Thu, Jan 18 2018 - 2:08:21 PM +06

৪৬ বছর সিনেমা চলেনি তারপরও আয় হচ্ছে ১০০ কোটি টাকা


News Image

হলি টাইমস রিপোর্ট :

দীর্ঘ ৪৬ বছর পর প্রায় ১০০ কোটি কোটি টাকা আয় করলো সেই সময়কার রাজধানীর অন্যতম অংশ পুরানো ঢাকার ওয়াইজঘাটের মুন সিনেমা হল। এই দীর্ঘ বছর ওই সিনেমা হলে কোন ছবি চলেনি । কোন দর্শকও হলটিতে প্রবেশ করেনি। বক্স অফিসে হিট হয়নি নায়ক রাজ রাজ্জাক থেকে এই সময়ের সাকিবখান পর্যন্ত কোন নায়কের ছবি । তারপরও এতো আয়। ধৈর্য্য আর আইনের প্রতি অবিচল আস্থা রেখে এই অর্ধশত বছর অপেক্ষা করেই এমন আর্থিক সুফল পেল মালিক মাকসুদুল আলমের  ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস।

পুরনো ঢাকার যে মুন সিনেমা হলের মালিকানা নিয়ে মামলায় সংবিধানে পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের রায় এসেছিলো সেই হলটির জমি ও সেখানে গড়া স্থাপনার মূল্য বাবদ হল মালিককে ৯৯ কোটি ২০ লাখ টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।

নিরপেক্ষ প্রকৌশলী দিয়ে জমি ও স্থাপনার দাম নির্ধারণের পরে সেটি রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে উপস্থাপন করলে এ আদেশ দেয় আদালত।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক বিবিসিকে বলেছেন আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী মুন সিনেমা হলের মালিককে আগামী ত্রিশে জুলাইয়ের মধ্যে তিন কিস্তিতে মোট ৯৯ কোটি ২০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।

পুরনো ঢাকার ওয়াইজঘাটে মুন সিনেমা হলের মালিক ছিলো ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

ঢাকার একটি পুরানো সিনেমা হল

কিন্তু ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় এটিকে পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয় যা পরে শিল্প মন্ত্রণালয় মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে ন্যস্ত করে।

যদিও ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেডের মালিক মাকসুদুল আলম এর মালিকানা দাবি করেছিলেন।

পরে ১৯৭৭ সালে সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের সামরিক ফরমানে বলা হয় সরকার কোন সম্পত্তিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে তা আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবেনা।

এর প্রেক্ষাপটে ২০০০ সালে এসে ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড হাইকোর্টে একটি রিট করে পঞ্চম সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ করে এবং এর ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালের অগাস্টে হাইকোর্ট ১৯৭৫ এর পনেরই অগাস্টের পর খন্দকার মোশতাক আহমেদ, বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম ও মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহণকে অসাংবিধানিক ও বেআইনি ঘোষণা করে।

এ রায় রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক ঝড় তোলে। তবে সুপ্রিম কোর্টও পরে ২০১০ সালে এ রায় বহাল রাখে ও মুন সিনেমা হল ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেডকে ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয়।

কিন্তু তারপরেও মালিকানা ফেরত না পেয়ে আবারো আদালতের শরণাপন্ন হয় ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেডের মালিক পক্ষ।

তখন অ্যাটর্নি জেনারেলের তরফ থেকে আদালতে জানানো হয় যে মুন সিনেমা হল আগের অবস্থায় ফেরত দেয়ার উপায় নেই, তাই জমি ও কাঠামোর মূল্য ধরে মালিক ক্ষতিপূরণ পেতে পারে।

এ প্রেক্ষাপটে আদালত নিরপেক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রকৌশলীকে দিয়ে মূল্য নির্ধারণের নির্দেশ দিলে সেটি অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে দিয়ে করানো হয় বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক।

মিস্টার হক জানান তার প্রতিবেদন পরে আদালতে উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ।

এর পর আজ সেটি বিবেচনায় নিয়ে সিনেমা হল মালিকের আবেদন নিষ্পত্তি করলো আদালত।