Wed, Dec 13 2017 - 12:53:34 PM +06

তোমার সাথে আমাদের দেখা হবে চীনের বিখ্যাত একটি ব্রিজের উপর কে কার সাথে দেখা করতে চেয়েছিল !


News Image

হলি টাইমস রিপোর্ট :

তখনো সকালের আলো ফোটেনি। ভোর চারটা। কেটির জন্মদাতা পিতা ছোট একটা কম্বলে মুড়িয়ে তাকে নিয়ে যায় একটি মার্কেটে।

কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে, কপালে আলতো চুমু দিয়ে, লোক চক্ষুর অগোচরে তাকে রেখে দেয়।

কান্না সামলাতে দৌড়ে চলে আসেন সেখান থেকে। পাশে রেখে আসেন একটা চিঠি।

চাইনিজ ভাষায় সে চিঠিতে লেখা ছিল আজ থেকে ১০ অথবা ২০ বছর তোমার সাথে আমাদের দেখা হবে চীনের বিখ্যাত একটি ব্রিজের উপর। কিন্তু কেমন ছিল সে সময়টা কেটির বাবার জন্য?

তিনি বলছিলেন "আমার স্ত্রী যখন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা তখন আমরা অ্যাবরশন করতে যায়। কারণ আপনি জানেন যে চীনে এক সন্তান নীতি। কেটির আগে আমাদের আরেকটা কন্যা সন্তান ছিল। কিন্তু যখন আমরা হাসপাতালে গেলাম তখন আমারা সন্তানের নড়াচড়া টের পেলাম তার মায়ের পেটের মধ্যে। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা অ্যাবরশন করাবো না"। খবর :বিবিসি

পরিস্থিতি আরো জটিল হল। লুকিয়ে একটা নৌকার মধ্যে থাকতে হল তাদের।

সন্তান প্রসবের সময় কোন চিকিৎসকের সাহায্য তারা পায়নি। কেটির বাবা বলছিলেন "আমরা ভেবেছিলাম পরিচিত কারো কাছে হয়ত আমরা রাখতে পারবো কিন্তু তেমন কাওকে পাওয়া গেল না"।

১৯৯৬ সাল। আমেরিকান এক দম্পতি কেটিকে দত্তক নেন। আর কেটির জন্মদাতা বাবা মাকে জানান যে সে ভালো আছে আর তারা তাকে খুব ভালোবাসে।

কেটির বয়স যখন ১০ তখন তার আমেরিকান বাবা তার চাইনিজ বাবাকে মেসেজ পাঠান যে তারা আসবেন ঐ ব্রিজের উপর।

চীনের ব্রোকেন ব্রিজে প্রতিবছর ৭ই জুলাই প্রিয় মানুষদের সাথে সাথে সাক্ষাত করেন।

কেটির জন্মদাতা পিতা বলছিলেন "সেই রাতটা আমরা ঘুমাতে পারিনি। আমার মনে হয়েছিল যারা তাকে দত্তক নিয়েছে তারা হয়ত দুই,পাঁচ বছরে আমাদের সাথে দেখা করাবে না। তাই ১০/২০ বছরের কথা লিখেছিলাম। অবশেষে সেই দিন এসে গেল। আমরা সকাল সাতটায় চলে গেলাম ব্রিজের উপর। ৮টা ,৯টা ,১০ টা বেজে গেল। আমরা দুপুর সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। কিন্তু তারা আসলো না"।

অসম্ভব হতাশা নিয়ে তারা ফিরে আসলেন।এই ঘটনা জানাজানি হয়ে গেল। চীনের মিডিয়া এই ঘটনা নিয়ে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করলো।

সেই অনুষ্ঠানে কেটির বাবা তার মেয়ের গল্প বললেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করল।

আমেরিকায় বসে কেটির দত্তক নেয়া বাবা মা এই ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারলেন। ইতিমধ্যে কেটির বয়স ২০ বছর হয়েছে।

তারা কেটিকে জানালেন তারা জন্মদাতা বাবা-মা এমন চীনে থাকেন এবং তাকে দত্তক নেয়া হয়েছে। কেটির প্রথমবারের মত কথা বলেন এই বিষয়ে।

কেটি বলছে "যখন আমার বাবা-মায়ের সাথে দেখা হল তারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছিল। আর আমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছিল। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়নি তাদের ক্ষমা করার মত কিছু ঘটেছে। আমি বুঝতে পারি তারা পরিস্থিতির শিকার। এমন একটি সিস্টেমের মধ্যে তারা ছিল, যেটা ছিল খুব মর্মান্তিক"।

কেটি কয়েকদিন তার বাবা মায়ের সাথে কাটান। এরপর ফিরে যান মিশিগানে তার দত্তক নেয়া বাবা মায়ের কাছে।

কিন্তু হঠাৎ করেই এই জীবন পাল্টে দেয়া ঘটনা তাকে ভীষণ ভাবে আলোড়িত করলো।