Mon, Oct 9 2017 - 11:51:45 AM +06

ঘুরে আসুন কাকদ্বীপ ভাল লাগবে.....


News Image

সাগরিকা মন্ডল, ঢাকা :

কুষ্টিয়া আগে দ্বীপাঞ্চল ছিলো। এখানে বহু গাছগাছালি ছিলো বিশেষ করে বাবলা গাছ। সেই সমস্ত গাছে বহু কাক বাস করত। তাই অনেক আগে কুষ্টিয়ার নাম ছিলো ' কাকদ্বীপ '। অনেকের মতে কুষ্টা (পাট) থেকে 'কুষ্টিয়া ' নামের উৎপত্তি। দেশ বিভাগের আগে বৃহত্তর কুষ্টিয়ার নাম 'নদীয়া ' ছিলো। প্রশাসনিক অসুবিধার কারনে তৎকালীন ডিষ্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট জনাব সৈয়দ মুর্তজা আলী ১৯৪৮ সালের প্রথম দিকে কুষ্টিয়া নামকরন করেন।

কুষ্টিয়া জেলার নামকরন সম্বন্ধে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন মনীষীগন ভিন্ন ভিন্ন মত দিয়ে গেছেন। মতগুলো সম্পুর্ন একটি ধারনা মাত্র। কেননা প্রাচীন যুগের সঙ্গে এ জেলার ইতিহাসের যোগসুত্রের কোন পাথুরে প্রমান পাওয়া যায় না। তবে কুষ্টিয়া সদর থানার ( বর্তমান হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের ) পুরাতন কুষ্টিয়া এবং অতি পুরাতন ম্যাপ থেকে পাওয়া যায় তখনকার পদ্মা নদীর অবস্থানের উত্তরে পুরাতন কুষ্টিয়া চতুর্দিকে নদী দ্বারা বেষ্টিত ছিলো। সম্রাট শাহ জাহানের আমলে এটাই কুষ্টিয়া শহর ছিলো। অনেকের মতে সৈয়দ মুর্তাজা আলীর ধারনা কুষ্টিয়াতে উন্নত জাতের পাটের ব্যাপক হারে চাষ হতো।

কুষ্টিয়াবাসী পাটকে অঞ্চলিক ভাষায় কোষ্টা বলতো। কুষ্টা থেকে কুস্টে তা থেকে কুষ্টিয়া নামের উৎপত্তি। কবি গোলাম মোস্তফার মতে ' দ্রাবিড় ' শব্দ থেকে কুষ্টিয়া নামটি এসেছে। কারো কারো মতে ফরাসী কুশতহ বা কোস্তা থেকে কুষ্টিয়া নামের উৎপত্তি। ১৯৪৮ সালের প্রথমদিকে কুষ্টিয়া নামকরন হয়। প্রশাসনিক অসুবিধার কারনে জেলা সদরের নামানুসারে নদীয়া নাম পাল্টিয়ে কুষ্টিয়া নামকরন করেন তৎকালীন ডি, এম ( জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) জনাব সৈয়দ মুর্তাজা আলী। ষোড়শ শতাব্দীর প্রথমার্ধে কুষ্টিয়ায় মোঘল শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। মোঘল আমলে কুষ্টিয়া সরকার ফতেহাবাদ ও সরকার ভুষনার অধীনে ছিলো।

১৭১৭ - ১৭৫৭ কুষ্টিয়া নবাব মুর্শিদ কুলী খান ও নবাব সিরাজ-উদ-দ্দৌলার শাসনাধীনে ছিলো। পলাশী যুদ্ধে নদীয়া রাজ বংশের পক্ষ অবলম্বন করেছিলো এবং আমঝুপি কুঠিতে ( পরে নীল কুঠি হয়) রবার্ট ক্লাইভের সাথে মীর জাফর ও অন্যান্য ষড়যন্ত্রকারীদের গোপন বৈঠক হয়েছিলো। ১৮৮৭ সালে নদীয়াতে সর্বোপ্রথম জেলা গঠিত হয়। নদীয়ার শেষ কালেক্টর ছিলেন আবু মহম্মদ নাসির উদ্দিন। ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলে ( ১৮২৩- ১৮২৮) মেহেরপুরের কিছু অংশ বাদে কুষ্টিয়া যশোহর জেলার অন্তর্গত ছিলো। ১৮২৮ সালের আগে কুষ্টিয়া মাত্র কয়েকদিনের জন্য রাজশাহী জেলার অন্তর্গত ছিলো।

১৮৫৭ সালে পাংশা, বালিয়াকান্দী, কুমারখালী ও খোকসা থানা নিয়ে কুমারখালী মহকুমা গঠিত হয়। কুমারখালী অঞ্চল পাবনা জেলার অধীনে ছিলো। তখন কুমারখালীতে মুন্সেফী আদালত ছিলো। ১৮৬৩ সালে কুষ্টিয়া থানা ও ১৮৭১ সালে কুমারখালী থানা কুষ্টিয়া মহকুমা হিসাবে নদীয়া জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়।

 

কুষ্টিয়া" জেলাকে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী বলা হয়ে থাকে। লালন শাহ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মীর মোশাররফ হোসেনের স্মৃতি বিজড়িত এই জেলা। কুষ্টিয়া জেলার ঐতিহাসিক ও দশনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১) শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ি। ২) ছেঁউড়িয়ায় বাউল সম্রাট লালন শাহের মাজার কমপ্লেক্স। ৩) হরিনারায়নপুরের মোগল স্থাপত্যের মসজিদ ও মীর মোশাররফ হোসেনের বাড়ি। ৪) ফুলবাড়ি গ্রামের প্রাচীণ মঠ ও মন্দির ৫) বাড়াদির টেরাকোটা মঠ। ৬) আমলা সদরপুরের জমিদারবাড়ি। ৭) হিজলাবটের নীলকুঠি। 8) কুষ্টিয়া পৌরসভা ভবন ইত্যাদি।

