Contact For add

Mon, Feb 19 2018 - 1:58:30 PM +06 প্রচ্ছদ >> শিল্প সাহিত্য

Vashantarভাষান্তর : মাহবুবা হোসাইন

ভাষান্তর  : মাহবুবা হোসাইন

 

 

- বলতো পাকিস্তানে এই ডিশটাকে কি বলে? 

গার্লিক ক্রিম, চিকেন, ডাল, আর পনির দেয়া একটা ডিশের দিকে ফারাজের দৃষ্টি আকর্ষন করে বিগ্রেডিয়ার হালিম কথাটা বললেন। তিনি সব কথার সাথে পাকিস্তানের রেফারেন্স দিতে পছন্দ করেন।

 

ফারাজ মনোযোগ তখন ম্যাসেঞ্জারের টুংটাং শব্দটার দিকে তাই জ্যাঠুর কথাটা ঠিক বুঝতে পারল না।

ম্যাসেজটা পড়ে ফারাজ মুচকি হেসে জ্যাঠুর দিকে তাকাল, তখনও সে ম্যাসেজ থেকে বের হয়ে আসেনি।

 

 ফারাজের মোবাইলে সুন্দরী এক কিশোরীর ছবি। ছবিটা ব্রিগেঃ হালিমের দৃষ্টি কেড়ে নিল। অনেকদিন আগের একজন সুন্দরীর সাথে যেন হুবহু মিল। রেহনুমা। সেই চোখ সেই মুখ সেই ভঙ্গিমা। আড় চোখে ছবিটা আরেকবার দেখেই চোখ সরিয়ে নিলেন  হালিম। বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকা শোভন নয়।

- হ্যাঁ কি বলছিলে জ্যাঠু?

মোবাইল থেকে চোখ ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করল ফারাজ।

- হ্যাঁ বলছিলাম এই ডিশটাকে পাকিস্তানে কি বলে?

ফুড ম্যানুর একটা ছবিতে আঙ্গুল রেখে হালিম আবারও জিজ্ঞেস করলেন।

- আমি কি করে জানব জ্যাঠু? আমি তো আর পাকিস্তানে থাকিনি? আর তুমি সব কিছুতে পাকিস্তানকে টেনে আন কেন? জাননা ওরা আমাদের দুষমন?

স্পর্শকাতর এই বিষয়টা এড়িয়ে গেলেন হালিম। পাকিস্তানকে কেন বারবার টেনে আনেন তিনি? নিজেও কি জানেন কেন? হয়তো?

যৌবনের একটা সুন্দর সময় কেটেছে করাচীতে। কি করেই বা ভুলেন তিনি সেই ঘূর্নী তোলা দিনগুলিকে? সত্ত্বার কোথায় একটা সূক্ষ কাঁটার মত বিঁধে আছে না সেই দিনগুলো? হয়তো তাই!

পাকিস্তান আর্মির ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে লেফটেন্যান্ট হয়ে ঢুকেছিলেন, বাংলাদেশ আর্মির বিগ্রেডিয়ার হয়ে রিটায়ার করেছেন। তাওতো কয়েক বৎসর হয়ে গেল। বয়স হয়েছে। এখন কেবল পিছন ফিরতে ইচ্ছে করে। হবে নাই বা কেন? তার জীবনের সোনালী দিন তো ওগুলোই। আর রেহনুমা! তার হৃদয়ে এখনও কষ্টের ছবি আঁকা।

 

