Sun, Aug 4 2013 - 12:00:00 AM +06

কুষ্টিয়ার ধর্ষক পান্না মাস্টার ঢাকায় গ্রেফতার


News Image

ঢাকা : কুষ্টিয়ার আলোচিত স্কুলশিক্ষক হেলাল উদ্দিন ওরফে পান্না মাস্টারকে রাজধানীর মোহাম্মাদপুর থেকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ। দেড় শতাধিক ছাত্রীকে নিজে এবং বন্ধুরা মিলে ফাঁদে ফেলে ও ব্লাকমেইল করে ধর্ষণ করা বিকৃতযৌন মানসিকতার পান্না মাস্টারকে গ্রেফতার করতে একাধিক অভিযান চালানোর পর সফল হয় ডিবি পুলিশ। ডিএমপির তথ্য কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে, শনিবার সন্ধ্যায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে রবিবার দুপুরে বিস্তারিত জানানো হবে। অন্যদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের ক্রাইম এনালাইসেস সেলে সহকারী কমিশনার (এসি) রায়হানুল বলেন, তথ্য প্রযুক্তর সহায়তায় তাকে গত শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের চিনু মিয়া রোডের ভাড়া বাসা থেকে পান্না মাস্টারকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত হেলাল উদ্দিন পান্না কুষ্টিয়া বাড়াদি গ্রামের আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিতের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। কুষ্টিয়া শহরের আড়পাড়ার নিজ বাসায় প্রাইভেট টিউশনিতে আসা স্কুল-কলেজের এসব ছাত্রীদের তিনি চার সহযোগী নিয়ে ধর্ষণ করেন। হেলাল উদ্দিন পান্নার বিকৃত যৌন কেলেঙ্কারির প্রতিবাদে কুষ্টিয়ায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পরে সাব-ইন্সপেক্টর রবিউল ইসলাম অভিযুক্ত শিক্ষকের অবস্থান শনাক্ত করেন। এরপর কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপারের গাফিলতিতে মামলার আসামিদের ধরতে গড়িমসি করে পুলিশ। পরে একটি বেসরকারি টেলিভিশন ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রচার করলে মামলাটি গোয়েন্দো পুলিশে স্থানান্তর করা হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে। পান্না কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আলিমুজ্জামান টুটুল, কুষ্টিয়া যুবলীগ নেতা মনিরুল ইসলাম, যশোর স্থানীয় সরকার বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী দুলাল হোসেন ও গাংনী স্থানীয় সরকার বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম সজলকে নিয়ে তার বাসায় এই অপকর্ম করতেন। শুধু তাই নয়, তারা ছাত্রীদের সঙ্গে তাদের এসব দৃশ্য গোপন ক্যামেরায় ধারণ করতেন, যা সম্প্রতি ভিডিও ক্লিপস আকারে এলাকার যুবকদের হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার প্রতিবাদে এবং জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে গত ৭ জুলাই শতাধিক এলাকাবাসী ও ছাত্ররা ডিসি অফিসের সামনে বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা কুষ্টিয়া-রাজশাহী মহাসড়কের বারখাদা-ত্রিমোহুনীতে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে। এ ঘটনায় কুষ্টিয়া সদর থানার সাব-ইন্সপেক্টর এম মনিরুল ইসলাম ৭ জুলাই পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ অধীনে পান্নাসহ ৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। এ ছাড়া পুলিশ পান্নার ল্যাপটপ জব্দ করেছে যাতে এসব ভিডিও ক্লিপস ছিল। পান্না মাস্টার ছাড়াও এ মামলার আসামিরা হলো- প্রকৌশলী আলিমুজ্জামান ওরফে টুটুল, প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম ওরফে সজল ও প্রকৌশলী হাসানুজ্জামান হাসান। আসামিদের প্রত্যেকের বাড়ি কুষ্টিয়ার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামে। গত ৭ জুলাই কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ হাসানুজ্জামানকে গ্রেফতার করে। এ ছাড়াও এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার মনিরুল ইসলাম ওরফে মনো নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে কুষ্টিয়া গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তাকে আদালতের আদেশে কারাগারে পাঠানো হয়। মামলার অপর দুই আসামি আলিমুজ্জামান ও শরিফুল পলাতক রয়েছে। মামলাটি কুষ্টিয়া গোয়েন্দা শাখায় স্থানান্তর হলে গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ এ মামলার তদন্ত করার দায়িত্ব পান। এর আগে পান্না মাস্টারকে গ্রেফতারে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকায় একাধিক অভিযান চালায় র‌্যাব ও পুলিশ। তবে বারবারই তা ব্যর্থ হয়। অবশেষে ঢাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হলো।