এই কুঠিবাড়ি ও পদ্মা বোটে বসে রচিত হয় রবীন্দ্রসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফসল সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালী, কথা ও কাহিনী, ক্ষণিকা, নৈবেদ্য ও খেয়ার অধিকাংশ কবিতা, পদ্মাপর্বের গল্প, নাটক, উপন্যাস, পত্রাবলী এবং গীতাঞ্জলি ও গীতিমাল্যের গান। এখানে বসেই কবি ১৯১২ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যের ইংরেজি অনুবাদ শুরু করেন, যা তাঁকে ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কারের সম্মান এনে দেয়। শিলাইদহ ও পদ্মার প্রতি রবীন্দ্রনাথের ছিল গভীর অনুরাগ, ছিন্নপত্রাবলীতে এর পরিচয় আছে। কবি একটি চিঠিতে লিখেছেন: ‘আমার যৌবন ও প্রৌঢ় বয়সের সাহিত্যরস-সাধনার তীর্থস্থান ছিল পদ্মা-প্রবাহচুম্বিত শিলাইদহ পল্লীতে।
শিলাইদহ কুঠিবাড়ি আম, কাঁঠাল ও অন্যান্য চিরসবুজ বৃক্ষের বাগান, একটি পুষ্পোদ্যান এবং দুটি পুকুরসহ প্রায় ১১ একর মনোরম এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।

 

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম লালন শাহ সেতু:
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেতু। হার্ডিঞ্জ ব্রীজের পাশে অবস্থিত।
ভেড়ামারা বা উত্তরবঙ্গ অভিমুখী বাসে হার্ডিঞ্জ ব্রীজে পৌছানে যায়। পৌছাতে সময় লাগে প্রায় ১ ঘন্টা।

হার্ডিঞ্জ ব্রীজ :
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রেল সেতু হার্ডিঞ্জ ব্রীজ কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় অবস্থিত। এই সেতুর নির্মানকাল ১৯০৯-১৯১৫। তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের নামানুষারে এমন নামকরন। এর দৈর্ঘ্য ১৭৯৮.৩২ মিটার বা ৫৯০০ ফুট। এর উপর দুটি ব্রড গেজ রেললাইন রয়েছে। হার্ডিঞ্জ ব্রীজ সেতুর একটি স্প্যান ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিমানের গোলায় ধ্বংস হয়ে যায়।
ভেড়ামারা বা উত্তরবঙ্গ অভিমুখী বাসে হার্ডিঞ্জ ব্রীজে পৌছানে যায়। পৌছাতে সময় লাগে প্রায় ১ ঘন্টা।

রেইনউইক বাঁধ :

রেইনউইক বাঁধ কুষ্টিয়া শহরের অভ্যন্তরে অবস্থিত। এটি গড়াই নদীর কবল থেকে শহর রক্ষা বাঁধ। রিক্সাযোগে যাওয়া যায়। সময় লাগে প্রায় ১০ মিনিট।
ডবলিউ বি রেনউইক নামে জনৈক স্কটিশ ভদ্রলোক রাজশাহী জেলার বাগাতী পাড়া থানার লক্ষণ হাটি নামক স্থানে ১৮৮১ সালে মেসার্স রেনউইক এন্ড কোম্পানী নামে ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানাটি প্রথম প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯১৪ সালে এই প্রতিষ্ঠানটি একটি লিমিটেড কোম্পানীতে রুপান্তরিত হয়। চিনি কলের যাবতীয় খুচরা যন্ত্রাংশ, কৃষিযন্ত্র, আখ মাড়াই কল ও তার যন্ত্রাংশ এই কারখানায় তৈরী করা হয়।

ব্যবসা বানিজ্যের প্রসার এবং তৈরী যন্ত্রের ব্যাপক ব্যবহারের উদ্দেশ্যে রেনউইক একই নামে কুষ্টিয়া জেলায় ১৯১৪ সালে আরো একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তখন থেকেই কুষ্টিয়ার এই কারকানাকেই তাঁর কোম্পানীর প্রধান অফিস এবং রাজশাহীর লক্ষণহাটি অফিসকে এর শাখা অফিস হিসাবে গন্য করা হয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটিকে জাতীয়করণ করা হয় এবং জাহাজ নির্মাণ সংস্থার অধীনে ন্যস্ত করা হয়। ১৯৭৩ সালে কারখানাটি বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থাধীনে নেয়া হয়।

এই মিলের উত্তর দিক সংলগ্ন গড়াই নদী। নদীর তীরবর্তী বাঁধ এবং এর সঙ্গেই মিলে পতিত জমিতে লাগনো মনোরম বৃক্ষ শোভিত স্থানটি কুষ্টিয়ার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী এখানে আসেন। নদীর তীরে এই স্থানটি শহরের মানুষের কাছে অবসর বিনোদনের জন্য জনপ্রিয়।

এই স্থানটির একটি বিশেষত্ব এখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুইই দেখা যায়। এই দুই সময়েই এখানে লোক সমাগম বেশি হয়। বর্তমানে বাঁধের পশ্চিমে নদীর বাঁকে বাঁধটি বর্ধিত করা হয়েছে। আরো বেশি সৌন্দর্য বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে। এই বাঁধটি রেনউইক বাঁধ নামে পরিচিত ।সর্বশেষে বলা যায় সুন্দর একটি জায়গা।