Sat, Aug 26 2023 - 11:46:06 AM +06

চুমু-কাণ্ড: স্পেনের হয়ে না খেলার সিদ্ধান্ত বিশ্বজয়ীদের


News Image
নারী ফুটবলে ইতিহাস গড়েছে ইউরোপের দেশ স্পেন। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে নারী বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ১-০ গোলে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় স্প্যানিশরা। 
এর মধ্য দিযে নারী ফুটবল ইতিহাসে প্রথমবার বিশ্বকাপ শিরোপা জেতে স্পেন। শুধু তাই নয়, বিশ্ব ফুটবল ইতিহাসে দ্বিতীয় দেশ হিসেবে স্পেনের নারী ও পুরুষ উভয় দল বিশ্বকাপের শিরোপা জেতার কৃতিত্ব অর্জন করে তারা। এর আগে জার্মানির মেয়েরা ২০০৩ সালে ও ২০০৭ সালে দুইবার এই কীর্তি গড়েছিল।
কিন্তু এমন ইতিহাস গড়ার পরও স্পেন ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি লুইস রুবিয়ালেসের কাণ্ডে চরম বিতর্কের জন্ম নিয়েছে স্পেনে। বিশ্বকাপ মঞ্চেই বিশ্বকাপজয়ী তারকা হেনি হেরমোসোর ঠোঁটে চুমু দেওয়ার ঘটনায় সেই বিতর্ক আরও জটিল রূপ নিয়েছে। ওই ঘটনার জেরে তার পদত্যাগের দাবি উঠলে রুবিয়ালেস জানিয়েছেন, তিনি পদত্যাগ করবেন না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া বিবৃতিতে হেরমোসো বলেছেন, চুমুতে তার সম্মতি ছিল না। পরিস্থিতি এতে আরও জটিল হয়েছে।
এমতাবস্থায় স্পেনের হয়ে নারী বিশ্বকাপজয়ী ২৩ জন খেলোয়াড়সহ মোট ৮১ জন খেলোয়াড় ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। রুবিয়ালেস পদত্যাগ না করা পর্যন্ত এসব খেলোয়াড় স্পেনের হয়ে না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। 
এদিকে, ৪৬ বছর বয়সী রুবিয়ালেসকে বরখাস্ত করতে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছে স্পেন সরকার। ফিফাও শৃঙ্খলা ভাঙার জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। 
স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনে (আরএফইএফ) শুক্রবার  বিশেষ সভায় রুবিয়ালেসের পদত্যাগের আশা করেছিলেন অনেকেই। কিন্তু কিন্তু সভায় রুবিয়ালেস বলেছেন, “আমি পদত্যাগ করব না। কিছুতেই না।” রুবিয়ালেসের দাবি, তাকে দোষী বানানো হচ্ছে। এটা তার প্রাপ্য নয়।
নারী বিশ্বকাপের বিজয়মঞ্চে চুমুর সেই ঘটনা নিয়ে রুবিয়ালেস দাবি করেন, “হেনি হেরমোসোই আমাকে এতটা উচ্ছ্বসিত করেছিল। বলেছিলাম, পেনাল্টিটা ভুলে যাও (মেরি আর্পস যেটা সেভ করেছিল) এবং ছোট্ট একটা “পেক” (দ্রুত চুমু, যেটা গালের পাশে দেয়) হবে? সে বলেছিল ঠিক আছে। চুমুটা ছিল স্বতঃস্ফূর্ত, পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে সম্মতিসূচক। এটাই মূল ব্যাপার। সম্মতিসূচক চুমু কি আমাকে এই ঝামেলা থেকে উদ্ধার করতে যথেষ্ট নয়?”
কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে দেওয়া বিবৃতিতে হেরমোসোর দাবি অন্য রকম, “আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, লুইস রুবিয়ালেস তার বক্তব্যে যা যা দাবি করেছেন, বিশেষ করে সম্মতিসূচক চুমুর ব্যাপারটি—তার সঙ্গে এমন কোনও কথাবার্তাই হয়নি। এগুলো মিথ্যা এবং নিজের সুবিধার জন্য কাউকে নিয়ন্ত্রণ করার যে সংস্কৃতি তিনি গড়ে তুলেছেন, সেটারই অংশ। আমি এটি জানানোর প্রয়োজন অনুভব করেছি, কারণ আমি বিশ্বাস করি, খেলাধুলা কিংবা যেকোনও কাজের জায়গায় অসম্মতির পরও কেউ যেন এমন আচরণের শিকার না হয়। নিজেকে অসহায় লেগেছে, আবেগে পরিচালিত একজন যৌনতাবাদী মানুষের স্থান-কাল-পাত্র ভুলে যাওয়া আচরণ, যেখানে আমার কোনও সম্মতি ছিল না। সহজ ভাষায়, আমাকে সম্মান দেওয়া হয়নি।”
স্পেনে নারী ফুটবলারদের সংগঠন ‘ফুটপ্রো’র বিবৃতিতে হেরমোসো এবং আরও ৮০ জন ফুটবলার জানিয়েছেন, “বর্তমান নেতৃত্ব টিকে থাকলে স্পেনের হয়ে তারা খেলবেন না। এর মধ্যে স্পেনের হয়ে নারী বিশ্বকাপজয়ী ২৩ জন খেলোয়াড়ও আছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, “নারী বিশ্বকাপে পদক দেওয়ার সময় যা কিছু ঘটেছে, তার ভিত্তিতে আমরা বলতে চাই, এই বিবৃতিতে যেসব খেলোয়াড় সই করেছেন, তারা বর্তমান নেতৃত্বের অধীন স্পেনের হয়ে খেলবেন না।”
উল্লেখ্য, স্পেনের পরবর্তী ম্যাচ ২২ সেপ্টেম্বর মেয়েদের নেশনস লিগে সুইডেনের বিপক্ষে।
এদিকে, শিগগিরই রুবিয়ালেসকে আদালতে দাঁড় করানো হবে বলে জানিয়েছে স্পেনের স্পোর্টস কাউন্সিলের সেক্রেটারি ভিক্টর ফ্রাঙ্কোস। 
তিনি বলেন, “আদালতে তার আচরণের ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। সেখানে দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে বরখাস্ত করা হতে পারে।”
 
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, ইউরোনিউজ, স্পোর্টসম্যাক্স