Mon, Jan 15 2018 - 1:54:29 PM +06

প্রশ্নপত্র ফাঁসে কিছু সংখ্যক শিক্ষক সরাসরি যুক্ত : শিক্ষামন্ত্রী


News Image


সংসদ প্রতিবেদক :

সরকার বার বার কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পরেও কিছু সংখ্যক শিক্ষক প্রশ্নপত্র ফাঁসে সরাসরি জড়িত। এবার আরো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কোন শিক্ষক প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তার চাকরি থাকবে না। এমন কী সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র থাকবে না এবং ঐ স্কুলের রেজিট্রেশন বাতিল করে দেয়া হবে। প্রশ্নপত্র ফাঁসকে উন্নয়নের সমস্যা, প্রযুক্তির সমস্যা বললেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
 রোববার বিকেলে জাতীয় অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে আওয়ামী  লীগ দলীয় সংসদ এ কে এম শামীম ওসমানের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী একথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস। এটা একটা দীর্ঘকালের সমস্যা। এজন্য আমরা বিভিন্ন প্রশ্নের সন্মুখিন হয়েছি। প্রথমত আমাদের সমস্যা বিজিপ্রেস, যেটা আমাদের আওতায় না, জনপ্রশাসনের আওতায়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় বিজিপ্রেস নিরাপদ করেছি। এখন বিজিপ্রেস থেকে প্রশ্ন  ফাঁসের কোনো সম্ভবনা নেই বা হয় ও না।
তিনি বলেন, বিজিপ্রেস থেকে প্রশ্ন যখন জেলায় পাঠানো হয় সেখানেও নিরাপদ করা হয়েছে। এরপর আমরা উপজেলায় রাখি সেখানেও নিরাপদ করা হয়েছে। সমস্যা হচ্ছে আমরা যখন পরীক্ষার দিন সকাল বেলায় বিভিন্ন সেন্টারে প্রশ্ন পাঠাই। দূর, দূরান্তের স্কুল গুলোতে দুই ঘণ্টা, চার ঘণ্টা আগে পৌঁছে দেওয়া হয়। এখন দেখা যাচ্ছে যাদের হাতে পৌছে দেই, যেখানে আমাদের নিরাপদ ভাবা উচিত। সেখান থেকে কিছু সংখ্যক শিক্ষক তারা সরাসরি যুক্ত। আধুনিক প্রযুক্তির কারণে কিছু শিক্ষক মোবাইল ফোন বা অন্যান্য কিছু ব্যবহার করে তারা আগে প্রশ্নপত্র খুলে এটা প্রচার করে দেয়। এতে অর্থ রোজগারও করে, সরকারকে বেকাদায় ফেলতে চান।
মন্ত্রী বলেন, আমরা এসব মোকাবেলা করে যাচ্ছি। আমরা এবার আরো কঠোর অবস্থান নিয়েছি। আমরা পরিস্কার বলে দিয়েছি কোন ভাবে যদি কাউকে জড়িত পাওয়া যায় তার কঠোর শাস্তি হবে, শিক্ষকের চাকরি থাকবে না। ওই স্কুলের কেন্দ্র বাতিল হবে, স্কুল বাদ দিতে পারি। এছাড়া কোন ধরণের মোবাইলফোন কেউ হলের আশপাশে নিতে পারবে না। এটা আগেই সিদ্ধান্ত ছিল, এবার কঠোর অবস্থান নিয়েছি। এবার সকাল ১০ টায় পরীক্ষা শুরু ৩০ মিনিট আগে গিয়ে সিটে বসতে হবে তার পর খাম খোলা হবে। এটা পর্যবেক্ষণের জন্য মোবাইল টিম করে দিয়েছি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় যখন তখন গিয়ে হাজির হবে এই মোবাইল টিম।
তিনি আরও বলেন, কিছু সংখ্যক শিক্ষক যারা আমাদের সন্মান নষ্ট করছে, সার্বিক সমস্যার সৃষ্টি করছে। এটা আধুনিক  প্রযুক্তি ব্যবহার করে করে থাকেন। এগুলো হচ্ছে উন্নয়নের সমস্যা প্রযুক্তির সমস্যা। আমরা একটা ব্যবস্থা নিলে তারা পাল্টা ব্যবস্থা নিচ্ছে। এবার কঠোর অবস্থা নেওয়ার কারণে আশাকরি বন্ধ হবে।
মো. মামুনুর রশীদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, ২০১৬-২০১৭ অর্থ-বছরে সরকার  অনুমোদিত সকল স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেসমূহের বেতন ভাতা বাবদ সরকারের মোট ব্যয়  ৮ হাজার ২’শ ৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ১৪ হাজার ৩৮২ টাকা ব্যয় হয়েছে (এমপিও ভুক্ত কলেজ এবং এমপিও ভুক্ত স্কুল এর তথ্য অনুযায়ী)। ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে সরকার অনুমোদিত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমুহে(স্কুল ও কলেজ) ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৮ হাজার ৫’শ ৮৩ কোটি ৫৭ লাখ ১৯ হাজার।
দেশে মোট ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষার্থী ৩১ লাখ ৫০ হাজার ৪০৯ জন

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানিয়েছেন, দেশে মোট ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এতে মোট ৩১ লাখ ৫০ হাজার ৪০৯ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। চট্টগ্রাম-৪ আসনের এমপি দিদারুল আলমের এক প্রশ্নের জবাবে এমন তথ্য জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় গুলো হলো: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়,  বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাষানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেনারী ও এনিমল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়-রংপুর, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস,  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইউনির্ভাসিটি, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান  মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় নামে ২টি অধিভ’ক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ও রয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।

প্রতিটি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে
সরকারি দলের সদস্য এম, আবদুল লতিফের এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, দেশের প্রতিটি জেলায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকলের জন্য উচ্চ শিক্ষার পথ সুগম করতে এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ কার্যক্রমের আওতায় সরকারের বর্তমান মেয়াদে ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত দেশে ৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে এবং ১৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে।
নাহিদ বলেন, এর ধারাবাহিকতায় দেশে সরকারি উদ্যোগে আরও ৮টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কাজ চলছে। এর মধ্যে ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন’ ইতোমধ্যে মহান জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১৭’ জাতীয় সংসদে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
তিনি বলেন, এছাড়া ‘হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, হবিগঞ্জ’, ‘লক্ষ্মীপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, লক্ষ্মীপুর’, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এভিয়েশন এন্ড এরোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা’, ‘হাজী আসমত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জ’, ‘চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চাঁদপুর’ এবং ‘বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,’ নামে আরও ৬টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আইনের খসড়া চূড়ান্তকরণের কাজ চলছে।