মীয় স্বজন থেকে কিছু কিছু অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পাওয়া গেলেও তা সংখ্যায় খুবই কম। এর বাইরে এসব অঙ্গ সংগ্রহ করা খুবই ব্যয় বহুল। বেশির ভাগ মানুষের ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয়না। এজন দেশে অঙ্গ প্রতঙ্গ দান করার একটা সহজাত সংস্কৃতি তৈরি হতে হবে।
সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি বলছে ১৯৮৪ সালে তাদের চক্ষু সংগ্রহের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে  ৩৬ হাজার ব্যক্তির অঙ্গীকার পেয়েছেন।

সংস্থাটির সাধারণ সম্পাদক ডা:  মোহাম্মদ জয়নাল আবেদিন অবশ্য বলছেন অঙ্গীকার দাতাদের মৃত্যুর পর তাদের আত্মীয়রা প্রায়ই তাদের  কোনো খবর  দেন না। মৃত ব্যক্তিদের নিয়ে আত্মীয়দের আবেগও তাদের জন্য একটি বড় বাধা।

একটা মানুষ মারা যাওয়ার পর আমরা যখন  শোকাতুর পরিবারে কর্নিয়া গ্রহণ করার জন্য যাই তখন ওখানে আরো  যে মানুষগুলো আছে তাদের অন্যভাবে  মোটিভেট করে  যে আমরা এরকম সময় এই কাজটা  কেন করি। কিন্তু আসলে এখানে  শোকের ঊর্ধ্বে উঠে বৃহত্তর মানবতার কথা আমাদের ভাবা উচিত। কারণ এই মৃত ব্যক্তির কর্ণিয়ায় অন্য একজন পৃথিবীর আলো দেখবে। এজন্য ইতিবাচক মনোভাব প্রয়োজন।
বাংলাদেশে  অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের আইনি জটিলতাও রয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী, মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, সম্প্রতি বাংলাদেশে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দান সহজ এবং এ সম্পর্কিত অবৈধ কর্মকান্ড প্রতিরোধে একটি আইন সংশোধনের  চেষ্টা করছে সরকার।
সেটি সংসদে গৃহীত হলে রক্তের সম্পর্ক রয়েছে এমন অনেক  বেশি সংখ্যক নিকটাত্মীয়র কাছ  থেকে অঙ্গ  নেয়া যাবে। মৃত ব্যক্তির অঙ্গ সংগ্রহও আগের  থেকে সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।  
এছাড়া আইনে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অবৈধ  বেচা- কেনার ব্যবসা বন্ধের উদ্যোগও  নেয়া হয়েছে।


 



Comments

Place for Advertizement
Add