Mon, Aug 28 2023 - 11:32:36 AM +06

রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে ভিয়ারিয়ালকে হারালো বার্সেলোনা


News Image
ভিয়ারিয়াল ও বার্সেলোনার ম্যাচ মানেই যেন গোলের নিশ্চয়তা। গোল উৎসব হলো আবারও। ম্যাচের শুরুর দিকেই জোড়া গোল করল বার্সেলোনা। প্রথমার্ধেই সমতা ফেরাল ভিয়ারিয়াল। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে এগিয়েও গেল তারা। একের পর এক আক্রমণে তাদের রক্ষণের পরীক্ষা নেওয়া বার্সেলোনা আবার জোড়া গোল করে জিতল রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে।  ভিয়ারিয়ালের মাঠে লা লিগার ম্যাচে ৪-৩ গোলে জিতেছে শাভি এর্নান্দেসের দল। গাভি ও ফ্রেংকি ডি ইয়ংয়ের গোলে প্রথম ১৫ মিনিটেই ২-০ গোলে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। হুয়ান ফয়থ, আলেকজান্ডার সরলথ ও আলেক্স বায়েনার গোলে এক পর্যায়ে ৩-২ গোলে এগিয়ে যায় ভিয়ারিয়াল। বদলি নেমে ফেরান তরেস সমতা ফেরানোর পর রবের্ত লেভানদোভস্কির গোলে ৩ পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে লা লিগার শিরোপাধারীরা। দুটি গোলে বড় অবদান রাখা লামিন ইয়ামালের দুটি শট ব্যর্থ হয় পোস্ট লেগে। কোনো গোল না পেলেও ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় তিনিই। ১৬ বছর বয়সী এই উইঙ্গারই ছিলেন বার্সেলোনার আক্রমণের মূল উৎস। 
 
শুরু থেকে জমে ওঠা ম্যাচে প্রথম মিনিটেই সুযোগ পেয়ে যান ইলকাই গিনদোয়ান। কিন্তু ভারসাম্য হারিয়ে উঁচু করে বাড়ানো বলে ঠিকমতো হেড নিতে পারেননি এই জার্মান মিডফিল্ডার। চার মিনিট পর বার্সেলোনার জালে বল পাঠান এতিয়েন কাপু। কিন্তু অফসাইডের জন্য মেলেনি গোল। সপ্তম মিনিটে ভিয়ারিয়ালকে এগিয়ে নেওয়ার দারুণ সুযোগ হাতছাড়া করেন আলেক্স বায়েনা। খুব কাছ থেকে তার শট বেরিয়ে যায় দূরের পোস্ট ঘেঁষে। তিন মিনিট পর স্বাগতিকদের দুটি চেষ্টা হাঁটু দিয়ে ঠেকিয়ে দেন মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেন।
অনেকটা খেলার ধারার বিপরীতেই দ্বাদশ মিনিটে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। কর্নারের পর বল পেয়ে দূরের পোস্টে লেভানদোভস্কিকে লক্ষ্য করে ক্রস বাড়ান ইয়ামাল। পোলিশ স্ট্রাইকারের একটু সামনে থাকা গাভি দারুণ হেডে খুঁজে নেন জাল। এই গোলে অবদান রেখে একটি জায়গায় আনসু ফাতিকে পেছনে ফেলে দিলেন ইয়ামাল। ২১ শতকে বার্সেলোনার হয়ে লা লিগায় সবচেয়ে কম বয়সে অ্যাসিস্টের রেকর্ড এখন তার। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ভালেন্সিয়ার বিপক্ষে ১৬ বছর ৩১৮ দিন বয়সে গোলে অবদান রেখেছিলেন ফাতি। ইয়ামাল অ্যাসিস্ট করলেন ১৬ বছর ৪৫ দিন বয়সে।
 
তিন মিনিট পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ডি ইয়ং। এই গোল স্বাগতিকরা একরকম উপহারই দেয় তাকে। ডি-বক্সের ভেতরে শট করার জন্য জায়গা খুঁজছিলেন লেভানদোভস্কি। তাকে ঠেকাতে গিয়ে ফাঁকায় থাকা ডি ইয়ংকে বল দিয়ে বসেন ভিয়ারিয়াল ডিফেন্ডার আলফন্সো পেদরাসা! পেনাল্টি স্পটের কাছ থেকে কাছের পোস্ট ঘেঁষে অনায়াসে ঠিকানা খুঁজে নেন ডাচ মিডফিল্ডার। ২৫তম মিনিটে পেদরাসার দারুণ শট কোনোমতে পা দিয়ে ঠেকিয়ে দেন টের স্টেগেন। সেই কর্নার থেকেই পরের মিনিটে দারুণ হেডে জাল খুঁজে নেন আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার ফয়থ। পোস্টে লেগে ভেতরে ঢোকা বল ঠেকানোর কোনো সুযোগই ছিল না বার্সেলোনা গোলরক্ষকের।
 
