Wed, Nov 22 2017 - 3:34:13 PM +06

কেবল ঈশ্বরই আমাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারে, বলেছিলেন রবার্ট মুগাবে


News Image

হলি টাইমস রিপোর্ট :

আলোচিত সমালোচিত আফ্রিকান রাজনীতিক রবার্ট মুগাবে স্বাধীনতার নায়ক হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা নিয়ে ক্ষমতায় এসে দীর্ঘ ৩৭ বছর পর ৯৩ বছর বয়সে এসে অনেকটা জনরোষেই পদত্যাগে বাধ্য হলেন ।গত কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড চাপের মুখে থাকা মিস্টার মুগাবে এমন সময় পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন যখন পার্লামেন্টে তার অভিশংসন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছিলো।

আর তার পদত্যাগের ঘোষণার পরপরই উল্লাসে ফেটে পড়েছে রাজধানী হারারেসহ বিভিন্ন শহরের মানুষ।

তবে এতো সমালোচনা আর চাপের মধ্যেও শ্বেতাঙ্গ শাসন অবসান আর স্বাধীনতার নায়ক হিসেবে অনেকের কাছে তার অবস্থান নায়কের মতো। এমনকি যারা তাকে ক্ষমতা থেকে বিতাড়নে সোচ্চার হয়েছেন তাদের অনেকেরও সমালোচনার পাত্র আসলে মিস্টার মুগাবের স্ত্রী আর তাকে ঘিরে থাকা 'অপরাধী' চক্র।

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে অনেক ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে এসেছেন মুগাবে।

ছয় ভাই বোনের মধ্যে তৃতীয় রবার্ট মুগাবে শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করে পরে বিপ্লবী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি।

তার বাবা ছিলেন একজন কাঠমিস্ত্রী। ১৯৩৪ সালে বাবার মৃত্যুর পর কাজের সন্ধানে বুলাওয়ে শহরে যান মুগাবে।

পরে আইরিশ একজন পাদ্রীর সাথে থেকে নিজেকে গড়েন তিনি।

মুগাবে, জিম্বাবুয়েছবির কপিরাইটAFP
Image captionস্ত্রী গ্রেস মুগাবেকে নিয়েই বেশি সমালোচনায় পড়েছেন রবার্ট মুগাবে

পরে জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে।

কখনো তুমুল জনপ্রিয়তা আবার কখনো তীব্র সমালোচনার মুখেও ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তিনি বরাবরই তার পথেই অটল ছিলেন।

২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে তিনি যেমন বলেছিলেন , "তুমি যদি নির্বাচনে হারো এবং জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হও, তাহলে রাজনীতি ছাড়ার সময় এসেছে"।

সেই মুগাবেই নির্বাচনে হারার পরেও ক্ষমতায় থেকে বলেছিলেন 'কেবলমাত্র ঈশ্বর'ই আমাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারে।

মুগাবে, জিম্বাবুয়েছবির কপিরাইটGETTY IMAGES
Image captionরবার্ট মুগাবে (বায়ে) ১৯৬০সালের ছবি

রবার্ট মুগাবের উঠে আসা এবং রাজনৈতিক জীবন:

১৯২৪: রবার্ট মুগাবের জন্ম। পরে প্রশিক্ষণ নেন শিক্ষকতায়।

১৯৬১: ঘানার স্যালি হেফ্রনকে বিয়ে করেন

১৯৬৩: ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরোধিতার ধারাবাহিকতায় জানু-পিএফ পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন

১৯৬৪: বন্দিত্ব বরণ, প্রায় দশ বছর রোডেশিয়ার কারাগারে ছিলেন তিনি

১৯৮০: ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর জিম্বাবুয়ের প্রধানমন্ত্রী হন, জয়লাভ করেন স্বাধীনতা উত্তর নির্বাচনে।

১৯৮১ : নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্যও মনোনীত হয়েছিলেন।

১৯৮৭ : প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন

১৯৯৪: প্রতিবেশী দক্ষিণ আফ্রিকায় জাতিগত বিদ্বেষ অবসানের অন্যতম দৃঢ় সমর্থক

১৯৯৬: গ্রেস মারুফুকে বিয়ে করেন

২০০০: গণভোটে পরাজয়। শ্বেতাঙ্গদের কৃষি খামার অধিগ্রহণ।

২০০২: প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে জয়লাভ

২০০৮: প্রথম দফা নির্বাচনে হেরে যান। দ্বিতীয় দফায় সমর্থকদের ওপর ব্যাপক হামলার প্রেক্ষাপটে তার প্রতিদ্বন্ধী সরে দাঁড়ান।

২০০৯: নির্বাচনের প্রতিপক্ষ মর্গান সাভাঙ্গিরাইকে প্রধানমন্ত্রী মনোনীত

২০১১: উইকিলিকসের ফাঁস করা তথ্যে জানা যায় রবার্ট মুগাবে প্রস্টেট ক্যান্সারে ভুগছেন

২০১৭: দীর্ঘদিনের সহযোগী ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন মানাঙ্গকওয়াকে বরখাস্ত এবং এরপরই নিজ দল জানু-পিএফ ও সামরিক বাহিনীর ক্ষোভের মুখে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগে বাধ্য হলেন

রবার্ট মুগাবের পর জিম্বাবুয়ের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হবেন তা এখনো বলা হয় নি তবে ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন মাসাঙ্গাগওয়ার নামই বলা হচ্ছে সবার আগে।

তিনি এখন দক্ষিণ আফ্রিকায় আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে অজ্ঞাত স্থান থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত বলে জানিয়েছিলেন।খবর বিবিসির