Thu, Dec 14 2017 - 2:47:15 PM +06

দেশের দ্রুত টেকসই উন্নয়নের জন্য সুস্থ ও সুঠাম দেহের জনগোষ্ঠি তৈরি জরুরি


News Image

সাগরিকা মন্ডল :

দেশের দ্রুত টেকসই উন্নয়নের জন্য সুস্থ ও সুঠাম দেহের জনগোষ্ঠি তৈরি জরুরি বলে মনে করেন শিল্পমন্ত্রী। তিনি বলেছেন,  শরীর সুস্থ থাকলে, মনও ভাল থাকে-মন সতেজ থাকে। ফলে মানুষের মধ্যে উৎপাদনমুখী ও সৃজনশীল কর্মকান্ডে আত্মনিয়োগের স্পৃহা বাড়ে।

তিন দিনব্যাপী আয়োজিত ‘হেলথ এন্ড ফিটনেস-২০১৭’ শীর্ষক প্রদর্শনীর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করার সময় তিনি সুস্থাস্থ্যের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। মহান স্যাভর ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড এই প্রদর্শনীর আয়োজক।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার সবার জন্য নিরাপদ স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তৃণমূল পর্যায়ে কার্যকর স্বাস্থ্যসেবা দিতে সারা দেশে ইতোমধ্যে ১২ হাজারেরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করা হয়েছে। এসব ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক কমিউনিটি হেল্থ কেয়ার প্রোভাইডার নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

ইতোমধ্যে আমরা স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়নে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনে সক্ষম হয়েছি। মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হারের ক্ষেত্রে সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে সক্ষম হওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ কর্তৃক প্রদত্ত সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশ টিকাদান কর্মসূচির ক্ষেত্রে সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড ইম্যুনাইজেশন (গ্যাভী) পুরস্কার লাভ করেছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এলাকাভিত্তিক শিল্প সম্ভাবনা ও কাঁচামালের সহজ প্রাপ্যতা বিবেচনা করে শিল্প স্থাপনের নির্দেশনা দিয়ে আসছেন। তিনি দেশিয় উপকরণ ব্যবহার করে আমদানিবিকল্প শিল্প স্থাপনের প্রতি অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। তাঁর নির্দেশনার আলোকে শিল্প মন্ত্রণালয় জাতীয় শিল্পনীতি-২০১৬ প্রণয়ন করেছে। এ নীতিতে হারবাল ওষুধ ও পণ্য উৎপাদনকারী শিল্পকে অগ্রাধিকার শিল্পখাতের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে দেশে হারবাল শিল্প কারখানা ক্রমেই বিকশিত হচ্ছে। জনগণের মধ্যে প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরি পণ্য ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে।

বিশ্বব্যাপী ভেষজ পণ্য ও ওষুধের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে বিশ্ববাজারে ৭১.১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের হারবাল পণ্যের চাহিদা রয়েছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও এ চাহিদায় কোনো ধরনের ভাটা পড়েনি। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৫০ সাল নাগাদ এর পরিমাণ দাঁড়াবে ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে। এখাতে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, জাপান ও চীনের বিনিয়োগ অনেক বেশি। এশিয়ার-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীন ও ভারত হারবাল পণ্যের বাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

 

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, আধুনিক ওষুধের প্রায় ২৫% বিভিন্ন উদ্ভিদ থেকে তৈরি হয়-যা ঐতিহ্যগতভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। বাংলাদেশের প্রায় ৫০০ প্রজাতির ঔষধি উদ্ভিদ রয়েছে। ভেষজঔষধ ও পণ্য উৎপাদনের জন্য দেশে এখন ৪০০টি হারবাল ফ্যাক্টরি কাজ করছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর আনুমানিক ৩৩০ কোটি টাকার ভেষজপণ্য তৈরি হচ্ছে। এসব ভেষজপণ্য  সংযুক্ত আরব-আমিরাত, পাকিস্তান ও যুক্তরাজ্যের বাজারে রপ্তানি করছে।

 

আমাদের সরকার উপজেলা পর্যায়ে ভেষজ উদ্ভিদের চারা বিতরণ ও ঔষধিগাছ রোপনে উৎসাহ দিয়ে আসছে। জাতীয় পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি বিশ্ববাজারে ভেষজ পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশে এ শিল্প প্রসারের নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে আমি হারবাল ওষুধ ও পণ্য উৎপাদনকারী শিল্প উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার আহবান জানাই। আমি আশা করি, এ শিল্পখাতে যত দ্রুত প্রবৃদ্ধি ঘটবে, জাতীয় অর্থনীতিতে এর সুফল তত বেশি প্রতিফলিত হবে। 

তিনি বলেন,শারীরিক ফিটনেস ধরে রাখার জন্য শরীর চর্চার কোনো বিকল্প নেই। অন্যান্য ব্যায়ামের পাশাপাশি বাইসাইকেল চালানো একটি বিজ্ঞানসম্মত শরীর চর্চা হিসেবে বিবেচিত। ফলে বাংলাদেশে দ্রুত বাইসাইকেল শিল্পের বিকাশ ঘটছে। এটি এখন বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম উদীয়মান শিল্পখাত। ইউরোপের দেশগুলোতে বাইসাইকেল রপ্তানিতে বাংলাদেশ বর্তমানে তৃতীয় স্থান অধিকার করে আছে। বাংলাদেশে তৈরি সাইকেল ইউরোপের যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইটালি, ডেনমার্ক, বেলজিয়ামসহ বিশ্বের ৩০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

 

তিনি আরো বলেন , ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশি বাইসাইকেলের বাজার দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে শুধুমাত্র ইউরোপের দেশগুলোতেই ৯৯.১৫ মিলিয়ন ডলারের বাইসাইকেল রপ্তানি করেছে। অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এখাতের প্রসারে সরকারের পক্ষ থেকে সম্ভব সব ধরনের নীতিসহায়তা দেয়া হবে। আমরা দেশিয় কাঁচামালনির্ভর যে কোনো শিল্পের প্রসারে সর্বোচ্চ নীতি সহায়তা প্রদানে অঙ্গীকারবদ্ধ।

এ প্রদর্শনীতে উপস্থাপিত প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি প্রত্যক্ষ করে বাংলাদেশি শিল্প উদ্যোক্তারা নিজেদের পণ্যের গুণগত মানোন্নয়ন ও সমৃদ্ধকরণে সচেতন হবেন। তারা এসব প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে নিজ নিজ শিল্প-কারখানার দক্ষতা বৃদ্ধি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে অনুপ্রাণিত হবেন। পাশাপাশি ক্রেতা-ভোক্তারাও ভেষজ ওষুধ ও পণ্য ব্যবহারে আগ্রহী হবেন অবশেষে এ  আশাবাদ ব্যক্ত করে সবাইকে তিনি অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও জানান।