ছয় মিনিট পর বিপজ্জনক জায়গায় ফ্রি কিক পায় ভিয়ারিয়াল। ডি-বক্সের ঠিক বাইরে থেকে বায়েনার বুলেট গতির শট ঠেকিয়ে দেন টের স্টেগেন। ৪০তম মিনিটে দারুণ প্রতি-আক্রমণে বার্সেলোনার জালে বল পাঠান সরলথ। পেদরাসার নিচু ক্রস পেয়ে ক্লাবের হয়ে প্রথম গোল করতে তার কেবল একটা টোকা দিতে হয়েছে। যোগ করা সময়ের চতুর্থ মিনিটে পায়ের দারুণ কারিকুরিতে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন ইয়ামাল। শেষ সময়ে চমৎকার স্লাইডে তার শট ঠেকিয়ে দেন হোর্হে কুয়েনকা। সমতায় শেষ হয় প্রথমার্ধ।
 
দ্বিতীয়ার্ধে প্রথম সুযোগ পায় বার্সেলোনা। ৪৯তম মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে অরিওল রোমেউর শট ক্রসবারের উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। একটু পরেই চমৎকার এক আক্রমণে এগিয়ে যায় ভিয়ারিয়াল। পেদরাসার বাড়ানো বল ধরে বাঁকানো শটে দূরের পোস্ট দিয়ে ঠিকানা খুঁজে নেন আলেক্স বায়েনা। ৫৬তম মিনিটে সমতা প্রায় ফিরিয়েই ফেলেছিলেন ইয়ামাল। ডি বক্সের ভেতর থেকে তার বুলেট গতির শট ফেরে পোস্ট কাঁপিয়ে। চার মিনিট পর লেভানদোভস্কির শট ঠেকিয়ে ব্যবধান ধরে রাখেন ভিয়ারিয়াল গোলরক্ষক ফিলিপ ইয়ুর্গেনসেন। ৬৫তম মিনিটে মার্কোস আলোনসোর শট তার হাঁটুতে লেগে পোস্ট ঘেঁষে বাইরে চলে যায়!
 
ভিয়ারিয়ালের রক্ষণে প্রবল চাপ তৈরি করা বার্সেলোনা সমতা ফেরায় ৬৮তম মিনিটে। একটু আগে বদলি নামা ফেরান তরেসের বাম পায়ের শট ব্লকড হয়। ফিরতি বলে ডান পায়ের শট জড়ায় জালে। কাদিসের বিপক্ষে আগের ম্যাচেও জালের দেখা পেয়েছিলেন এই স্প্যানিশ উইঙ্গার। চার মিনিট পর এগিয়েও যায় বার্সেলোনা। ইয়ামালের শট গোলরক্ষরের গ্লাভস ছুঁয়ে পোস্টে লাগলে পেয়ে যান অরক্ষিত লেভানদোভস্কি। ফাঁকা জালে অনায়াসেই বল পাঠান তিনি। চলতি আসরে এটাই পোলিশ স্ট্রাইকারের প্রথম গোল। 
 
৮৪তম মিনিটে প্রতি আক্রমণে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ হাতছাড়া করে বার্সেলোনা। লেভানদোভস্কিকে কাট ব্যাক না করে নিজেই শট নেন ফাতি। সেটি ঠেকিয়ে দেন ভিয়ারিয়ালের একজন। ফিরতি বলে লেভানদোভস্কির শটও একজন ফিরিয়ে দেন। পরের মিনিটে গিনদোয়ানের দারুণ ক্রসে ভলি লক্ষ্যে রাখতে পারেননি ফাতি। যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন লেভানদোভস্কি। ফাতিকে বল না বাড়িয়ে গোলের জন্য শট নেন পোলিশ স্ট্রাইকার। তবে একা পেয়েও পরাস্ত করতে পারেননি ভিয়ারিয়াল গোলরক্ষককে। 
 
তৃতীয় মিনিটে ফাতির শট ঝাঁপিয়ে কোনোমতে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন ইয়ুর্গেনসেন। টিকে থাকে ভিয়ারিয়ালের আশা। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত গোল এনে দিতে পারেননি স্বাগতিকদের কেউ। তাই হারও এড়াতে পারেনি তারা। ৩ ম্যাচে দুই জয় ও এক ড্রয়ে ৭ পয়েন্ট নিয়ে তিনে উঠে এসেছে বার্সেলোনা। গোল পার্থক্যে এগিয়ে থেকে দুই নম্বরে আছে জিরোনা। টানা তিন জয়ে ৯ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে রিয়াল মাদ্রিদ।