Fri, May 26 2023 - 6:53:02 PM +06

আইন সংস্কার প্রচেষ্টা : হিন্দু শূণ্য করার গভীর ষড়যন্ত্র


News Image
হলি টাইমস রিপোর্ট :
হিন্দু আইন সংস্কার প্রচেষ্টা বাংলাদেশ থেকে হিন্দু শূণ্য করার একটি গভীর ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশন বলেছে, যুগ যুগান্তরে প্রথিত এই হিন্দু শাস্ত্রীয় আইন সংস্কার প্রচেষ্টা বন্ধ করতে হবে। হিন্দু মা- বোনেরা বলেছেন, আমরা ভালো আছি, হিন্দু আইন সংস্কার চাই না।শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশনের আয়োজনে এক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। একই সঙ্গে দেশের ৬ টি বৃহৎ হিন্দু সংগঠনও একই দাবিতে সমাবেশে যুক্ত হয়েছিল। সমাবেশের পর আইন সংস্কারের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল এবং কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন, বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশনের সভাপতি বরুন চন্দ্র সরকার, মহাসচিব শ্যামল কান্তি নাগ, যুগ্ম মহাসচিব সন্তোষ চন্দ্র দাস, যুগ্ম মহাসচিব সমীর কুমার সূত্রধর, অর্থ সম্পাদক মানস মন্ডল, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সাগরিকা মন্ডল প্রমুখ। 
                                     বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশন এর মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সাগরিকা মন্ডল
বরুন চন্দ্র সরকার বলেছেন, যারা আইন চায় তারা কেউই হিন্দু ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করেনা। কতগুলো এনজিও বিদেশি অর্থে এই সংস্কার বিষয়টিকে একটি টাকা কামানোর প্রকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছে। আর যে সব কথিত হিন্দু , এই আইনের সংস্কার চায় তাদের শীর্ষস্থানীয় অনেকের  স্ত্রী, সন্তান খৃস্টান, স্বামী মুসলমান, কারো কারো আবার সন্তানই নেই। বাংলাদেশে সাড়ে চার কোটি হিন্দুদের মধ্যে এই কতিপয় হিন্দুর কথায় আইন সংস্কার হতে পারেনা। এটা সরকারের বিরুদ্ধেই গভীর ষড়যন্ত্র। 
তিনি বলেন, সরকারের উচিৎ এই আইন সংস্কার প্রচেষ্টার পিছনে কারা আছে, তাদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া। তারা কি কখনোই সরকারের কিংবা আওয়ামী লীগের ভালো চায় ? যারা এই সংস্কার চাচ্ছে তারা আওয়ামী লীগ’কে ক্ষমতায় দেখতে চায়না। নির্বাচনের আগে, সরকার এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে হিন্দুদের খেপিয়ে তোলার  এটা একটা নীল নকশা। 
           বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশন এর সভাপতি বরুন চন্দ্র সরকার,মহাসচিব শ্যামল কান্তি নাগ এবং অন্যান্ন নেতৃবৃন্দ
তিনি বলেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের আইন সংস্কারের মতো পরিস্থিতি এখনো হয়নি। যদি সমতার কথা বলে আইন সংস্কার করতে হয়, তাহলে অন্যান্য ধর্মে সমতার যে বৈষম্য রয়েছে তা সংস্কার করে তারপর হিন্দু আইনের সংস্কার করতে হবে।  হিন্দু আইন সংস্কার কিছু প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার পণ্য হতে পারে না। সরকারকে অনুরোধ করছি, হিন্দু আইন সংস্কার বন্ধ করুন, নয়তো সারা দেশে যুগপৎ আন্দোলনের ডাক দেবে সনাতন হিন্দুরা। 
                                        শতবর্ষী ঠাকুরমাও আইন সংস্কার প্রচেষ্টা ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ করেছেন
মহাসচিব শ্যামল কান্তি নাগ বলেছেন, যারা রীট করেছেন, তারা মনে করেছে আমরা আইন জানিনা। সংবিধানের তৃতীয় ভাগে মৌলিক অধিকার চাপ্টারের ২৮ অনুচ্ছেদের দোহাই দিয়েছেন রীটকারিরা। এই অনুচ্ছেদে নারী পুরুষের যে সমতার কথা বলা হয়েছে তা বিশেষায়িত একটি হিন্দু আইনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আর এই ২৮ অনুচ্ছেদকে যদি বাস্তবায়ন করতে হয়, তাহলে, দেশে যতগুলো ধর্ম আছে , গোষ্ঠি আছে সবার ক্ষেত্রেই সমতা ফেরাতে হবে। 
