Contact For add

Mon, Feb 19 2018 - 11:54:32 AM +06 প্রচ্ছদ >> আন্তর্জাতিক

Signs of the Revival of the Ottoman Empire in Erdogan's Recent Activityএরদোগানের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে অটোমান সাম্রাজ্যের পুনর্জাগরণের লক্ষণ

এরদোগানের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে অটোমান সাম্রাজ্যের পুনর্জাগরণের লক্ষণ

আঙ্কারা: মধ্যপ্রাচ্যের তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রেসিপ তাইয়িপ এরদোগান মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশে এখন দারুণ জনপ্রিয়। জনপ্রিয়তা অর্জনের সাথে তাল রেখে এরদোগান তুরস্কের বাইরে বিভিন্ন দেশে তার সেনাবাহিনীর ঘাঁটি সংখ্যায় ও আকারে নজিরবিহীনভাবে বাড়িয়ে চলেছেন।

কাতারের দোহায় গাড়ির পেছনে লাগানো স্টিকারে তাইয়িপ’র ছবি দেখা যায়। সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসুতেও তার বিশাল বিশাল পোস্টার লাগানো রয়েছে।

আরব সাগরে তার দেশের যুদ্ধজাহাজ রয়েছে, আবার পারস্য উপসাগরের তীরে রয়েছে তাদের ট্যাঙ্ক।

 

বর্তমানে কাতার ও সোমালিয়ায় তার সেনাবাহিনী মোতায়েন করা আছে। আবার ইয়েমেন ও সোমালিয়ার মধ্যবর্তী গাল্‌ফ অব এডেনে তুরস্কের নৌবাহিনীর জলযান টহল দিচ্ছে।

সম্প্রতি, সুদান ও জিবুতির দেয়া বিভিন্ন বক্তব্যে ধারণা করা হচ্ছে, সেসব দেশও তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা থেকে পাঠানো সেনাদের স্বাগত জানাতে পারে।

তুরস্ক বার বার জোর দিয়ে বলেছে, তারা শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যেই এভাবে শক্তি বৃদ্ধি করছে। তুরস্কের পূর্ববর্তী অটোমান সাম্রাজ্য যখন মধ্যপ্রাচ্যের বিশাল এলাকা নিয়ন্ত্রণ করত, তখন তারা এভাবে বিভিন্ন অঞ্চলে সৈন্য মোতায়েন করত এবং আবারও ওই অবস্থার পুনরাবৃত্তি অনেকেরই কাম্য নয়।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আনোয়ার গারগাশ গত বছরের শেষে একটি টুইটে বলেন, আরব বিশ্ব তেহরান ও আঙ্কারার নেতৃত্বে চলবে না। আগে তিনি ইরান ও তুরস্ককে ‘ওই অঞ্চলকে ঘিরে ফেলার উচ্চাকাঙ্ক্ষা’ পোষণ করছে বলে সতর্ক করে দেন।

কেউ কেউ মনে করেন, তুরস্ক এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে ‘নব্য-অটোমান’ সাম্রাজ্য প্রবর্তন করতে চাইছে।

তবে অন্যরা মনে করেন, এসব দেশে সেনা মোতায়েনের মাধ্যমে তুরস্ক উপসাগরীয় অঞ্চল ও আফ্রিকায় তাদের বহুল কাঙ্ক্ষিত বাজার প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। কিন্তু, অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যে তাদের শক্তির প্রসার বিভিন্ন আঞ্চলিক বিভেদ ও বৈশ্বিক পরিবর্তনের সঙ্গে সমান্তরালে এগিয়ে চলছে।

ইস্তাম্বুলের সেন্টার ফোর পাবলিক পলিসি ও ডেমোক্রেসি স্টাডিজ এর পরিচালক আয়বার্স গর্গুলি বলেন, বর্তমানের বিশ্ব নতুন। এই পরিবেশে আরও সক্রিয় হয়ে নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে তুরস্ক নিজস্ব উদ্যোগ গ্রহণ করছে।

