Tue, Feb 20 2018 - 3:18:53 PM +06

মাদক ছাড়াবে যে,তাকেই ধরেছে মাদকে


News Image

নিত্য গোপাল তুতু:
মাদকে দেশ আজ সয়লাব। সেই গ্রাম থেকে শুরু করে রাজধানীর অলি গলিতে ছড়িয়ে পড়েছে মাদক আর মাদক।মাদকের নেশায় ডুবে যাচ্ছে এ দেশের শিশু এবং তরুণ সমাজ। অপরদিকে,মাদক নিয়ন্ত্রনের নামে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে অভিযানের বাণিজ্যে নেমেছে পুলিশ।মাঠপর্যায়ের কতিপয় অসাধু পুলিশ সদস্য থেকে শুরু করে জেলা পুলিশ প্রধানও জড়িয়ে পরেছেন অর্থের দিকে। মাদকাসক্তদের কারনে এদেশের লাখলাখ পরিবার আজ ধ্বংসের দিকে। পুলিশ বিভাগে দুর্নীতি আর অনিয়মের কারনে বিভিন্ন অপরাধ নিয়ন্ত্রনে বারবার ব্যার্থতার পরিচয় দিচ্ছে পুলিশ।একদিকে মাদকের কারনে দেশের বর্তমান এবং আগামি প্রজন্ম ধ্বংস হতে বসেছে।একইভাবে পুলিশ বিভাগে অনিয়ম এবং দুর্নীতির কারনে দীর্ঘ দিনের সুনাম অবক্ষয় হতে যাচ্ছে।
সূত্রমতে,পুৃলিশের ঘুষ এবং দুর্নিতির কারনে দেশে মাদক ব্যাবসা বন্ধ হচ্ছে না। শুধু মাদক ব্যবসা নয়,পুলিশ বিভাগের নিয়োগ পদায়ন এবং বদলিতেও লেনদেন হচ্ছে ঘুষ।এই ঘুষের সঙ্গে পুলিশের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সরকার দলীয় রাজনৈতিক নেতারাও জরিয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।গত রোবরার পুলিশ হেডকোয়াটার্সে আয়োজিত অপরাধ বিষয়ক ত্রৈমাসিক সভায় পুলিশ কর্মকর্তাদের আলোচনায় এসব বিষয়ে উঠে আসে বলে সভাসূত্রে জানা গেছে।
দেশের অপরাধ পরিস্থিতি নিয়ে প্রতি তিন মাস পর পর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।এই বৈঠকে গেল সময়ের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার পাশাপাশি আগামি তিন মাসের সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকামিবলার কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হয়। পুলিশের বিভিন্ন জেলা প্রধান এবং বিভাগীয় পুলিশের প্রধানরাও এ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
বর্তমান পুলিশ প্রধান, জাবেদ পাটোয়ারি যোগদানের পরে ত্রৈমাসিক অপরাধ বিষয়ক সভায় এই প্রথম। পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তরা তাদের সমস্যার কথা পুলিশ প্রধানের কাছে তুলে ধরেন।সভায় নির্বাচনের বছরের আইন-সৃঙ্খলা মাদক পরিস্থিতি,জঙ্গি,সন্ত্রাসবাদ,কনষ্টবল নিয়োগসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনা হয়।এরমধ্যে মাদকের বিষয়টা বেশি আলোচনা হয়।পুলিশ প্রধানের কাছে নিজেদের সমস্যার কথা বলতে গিয়ে অনেক সদস্যই ক্ষোভে বলে ফেলেন,পুলিশের কর্মকর্তাদের মধ্যেও অনিয়ম দুর্নীতি মাদক সেবনের মতো প্রবেশ করেছে। এএসআই, এসআই,থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জেলা পুলিশ প্রধানকে বদলি হতে হচ্ছে টাকার বিনিময়ে। আর এই টাকার যোগান দিতে হচ্ছে মাদক ব্যাবসার আখড়া থেকে। একইভাবে কনষ্টেবল নিয়োগে দিতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।এছাড়া ওসিকে প্রতিমাসে জেলা পুলিশ প্রধানকে দিতে হচ্ছে মাসোহারা এসআই এবং এএসআইকে দিতে হচ্ছে ওসিকে।তাহলে তারা ওই টাকার যোগান দিবে কোথা থেকে ?
সংগত কারনেই ঝুকে পড়তে হচ্ছে মাদকের অনৈতিক টাকার দিকে। জেলা পুলিশ প্রধানরা মাদক নিয়ে বিভিন্ন মঞ্চে বক্তব্য রাখলেও ওসিদের তেমন কঠোর নির্দেশ দিতে লজ্জা পাচ্ছেন।আর  এই সুযোগ লুফে নিছেন মাদক ব্যাবসায়ীরা ।
সূত্রমতে,দেশে প্রতি বছর শুধু ইয়াবা বড়ি বিক্রি হচ্ছে ৪০হাজার কোটির মতো।যার বাজার মূল্য প্রায় ৬হাজার কোটি টাকা।আর্থিক,সামাজিক,মানবিক নানা ভাবে ইয়াবার ভয়াবহতা দেশ জুড়ে ছড়ালেও তা নিয়ন্ত্রনে সরকারের কঠোর উদ্দোগ থাকলেও পুলিশের সদস্যরা নামে মাত্র মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখে।পুলিশ বাহীনি শুধু অভিযানের নামে ঢাক-ঢোল পিটাচ্ছে মাত্র।মাদক ব্যাবসার সাথে জড়িত অভিযোগে ৬৭জন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হলেও পুলিশ এবং মাদক ব্যাবসায়ীদের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করা যাচ্ছেনা।কনষ্টেবল নিয়োগে জেলা পুলিশ প্রধান ঘুষ নেওয়া বন্ধ করতে পারলে একদিকে যেমন মেধার বিকাশ ঘটবে তেমনি বন্ধ হয়ে যাবে দূর্নিতি।তবে এই নিয়োগ বানিজ্যের সঙ্গে কতিপয় রাজনৈতিক নেতারাও জড়িত রয়েছে বলে সভায় আলোচনা হয়।
পুলিশ প্রধান,জাবেদ পাটোয়ারি সভায় কঠোর হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, জুনিয়রদের কাছ থেকে সিনিয়ররা যদি লজ্জা পেতে না চান তাহলে এখনি সংশোধন হোন। তা না হলে আগামিতে কঠোর ব্যাবস্থা নেওয়া  হবে। কোন পুলিশ সদস্যের ব্যাক্তিগত অপরাধের দায়ভার প্রতিস্থান বহন করবে না।একইভাবে কোন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কোন অপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে ছাড় দেওয়া হবেনা।
সভায় ২০১৭ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরের সময়ের সার্বিক অপরাধ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।এতে তিন মাসের অপহরণ,খুন,ডাকাতি,এসিড নিক্ষেপ,ধর্ষন,নারী ও শিশু নির্যাতন,মাদক দ্রব্য,চোরাচালান দ্রব্য,অস্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার,সরক দূর্ঘটনা,গাড়ি চুরি,রাজনৈতিক সহিংসতা ও পুলিশের উপর হামলার মামলাসহ আইন-সৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়।গত তিন মাসে সারা দেশে ৫২ হাজার ৪৪৬ টি মামলা হয়েছে। যা গত জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০১৭ সালের তুলনায় কম।