মনে হয় সেদিনের ঘটনা। মেস পার্টিতে অন্যান্য সুন্দরীদের মাঝে অসামান্য যে মেয়েটি সাদা ড্রেসে উজ্জ্বল এক তারকা হয়ে ঘুরছে, হাসছে, ফূর্তিতে উত্তর ছুড়ে দিচ্ছে, সবার চোখ সেদিকে। রেহনুমা।  ইয়াং অফিসারগুলো তার সাথে কথা বলতে পেরে বর্তে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে হালিমও একজন। সে দূর থেকে দেখছিল রেহনুমাকে। ডিনারের আগে লক্ষ্য করল ঢোকার মুখটাতে দাঁড়িয়ে রেহনুমা বাবা মায়ের সাথে কথা বলছে। ও যেন একটু অসন্তুষ্ট। হালিম সাহস করে এগিয়ে গেল। বুঝতে পারল রেহনুমার বাবা কর্নেল অলির প্রেসিডেন্টের সাথে আরেকটা প্রোগ্রাম আছে তাকে যেতে হবে কিন্তু রেহনুমা যেতে চায়না। অনুষ্ঠান মাত্র শুরু হয়েছে আরো কত আনন্দ বাকি। হালিম আরেকটু এগুলো। কর্নেল অলি হালিমকে চেনে। হালিমের ইন্সট্রাক্টর ছিলেন এক সময়। সোর্ড অব অনার পাওয়া হালিমকে খুব স্নেহ করতেন।

হালিম এগিয়ে গিয়ে বলল

- ক্যান আই ড্রপ হার স্যার?

- অম্....বাট বাট।

কি যেন চিন্তা করলেন কর্নেল। তারপর বললেন

- ওকে বয়। বাট নট আফটার টুয়েল্ভ। আই ডোন্ট লাইক টু সেটার্ড মাই বিলাভড স্লিপ। ওকে?

বলে দুপা পরপর ফেলে নিজের রসিকতায় নিজেই হাহা করে হাসলেন। হালিম, মিসেস কর্নেল, রেহনুমাও সেই হাসিতে যোগ দিল। হাসির মধ্য দিয়ে একটা পারিবারিক সম্পর্ক তৈরী হয়ে গেল যেন। কর্নেল অলি হাসতে হাসতে জোড়েজোড়ে হ্যান্ডসেক করে মিসেসসহ বিদায় নিলেন।

 

এভাবে রেনুমার সাথে পরিচয়। তারপর কতটা সময় কেঁটেছে ক্লিফটন বীচে, বিন কাসেম পার্কে তার খবর কে রাখ?

 

ঊনশত্তুর সাল। পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের সম্পর্ক ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। পরিস্থিতিটা পশ্চিম পাকিস্তানে ততটা বুঝা না গেলেও আর্মি অফিসারদের মধ্যে একটা হিসহিস ফিসফিস চলছেই বিশেষ করে বাংগালী আর্মি অফিসারদের মধ্যে।দেশের এই দুর্যোগে দেশের প্রতি টান তাদেরকে ভিতরে ভিতরে অস্থির করে তুলছে। দেশের পাশে দাঁড়ান এখন তাদের কর্তব্য। হলিমও ভিতরে ভিতরে তা অনুভব করে।

 

একদিকে রেহনুমা অন্যদিকে দেশ। হালিম দুটানায় পরে যায়। ঠিক এই সময় সে বদলি হয়ে যায় ঢাকায়। তাকে চলে যেতেই হবে। কিন্তু রেহনুমা? রেহনুকে বিয়ে করতে চায় সে। রেহনুমার বাবা মাও রাজি কিন্তু বাঁধা একটাই হালিমের শর্ত রেহনুমাকে পূর্ব পাকিস্তানে যেতে হবে এবং বাংলা শিখতে হবে। 

হালিম বাংলা অন্ত প্রান। রবীন্দ্রসংগীত তার জীবনীশক্তি আত্মার মুক্তি। বাংলা সাহিত্য তার ভালবাসার ধন। সে ভাবতে পারে না গল্পগুচ্ছ ছাড়া মানুষ বাঁচে কি করে?  সকালে উঠেই স্টেরিওতে বাঁজতে থাকে ভালবাসি ভালবাসি এই জলে স্থলে.......। রাতে ঘুম পাড়ায় জীবনান্দ দাশ।

কিন্তু রেহনুমা রাজি নয়। ও বলে

- তুম্ বাদলী ক্যান্সেল করদো। ম্যারি পিতাজিকে সাথ প্রেসিডেন্ট আইউব খান কি বহু জিয়াদা খাতির হ্যায়। তুম চহ্তো মেরা পিতাজি কার সাথে গা।

- বাট একদিন তো হামারা দেশ মে যানা পারেগা। আভি জীবনভর ওহা তো নেহি রেহেঙ্গে?