সম্প্রতি আঙ্কারার বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে তুরস্কের উদ্দেশ্য নিয়ে বিভিন্ন দেশের সরকার উৎকণ্ঠিত হয়ে উঠেছে।

প্রথমবার সংকট তৈরি হয় ২০১৭ সালের জুনে। তখন সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিশর তাদের গালফ কোঅপারেশন কাউন্সিলের অংশীদার কাতারের উপর অবরোধ জারি করলে তুরস্ক কাতারের সমর্থনে এগিয়ে আসে।

তুরস্কের সংসদের ত্বরিত সিদ্ধান্তে কাতারের রাজধানীর দক্ষিণে তারিক বিন যায়েদ সেনা ঘাঁটিতে তিন হাজার সেনার একটি বাহিনী মোতায়েনের কাজ শুরু করে তুরস্ক। সেখানে নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর সেনা দল থাকবে।

একইসঙ্গে, আরব উপদ্বীপের পশ্চিমে সোমালিয়ায় ৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে করে নির্মিত ক্যাম্পে তুরস্কের ২০০ সেনা অবস্থান করছে। সেখানে তারা সোমালিয়ার প্রায় ১০ হাজার সেনাকে বিদ্রোহী আল-শাবাব দলের বিরুদ্ধে লড়তে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।

আরও দক্ষিনে, ঠিক লোহিত সাগরের প্রবেশপথে অবস্থিত দেশ জিবুতি। গত ডিসেম্বরে তুরস্কে নিযুক্ত জিবুতির রাষ্ট্রদূত আদেন আব্দিল্লাহি বলেন, তার দেশে ‘তুরস্কের সামরিক ঘাঁটি গড়ে তোলার সম্ভাব্য উদ্যোগকে তারা স্বাগত জানাবে।’ সেখানে ইতোমধ্যেই তুরস্কের নৌবাহিনীর ঘাঁটি স্থাপন করে জলদস্যু দমনের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন এবং জাপানের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।

ওই মাসেই এরদোগান সুদান সফরকালে কাতারের অর্থায়নে সুয়াকিন দ্বীপে একটি বন্দর নির্মাণের বিষয়ে একটি চুক্তি সম্পাদন করেন। সুয়াকিন অটোমান শাসনামলের একটি নৌঘাঁটি।

সুদানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইব্রাহিম ঘান্দুর ওই সময় সাংবাদিকদের বলেন, দেশ দু’টি ‘বেসামরিক ও সামরিক জলযান চলাচলের ব্যবস্থা করতে একটি বন্দর নির্মাণে’ সম্মত হয়েছে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট পরে সামরিক কারণে ওই দ্বীপের বিষয়ে আগ্রহ থাকার কথা অস্বীকার করেন। কিন্তু, দেশ দু’টি কয়েকটি সামরিক ও বেসামরিক সহায়তা চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন।

প্রেসিডেন্ট এরদোগানের বক্তব্যে আশ্বস্ত হতে পারেনি কায়রো, রিয়াদ, আবুধাবি ও বাহরাইন।

ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখে তুরস্কের এই নেতা জানান, ‘অটোমান সাম্রাজ্যের ধারাবাহিকতায় বর্তমান তুরস্কের’ উদ্ভব এবং সেখানকার সীমানা ও সরকারের ধরন পরিবর্তিত হলেও, এর ‘প্রকৃতি, আত্মা এমনকি প্রতিষ্ঠানও একইরকম রয়েছে।’

তবু অটোমানদের প্রত্যাবর্তন নিয়ে এতসব কথার কথা হলেও এসব পদক্ষেপের পেছনে বাস্তব চিন্তা-ভাবনা থাকতে পারে।

