Contact For add

Fri, Feb 23 2018 - 5:47:49 PM +06 প্রচ্ছদ >> আন্তর্জাতিক

403 killed in Syria attack in government forces in 5 days৫ দিনে সরকারি বাহিনীর হামলায় সিরিয়ায় নিহত ৪০৩

৫ দিনে সরকারি বাহিনীর হামলায় সিরিয়ায় নিহত ৪০৩

হলি টাইমস রিপোর্ট :

যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, সিরিয়ার বিদ্রোহী অধ্যুষিত পূর্বাঞ্চলীয় ঘৌটায় সরকারি বাহিনীর বিমান হামলায় চারশোর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাটি বলছ, রোববার থেকে শুরু হওয়া বিমান হামলায় পাঁচদিনে কমপক্ষে ৪০৩ জন নিহত হয়েছে। আল জাজিরা।

নিহতদের মধ্যে ১৫০ জনই শিশু। কয়েকদিন ধরে সিরীয় বাহিনীর এসব হামলায় আরও ২ হাজার ১২০ জন আহত হয়েছে। ২০১৩ সালের পর সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা চালানো হয়েছে পূর্বাঞ্চলীয় ঘৌটায়। কয়েকদিনে সেখানে দফায় দফায় বিমান হামলায় কয়েকশ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে ঘৌটায় সংঘাত বন্ধ করে জরুরি ভিত্তিতে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন সিরিয়ায় নিযুক্ত বিশেষ দূত স্টাফেন ডে মিসটুরা। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ঘৌটায় মানবাধিকার পরিস্থিতি আতঙ্কজনক অবস্থায় রয়েছে। পূর্বাঞ্চলীয় ঘৌটায় দু'পক্ষের ভারী বোমা হামলা এবং দামেস্কে মর্টার হামলা বন্ধ করতে আমাদের যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে যাওয়া প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, ওই অঞ্চলে যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে মানবিক সহায়তা পৌঁছানো এবং আহতদের দ্রুত সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। হতাহতদের জরুরি ভিত্তিতে সেবা দেয়া না গেলে এবং সেখানে আটকে থাকা বেসামরিক লোকজনের কাছে মানবিক সহায়তা না পৌঁছালে ওই অঞ্চলের অবস্থা আলেপ্পোর মতোই হয়ে যাবে বলে সতর্ক করেছেন স্টাফেন। পূর্বাঞ্চলীয় ঘৌটা থেকে যারা পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন তারা জানিয়েছেন, সেখানে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। লোকজনের আশ্রয় নেয়ার জন্য বা পালিয়ে থাকার মতো কোনো নিরাপদ জায়গাও নেই।

সেখানকার অনেক বাসিন্দাই বাড়ি-ঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। রোববার থেকে শুরু করে ঘৌটা শহরে কয়েক দফা বিমান হামলায় শুধুমাত্র বেসামরিক হতাহতের ঘটনাই ঘটেনি বরং বেসামরিকদের বেঁচে থাকার বিভিন্ন অবলম্বনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানকার বেশ কিছু বেকারি, গুমাদঘর হামলার শিকার হয়েছে। ফলে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বড় বড় রাস্তাও হামলার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে অ্যাম্বুলেন্স বা ত্রাণবাহী যানবহন চলাচলও বন্ধ হয়ে হয়ে গেছে।

হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বেশ কিছু চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রও হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সোমবার চারটি অস্থায়ী হাসপাতাল বন্ধ ছিল। এর মধ্যে একটি প্রসূতি মায়েদের চিকিৎসা প্রদানে কাজ করছিল।

রাফাত আল আবরাম নামের দাউমা এলাকার এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, তিনি গাড়ির মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু গত কয়েকদিনে সরকারি বাহিনীর বিমান হামলার কারণে তিনি কোনো কাজ করতে পারেননি। আল আবরাম যেখানে কাজ করতেন সেখানকার রাস্তা সিরীয় বাহিনীর দুইটি অভিযানে ধ্বংস হয়ে গেছে। আল জাজিরাকে তিনি বলেন, আমি কিছু যন্ত্রপাতি দিয়ে গাড়ি মেরামতের কাজ করতাম। মাঝে মাঝেই আমি অ্যাম্বুলেন্সও ঠিক করতাম। কিন্তু বোমা হামলার কারণে এখন কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে।

সেনাবাহিনী স্থলপথেও অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় বোমা হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। পূর্বাঞ্চলীয় ঘৌটা শহরে প্রায় ৪ লাখ মানুষ বাস করে। ২০১৩ সালে ওই অঞ্চল দখল করে নেয় বিদ্রোহীরা। রাজধানী দামেস্কের কাছে এটাই বিদ্রোহীদের শেষ ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

ওই এলাকার দখল নিতে চলতি মাসের শুরু থেকেই সেখানে অভিযান শুরু করেছে সিরীয় বাহিনী। সামনের মাসেই সিরীয় সংঘাতের সাত বছর পূর্ণ হবে। এই কয়েক বছরে সিরিয়ায় বিমান হামলায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। সংঘাতের কারণে দেশটি থেকে পালিয়েছে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। সেখানে কয়েক লাখ মানুষ মানবিক সঙ্কটে দিন কাটাচ্ছে।

খাদ্যের অভাবে সেখানে বহু মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। জাতিসংঘের এক হিসাব অনুযায়ী, পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ১১ দশমিক ৯ ভাগ শিশুই পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। চলতি মাসে নাসাবিয়েহ শহরে শুধুমাত্র একটি মানবিক সহায়তার গাড়ি বহরকে সেখানে প্রবেশ করতে দেয়া হয়েছে। কিন্তু ডিসেম্বর এবং জানুয়ারিতে সেখানে কোনো মানবিক সহায়তা পৌঁছায়নি।

পূর্বাঞ্চলীয় ঘৌটা জয়েশ আল-ইসলাম,আল-রহমান কোর এবং হায়াত তাহরির আল-শাম বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রাজধানী দামেস্কের কাছে এটাই একমাত্র বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকা। বিদ্রোহীরা মর্টার আক্রমণ চালিয়ে জবাব দেবার চেষ্টা করছে কিন্তু সরকারি বাহিনীর অস্ত্রের ক্ষমতা অনেক বেশি। বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সিরীয় বাহিনীকে সহায়তা করছে রুশ সেনাবাহিনী।



Comments