 

এক দেশ হলেও হালিম কোন দিনই পশ্চিম পাকিস্তানকে নিজ দেশ ভাবতে পারেনি। তেমনি পারেনি রেহনুমা পূর্ব পাকিস্তানকে। রেহনুমা বলে

- আচ্ছা বাদমে দেখা যায়েগা। আভি নেহি।

 

কিন্তু আর্মিতে আসন্ন যুদ্ধের একটা আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। হালিম বুঝতে পারছিল এখনই নিজেকে গুটিয়ে নেয়ার সময়। যুদ্ধ যদি লাগেই দেশের জন্যই যুদ্ধ করবে। এই বদলীটা একটা চান্স। রেহনুমাকে সে অনেক বুঝাল কিন্তু রেহনুমা বুঝতে চাইলনা কিছুই। অগত্যা হালিম একদিন পি আই এর এক ফ্লাইটে উঠে বসল। পিছনে ফেলে এলো রেহনুমার আকুতি, বুক ভাঙা কান্না, দীর্ঘ অপেক্ষা, বিলম্বিত কুমারিত্ব। 

দেশের জন্য হালিম নিজ হাতে হত্যা করল তার ভালবাসাকে।

 

তারপর কত ঘটনাই না ঘটে গেল। মুক্তিযুদ্ধ। যুদ্ধ যুদ্ধ। তৃতীয় ইস্ট ব্যাঙ্গল রেজিমেন্টে হয়ে জেড ফোর্সে এগার নং সেক্টরে যুদ্ধ। তারপর স্বাধীনতা। কত ত্যাগ।

 

যুদ্ধের পর ছোট ভাইকে নিয়ে এল নিজের কাছে। ফারাজ ও তার ভাই বোনেরা এখানেই জন্মাল। এই তো সেদিন ফারাজের জন্ম হল। এখন সে পঁচিশ বৎসরের যুবক। অকৃতদার পয়ষট্টি বৎসরের জ্যাঠু ফারাজের কাছে বাবার চেয়ে বেশী। অল্প বয়সে বাবা মারা গেলে তিনিই তো তাদের মানুষ করেছেন। তারই মানস সন্তান ওরা। তিনি কখনও তাদের সাথে মানসিক দূরত্ব সৃষ্টি করেননি তাই ফারজ সব কথাই তার সাথে শেয়ার করে,

- জ্যাঠু তোমাকে এখানে লাঞ্চে কেন ডেকেছি জিজ্ঞেস করলে না?

- কি করে বলব কেন? তোদের মতিগতির কোন ঠিক আছে?

- তোমাকে আজকে একটা সিরিয়াস কথা বলব।

- সত্যি?

- হ্যাঁ

- বল তাহলে।

- দাঁড়াও আগে অর্ডার দিয়ে নি?

- না আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দে।

- কোন প্রশ্ন জ্যাঠু?

বিগ্রঃ হালিম তার প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করলেন।

ফারাজ কিছুক্ষন চিন্তা করে বলল

- পারলাম না।

- এটাকে বলে রেশমী হান্ডি। এই যে গোল ছোট মুখ পেট ফাঁপা ডেকচির মধ্যে চিকেন, গার্লিক ক্রিম, বুটের ডাল আর বাটার দিয়ে রান্না করা হয়েছে এই ইটালয়ান ডিশটা,তাই এর নাম হয়েছে রেশমী হান্ডি। হান্ডি মানে পাতিল। পাতিলে রান্না রেশমী কাবাব আরকি। ইটালিয়ান ডিশের উর্দু সংস্করন। দেখ সংস্কৃতি কেমন করে পরকে নিজের করে নেয়। তাই না?

জ্যাঠু এমন করেই ছোট বেলা থেকে হাতে ধরে কত কিছুই শিখিয়েছেন তাদের। জ্যাঠুর দিকে তাকিয়ে ফারাজের কৃতজ্ঞতায় মন ভরে যায়।

- হুম, 

তার জীবনেও কি এমন একটা সাংস্কৃতিক মিশ্রন ঘটতে যাচ্ছ? কে জানে? ফারাজ মনে মনে ভাবে।

 

গুলশানের এই হোটেলটা ইটালিয়ান হোটেল। ফারাজের খুব পছন্দ। ওয়েটারকে ডেকে ফারাজ অর্ডার দিল একটা ভ্যাজি লাজানিয়া, ফ্রেশ হ্যান্ড মেইড পাসটা, নিয়াপলিটান পিজ্জা এবং টিরামিসু।তারপর ফিরল জ্যাঠুর দিকে। মোবাইলটা অন করল।

- দেখ তো এই মেয়েটাকে। কেমন?