রীটকারীদের বলছি, আপনারা সংবিধানের ১৪৯ অনুচ্ছেদ পড়ুন। ১৪৯ অনুচ্ছেদে দেশের সকল প্রচলিত আইন সরকার হেফাজত করবে এমন কথা বলা হয়েছে। আমরাও সরকারকে অনুরোধ করছি, কিছু এনজিও ব্যবসায়ি, কিছু আইন ব্যবসায়ী আর কিছু হিন্দু দালালের কথায় ১৪৯ অনুচ্ছেদের ব্যতয় করবেন না। 
                                             বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশন এর গুগ্ম-মহাসচিব সমীর কুমার সূত্রধর
মি. নাগ চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, হিন্দু আইনে স্পষ্ট করেই নারীদের সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। অথচ আইন না জেনেই বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে কিছু দালাল । হিন্দু আইনের ৪২ এবং ৪৫ অনুচ্ছেদে পার্টিশান এবং জয়েন্ট ফ্যামিলি অংশে দায়ভাগ এবং মিতাক্ষরা বিধান মতে স্ত্রী এবং অবিবাহিত কন্যা-সন্তানদের সম্পত্তি বন্টন করা হয়েছে। যার ফলে হিন্দু আইন সংস্কারের কোনো প্রয়োজন নেই। এখন আমরা চাই হিন্দু সুরক্ষা আইন। হিন্দু নির্যাতন, খুন, ধর্ষনের হাজার হাজার মামলা বছরের পর বছর ধরে বিচারের আশায় আদালতে পড়ে আছে। প্রতিনিয়ত, ঘরবাড়ি , দোকানপাট, ব্যবসা বানিজ্য, মন্দিরে হামলা ভাঙচুর হচ্ছে, তার যথাযথ বিচার হচ্ছেনা । অথচ কিছু খ্রিষ্টান আর নব্য মুসলীম চাচ্ছে আইন বদলাতে। বাংলাদেশ থেকে হিন্দু বিলীন করার নয়া কৌশল বাস্তবায়ন হতে দেবে না বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশন। 
                                                    ষড়যন্ত্রকারীদের মুখে ঝাড়ু মারতে চান সচেতন সনাতনীরা
মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সাগরিকা মন্ডল বলেছেন, আমরা ভালো আছি। আমরা আইনের সংস্কার চাই না। তিনি বলেন, আইন সংস্কার হলে, পারিবারিক বন্ধন নষ্ট হবে, হিন্দুদের সম্পদ এবং সম্পত্তি দুটোই বিলিন হবে, লাভ জিহাদ বাড়বে, খুন ধর্ষন বাড়বে ।
মিসেস সাগরিকা আরো বলেন, হিন্দুদের বিয়ে চুক্তি নয়, ধর্মীয় বিধান। সর্ব সত্ত¡ ত্যাগ বা সম্প্রদান করে বিয়ে দেওয়া হয় হিন্দু কন্যাদের। আমৃত্যু স্বামীর সংসারে থাকার জন্য সাতপাকে বাঁধা হয় তাদের। তারা ডিভোর্স চায়না। ডিভোর্স হলে একজন মেয়ে ধর্মীয় এবং সামাজিক নানা হয়রানির মধ্যে পড়ে। ওড়া হিন্দু মেয়েদের আদালতে নিতে চায় আইন ব্যবসায়ীদের লাভের জন্য। আমরা তা হতে দেবো না। বাংলাদেশের হিন্দু মেয়েদের এখনো এমন কোনো করুন পরিস্থিতি হয়নি যে আইন সংস্কার করতে হবে। অতএব দালালরা থেমে যাও।
 
সমীর সূত্রধর এবং সন্তোষ চন্দ্র দাস বলেছেন, হিন্দু মেয়েদের এখনো আদালতে মামলা মোকাদ্দমার জন্য ভিড় জমাতে হয়না। ডিভোর্সের মতো ঘর ভাঙার কাজ করেনা তারা। অথচ এই দুই খারাপ দিকে হিন্দু মেয়েদের ঠেলা দেওয়া হবে যদি এই আইন সংস্কার হয়। ওরা জমি দখল, হামলা-মামলায় হিন্দুদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলতে চায়। তারা বলেন, হিন্দু শাস্ত্রীয় বিধানে হাত দিয়ে চরম ভুল করেছে কিছু দালাল। এর খেসারত তাদের দিতে হবে। বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় আমরা কোনো ভাবেই হিন্দু আইন সংস্কার করতে  দেবো না।
                                                                                                                                                                                           আন্তন নাগ অন্তু