Contact For add

Tue, Dec 26 2017 - 11:44:28 AM +06 প্রচ্ছদ >> খেলাধুলা

On the night of marriage, small in Dhakaবিয়ের রাতেই ঢাকায় ছুটল ছোটন

বিয়ের রাতেই ঢাকায় ছুটল ছোটন

হলি টাইমস রিপোর্ট:

ছেলেরাই খেলতে পারে না, আর মেয়েরা খেলবে ফুটবল!’ কত টিপ্পনী, কত কটূক্তি ঘুরেছে চারপাশে। বাজে কথাগুলো না শোনার ভান করেই মাথা নিচু করে ছেড়েছেন বন্ধুদের আড্ডা। মহিলা ফুটবল দলের কোচ বলেই শুরুর দিকে এসব বাজে কথা নীরবে মানতে হয়েছিল কোচ গোলাম রব্বানিকে। কিন্তু এখন তাঁর চারপাশের পরিবেশটা বদলে গিয়ে বইছে প্রশান্তির হাওয়া।

টাঙ্গাইলের এই স্বপ্নদ্রষ্টার হাত ধরেই অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতল বাংলাদেশ। তা-ও আবার কোনো গোল হজম না করে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। ভাবা যায়! দেশের নারী ফুটবলের বদলে যাওয়ার অগ্রযাত্রার কান্ডারি তিনি। সাম্প্রতিক সময়ের সব সাফল্যই এসেছে তাঁর হাত ধরে। বছরের শুরুতে সিনিয়র সাফ ফুটবলে প্রথমবারের মতো ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল বাংলাদেশ। ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে হেরে গেলেও অর্জনের পাল্লা তো আর কম নয়। এ ছাড়া গত বছরের কথাও এত তাড়াতাড়ি ভুলে যাওয়ার নয়।

রব্বানির হাত ধরে ২০১৬ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলেও অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশের কিশোরীরা। বাছাইপর্বের আগে টানা তিন টুর্নামেন্টে (নেপালে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ রিজওনাল, তাজিকিস্তানে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪, ঢাকায় এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ বাছাইপর্ব) চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। ডাগ আউটে নিজেকে প্রমাণ করেই নিন্দুকদের জুতসই জবাব দিয়েছেন ‘মেয়েদের কোচ’ বলে খ্যাত ছোটন। এই সোনালি মুহূর্তে জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে তাঁকে। এমনকি নিজের বিয়ের ছুটিও নেননি।

২০১৪ সালের অক্টোবরে ঘরের মাঠে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ বাছাইপর্ব অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে হুট করেই জামালপুরে মেয়ে দেখতে যাওয়া এবং পছন্দ হয়ে যাওয়ায় বিয়ে। কিন্তু ছোটনের তো মন পড়ে আছে ঢাকায় তাঁর দলের কাছে। তাই কোনো রকম বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরেই বাসর না করেই ঢাকায় ছুট। সে গল্পটা ছোটনের মুখ থেকেই শুনুন,‌ ‘জামালপুরে মেয়ে দেখতে গিয়েই পছন্দ এবং বিয়ে। কিন্তু সকালের অনুশীলনটা যেন মিস না হয়, তাই সে রাতেই ঢাকা চলে আসি।’ বাফুফে ভবনের তিনতলায় বসে প্রায় তিন বছর আগের একটা দিনের কথা বলতে গিয়ে চোখ চিক চিক করে ওঠে ছোটনের।

বিয়ের পরই দলের টানে ঢাকা ছুটেছেন কোচ ছোটন। সংগৃহীত ছবিঅনেক পরিশ্রম করেও ইরানের কাছে হেরে সেবার গ্রুপ পর্ব উতরাতে পারেনি বাংলাদেশ। কিন্তু কৃষ্ণা, সানজিদাদের ঘিরে মেয়েদের ফুটবলে নতুন সূর্যোদয়ের দেখা মিলেছিল সে আসরেই। তিন বছরের ব্যবধানে সেই সূর্যের দ্যুতি অনেকটাই প্রখর। বাংলাদেশের মেয়েরা ডিফেন্ড করার সময় এখন শক্তিশালী প্রতিপক্ষের ওপরে প্রেসিং করে। আবার আক্রমণে গিয়ে মাঝখানে দু-তিনটি ছোট পাস করে উইংয়ে লম্বা থ্রু খেলে। আধুনিক ফুটবলে যেমনটা হয় আর কী।

ছোটন নিজে ছিলেন ডিফেন্ডার। ১৯৮৮ থেকে ২০০২ পর্যন্ত খেলেছেন আরামবাগ, ফকিরাপুল, ওয়ারী ও বিআরটিসির হয়ে। অধিনায়কত্বও করেছেন প্রতিটি দলে। খেলোয়াড়ি জীবনেই কোচিং শুরু। ২০০৭ সালে প্রথমবারের মতো জাতীয় পুরুষ ফুটবল দলের সহকারী কোচ হিসেবে নিয়োগ পান। ২০০৯ সালে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় নারী ফুটবলের দায়িত্ব। নারী ফুটবলের তখন সবে হাঁটা হাঁটি পা পা। কিন্তু ওই দায়িত্বটাকেই জেদ হিসেবে নিয়েছিলেন তিনি। বাকিটা রূপকথার মতো।

কোচ হিসেবে ছোটনের সাফল্যের পেছনে আছেন দুজন বিদেশি ইনস্ট্রাক্টর। ২০১০-এ তাঁকে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয় মহিলা ফুটবলের কোচিং কোর্সে। সেখানে জার্মান বিল্ডা উইলসন ও অস্ট্রেলিয়ান কেস্টার তাঁকে ছেলে ও মেয়েদের কোচিংয়ের ফারাকটা বুঝিয়ে দেন। ‘তাঁরা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, মেয়েদের মানসিকতা ভিন্ন। সুতরাং তাদের ছেলেদের মতো অনুশীলন করানো যাবে না।’ খবর: প্রথম আলো

ওই কোর্স থেকে ফিরেই ‘রগচটা’ ছোটন হয়ে ওঠেন শান্ত বাবার মতো। কৃষ্ণা, সানজিদারা ভুল করলে কখনো বকা দেওয়া, আবার ভালো করলে পিঠ চাপড়ে দেওয়া। মাঠেও যেমন তাঁর জীবনে সুবাতাস, ঠিক মাঠের বাইরেও চলছে প্রশান্তি। বিয়ের দিন সময় দিতে পারেননি বলে মনে মনে অভিমান করেছিলেন যে নববিবাহিতা স্ত্রী, তিনিও এখন কোচ স্বামীকে অনুশীলনে যাওয়ার জন্য সকালে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন।

বন্ধুরা, যারা মেয়েদের কোচ বলে টিপ্পনী কাটত?

‘ওরা তো অনেকে অভিনন্দন জানাতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছে!’ কোচের মুখে গর্বের হাসি। এ হাসিটা অমলিন থাকুক আরও দীর্ঘদিন, ভালো থাকুক মেয়েদের ফুটবল নিয়ে স্বপ্ন দেখা, স্বপ্ন দেখতে শেখানো এই মানুষটা!



Comments

Place for Advertizement
Add