ব্রিগেডিয়ার হালিম ফোনটা হাতে নিয়ে মনোযোগ দিয়ে দেখলেন। ঐ মেয়েটাই। ভিতরে ভিতরে যেন চমকে গেলেন খানিকটা। একদম রেহনুমা। সেই বয়স, সেই চেহারা, হাসির ভঙ্গিটাও এক।

ফোনটা ফারাজকে ফিরিয়ে দিয়ে বললেন

- খুব সুন্দর। কে মেয়েটা?

- এটা বলার জন্যই তো তোমাকে ডেকেছি।

- বল?

- এই মেয়েটাকে আমি ভালবাসি। ওর নাম আসমা। পাকিস্তানী। ফেইজবুকে পরিচয়। আমি ওকে বিয়ে করতে চাই।

- ও কি রাজি?

- হুম।

- কি করে হবে? ও কি আসবে বাংলাদেশে?

- জ্যাঠু আমি ওকে দুটো শর্ত দিয়েছি। এক বাংলাদেশে থাকতে হবে দুই বাংলা ভাষা শিখতে হবে।

তুমি আমাকে মানুষ করেছ। তোমার মত আমিও বাংলাদেশকে খুব ভালবাসি। চাই আমার সন্তানেরা বাংলা সংস্কৃতিতে বড় হোক। এই দেশটাকে ভালবাসুক।

- ও কি বলে?

- রাজি আছে।

- তবে আর কি? ওর ফেমিলির সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিস কথা বলব।

জ্যাঠুই দায়ীত্ব নিয়ে আসমার মায়ের সাথে কথা বলে সব ঠিক করলেন।

আসমার বাবা নেই। এক ভাই সেও আর্মিতে। এখনও কমিসন্ড হয়নি। ট্রেনিংএ আছে। ঠিক হল ফেব্রুয়ারির পনর তারিখ শুক্রবার বিয়ে হবে।

ফেব্রুয়ারি দুই তারিখ সকাল। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ব্রিগেডিয়ার হালিম, ফারাজ, ফারাজের মা রুবা, ছোট দুই বোন পমা ও তমা এবং এক ভাই রাফাত অপেক্ষা করছে ভিআইপি লাউঞ্জে। ওরা সবাই বেশ উত্তেজিত। ব্রিগ হালিম বার বার বোর্ডে ফ্লাইট স্ট্যাটাস চেক করে দেখছে ফ্লাইট ল্যান্ড করল কিনা। ফারাজের নাকের আগাটা যদিও লাল হয়ে আছে লজ্জ্বায়, মাঝে মাঝে জোড়ে শ্বাস নিয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করছে তবু ব্যক্তিত্বে গাম্ভীর্য এনে বসে থাকতে চেষ্টা করছে। ছোট বোন তমা চোখে কৌতুক নিয়ে বার বার ভাইয়াকে দেখছে কিন্তু সাথে জেঠু থাকায় ভাইয়াকে খোঁচাতে সাহস পাচ্ছে না। মা বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছেন। অল্প বয়সী মেয়ে দেখলেই প্রশ্নবোধক চোখে ফারাজের দিকে তাকাচ্ছে। এর মধ্যেই বার কয় হতাশ হয়েছেন। 

হঠাৎ স্ট্যাটাস বোর্ডে দেখা গেল পিকে২৬৬ ল্যান্ড করেছে। বেশ কিছুক্ষন পরে একজন সুন্দরী বয়স্ক মহিলা ও আরেকজন অল্প বয়সী সুন্দরী তরুনী ভি আইপি লাউঞ্জে ঢুকল। চিনতে পেরে সবাই উঠে দাঁড়াল। নিমেষে ফারাজের মুখ লাল হয়ে গেল সেই মুহূর্তেই চোখাচুখি হয়ে গেল আসমার সাথে।

 

 

 ব্রিগেডিয়ার হালিম কিছুক্ষন স্থানুবৎ দাঁড়িয়ে রইলেন তারপর এগিয়ে গেলেল বয়স্ক মহিলার দিকে। আনন্দে মহিলার হাত দুটি ধরে ঝাকানি দিয়ে বন্ধুর মত জড়িয়ে ধরে আন্তরিক অবাক গলায় বললেন

- রেহনুমা?