ব্রুকিংস দোহা সেন্টারের ভিজিটিং ফেলো নোহা আবুয়েলদেহাব বলেন, ‘আমি নিশ্চিত তুরস্ক কাতারের সংকটকে একটি সুযোগ হিসেবে দেখছে। কাতারের সঙ্গে তুরস্কের বিভিন্ন ব্যবসায়িক চুক্তি দেখে আমাদের একথাই মনে হয়েছে।’

২০১৮ সালের শেষ দিকে তুরস্ক প্রায় ১৯ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের সম্মত হয়। ২০১৭ সালে দেশটি তারা সেখানে ১৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছিল।

একইসঙ্গে, অবরোধের ফলে কাতার আর আগের মতো সৌদি আরব থেকে বিভিন্ন জিনিস আমদানি করতে পারছে না। এই শূন্যস্থান পূরণ করতে দ্রুত এগিয়ে আসে তুরস্কের কোম্পানিগুলো।

দোহার সুপারমার্কেটগুলো এখন তুরস্কের পণ্যে ভর্তি। কাতার তাদের দেশের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির আওতায় ভবন নির্মাণের কাজগুলো কৃতজ্ঞতার সঙ্গে তুরস্কের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছে।

অন্যদিকে, তুরস্কের সঙ্গে সোমালিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অনেকদিনের। তুরস্ক সেখানে ব্যাপক মানবিক সহায়তাসহ দেশটির মৌলিক অবকাঠামো তৈরিতে বিনিয়োগ করেছে।

গর্গুলু বলেন, তুরস্ক সোমালিয়াকে ‘ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ’ হিসেবে দেখে। তাদের মধ্যে বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। সেখানে সক্ষমতা তৈরি সহায়তা প্রদানে তুরস্কের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেখানে সেনাবাহিনীর উপস্থিতিটা প্রতীকী।

সোমালিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন আফ্রিকায় তুরস্কের প্রসারিত কৌশলের ফলাফল। ২০০৭-০৮ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে ধস নামার পর দেশটি তাদের পণ্যের জন্য নতুন বাজার খুঁজছিল। তুরস্কের পণ্যের প্রধান বৈদেশিক বাজার ইউরোপের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের টানাপোড়েনও এতে ভূমিকা রেখেছে।

গর্গুলু মনে করেন, সুদান ও জিবুতিতে তুরস্ক সেনা মোতায়েন করলেও মূলত প্রতীকীই হবে। তিনি বলেন, ‘তুরস্ক তেমন ধনী দেশ নয় এবং তারা ইতোমধ্যেই সিরিয়ায় যুদ্ধ করছে। একারণে, বিদেশে আরও সেনা পাঠানোর বিষয়ে তাদের আগ্রহ থাকার কথা নয়।’

এসব সত্ত্বেও আরব বিশ্বের অন্যান্য দেশ সন্দেহমুক্ত হতে পারছে না। সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মদিনা অবরোধকালে বিশ্বাসঘাতকতা ও গণহত্যার অভিযোগে টুইটারে বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। এ থেকেই বুঝা যায়, অটোমান সাম্রাজ্যের অতীত কতটা স্পর্শকাতর বিষয়।

অটোমান সেনারা সৌদি আরবের শহরটিতে লুটতরাজ চালিয়েছিল ও শহরের বাসিন্দাদের অপহরণ করেছিল এমন একটি পোস্ট সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান রিটুইট করার পর এই বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। নাহিয়ান টুইটারে লেখেন, ‘এরাই এরদোগানের পূর্বসূরি।’

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট পাল্টা জবাবে বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ‘পেট্রোল আর টাকার কারণে বখে গেছেন।’

তাদের বিরোধ এখনও চলছে। সম্প্রতি আঙ্কারার শহর কর্তৃপক্ষ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দূতাবাসের রাস্তার নাম পাল্টে ১৯১৬-১৯১৯ সালের বিতর্কিত মদিনা অবরোধের দায়িত্বে থাকা অটোমান কমান্ডারের নামে রাখে।

 



Comments