রেহনুমাও অবাক হয়ে গিয়েছিল। সামলে নিয়ে কৌতুক করে বলল

- আভি ভাগকে যাওগে কাহা পার?

হালিম হেসে মাথা নাড়ল মানে সত্যি পালাবার উপায় নেই। তারপর বললেন

- আচ্ছা তুম কাইছি হো?

রেহনুমা রহস্য করে বললেন

- ক্যাইছি রাহঙ্গি? তুমনে হাম তো আচ্ছা নেহি রাক্খা।

হালিম চোখ বড়বড় করে প্রশ্ন করে,

- ইয়াদ রাক্খা তুমনে হামকো? 

- হোয়াট ডু ইউ থিঙ্ক? ফরগট? হাউ ক্যান আই?

 

দুই বন্ধু যদিও হেসে হেসে কথাগুলো বলছিল

 ফারাজ ছাড়া কেউ তার অর্থ ধরতে পারছিল না। বিশেষ করে রুবা খুব অবাক হচ্ছিল। সে জনত হালিম প্রেম ঘটিত কোন জটিলতায় জীবনে বিয়ে করেনি কিন্তু সেই ঘটনা রহস্যেই আবৃত ছিল। হালিম কেনদিন খোলাসা করে কিছু বলেননি। কেউ তাকে জিজ্ঞেস করারও সাহস পায়নি। আজকে সবটাই যেন চোখের সামনে খুলে গেল। তাহলে এই? গভীর কৌতুহল নিয়ে রুবা রেহনুমাকে দেখতে লাগল। রুবার সাথে হালিম রেহনুমার পরিচয় করিয়ে দিলেন। গাড়ীতে দুই বন্ধু অনবরত কথা বলে চললেন।

 

পনরই ফেব্রুয়ারী ফারাজ আসমার বিয়ে হল মহা ধুমধামে। পাকিস্তান থেকে এক দঙ্গল আত্মীয় স্বজন এল পি আই এর ফ্লাইট ভরে। তাদের রাখা হল ঢাকা ক্লাবের রেস্ট হাউজে। এঙ্গেজমেন্ট গায়ে হলুদ কোনটাই বাদ গেলনা। বড়লোক জেঠু ততধিক বড়লোক রেহনুমা। কমতি থাকবে কেন? রাজরাজরার বিয়েকেও হার মানায় যেন। 

 

একুশে ফেব্রয়ারী রেহনুমার হাতে খড়ি অনুষ্ঠান। ঘরোয়া অনুষ্ঠান। ফারাজের ছোট ভাই রাফিত কোথা থেকে একটা স্লেট পেন্সিল যোগার করে এনেছে। ড্রয়িং রুমে সবাই আসমাকে ঘিরে বসেছে। বড় বড় করে ফারাজ স্লেটে লিখল ক খ গ ঘ। আসমা তার উপর দিয়ে হাত ঘুরাল কয়েকবার। ফারাজ মুছে দিল। আসমা ট্রাই করল। পারল না। আবার ফারাজ লিখে দিল। আসমা তারপরও পারল না। রেহনুমা ধীরে ধীরে উঠে এসে মেয়ের পাশে বসলেন। স্লেট আর পেন্সিলটা হাতে তুলে নিলেন। গোটা গোটা করে লিখলেন ক খ গ ঘ। তার নীচে লিখলেন ' বাংলাদেশ আমি তোমায় ভালবাসি।' সবাই আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে রইল সেই 'ভালবাসার' দিকে। তারপর মিলিত হাত তালিতে ঘর ভরিয়ে দিল।

 লেখিকা : মাহবুবা হোসাইন

 



Comments