Contact For add

Mon, Aug 28 2023 - 11:23:58 AM +06 প্রচ্ছদ >> স্বাস্থ্য

ডেঙ্গুতে অন্তঃসত্ত্বার ঝুঁকি বেশিডেঙ্গুতে অন্তঃসত্ত্বার ঝুঁকি বেশি

ডেঙ্গুতে অন্তঃসত্ত্বার ঝুঁকি বেশি
রাজধানীর বাসিন্দা তরশা নওশীন (২৭)। ১৭ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হন। প্রথমে তার স্বামী আক্রান্ত হন, এরপর তরশা। রাজধানীর একটি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। দায়িত্বরত চিকিৎসক বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে ২৯ ব্যাগ প্লাজমা দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ আল্ট্রাসনোতে তার গর্ভের সন্তানের হার্টবিট পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ শিশুটি মারা গেছে। রোগী বর্তমানে লাইফ সাপোর্টে আছে। তার অবস্থাও সংকটাপন্ন।
অন্তঃসত্ত্বা নারী ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হলে মায়ের এবং সন্তানের জীবন ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে ঘটেছে মৃত্যুর ঘটনাও। চলতি বছরে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকায় জ্বর হলেই অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ডেঙ্গু পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। ডেঙ্গু পরীক্ষার ফলাফল ইতিবাচক এলে তাদের অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন।
রাজধানীর সূত্রাপুর এলাকার বাসিন্দা সুরাইয়া বেগম (৩১)। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ২৮ সপ্তাহে প্রি-এক্লেমসিয়া বা গর্ভকালীন খিচুনির ঝুঁকি তৈরি হয় তার। তখন জ্বর থাকলেও ডেঙ্গু টেস্ট করা হয়নি তার। নানা জটিলতা দেখা দিলে হাসপাতালে ভর্তি করে তার পরিবার। 
দায়িত্বরত চিকিৎসক বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে আমি ডেঙ্গু টেস্ট করতে দিলে রিপোর্ট পজেটিভ আসে। ৩২ সপ্তাহে তার ডেলিভারি করতে হয়েছে। রক্ত পরীক্ষা করে রক্ত জমাট না বাঁধায় সবকিছু পাওয়া যাচ্ছে যা গর্ভকালীন খিচুনি এবং ডেঙ্গু উভয়ের সঙ্গে মিলে যায়। রক্ত দিলে সাধারণত খিচুনি শুধু যাদের থাকে তাদের রক্তপাত বন্ধ হয় কিন্তু ডেঙ্গু থাকলে হয় না। 
 
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৭ জুলাই ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রুমা বিশ্বাস (২৬) নামে ৯ মাসের এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু হয়। তার আগে, গত ২৫ জুলাই মারা যান ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এস এম নাজিয়া সুলতানা। এর আগে, গত ২৩ জুলাই ডেঙ্গুতে মারা যান বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক কান্তা বিশ্বাস। কান্তা বিশ্বাসও ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।
এ বছর এখন পর্যন্ত চারজন অন্তঃসত্ত্বা নারী ডেঙ্গুতে মারা গেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য সেবা অধিদফতর (ডিজিএইচএস)-এর পরিচালক, এমআইএস, অধ্যাপক ডা. শাহাদাত হোসেন। এমএইচ সমরিতা মেডিকেল কলেজের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. নাহলা বারী বলেন, গর্ভবতী মায়ের জ্বর, ঠান্ডা, কাশি যাইহোক না কেন ডেঙ্গু টেস্ট করতে হবে। ডেঙ্গু পজিটিভ হলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। কারণ ডেঙ্গুতে গর্ভবতী মায়েদের ঝুঁকি বেশি।  
 
তিনি আরও বলেন, এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত গর্ভবতী মায়ের সংখ্যা অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। আইসিইউতেও নিতে হয়েছে দুই একজনকে। গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গু হলে মা ও শিশুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। জ্বরের ৪র্থ, ৫ম দিন রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে যায়, তাই বেশি সতর্ক থাকতে হবে সে সময়। গর্ভকালীন অবস্থায় প্রাকৃতিকভাবেই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল থাকে বিধায় এ সময় গর্ভবতী নারীদের ডেঙ্গু হেমোরেজিক ও শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বেশি থাকে বলে উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। গর্ভবতী নারী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে মা ও গর্ভস্থ শিশুর জীবনে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। 
 
ডা. নাহলা বারী বলেন, গর্ভকালীন প্রথম তিন মাসে ঘন ঘন বমির কারণে এমনিতেই শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এ সময় গর্ভবতী নারী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে অত্যধিক জ্বরে শরীরে আরও বেশি পানিশূন্যতা দেখা দেয়, রক্তচাপ কমে যায়। এর ফলে গর্ভপাত হতে পারে।
 
‘ডেঙ্গু ইনফেকশন অ্যান্ড মিসক্যারেজ : আ প্রোসপেক্টিভ কেস কন্ট্রোল’ শীর্ষক এক গবেষণা অনুসারে, ডেঙ্গুতে অসুস্থতা গুরুতর পর্যায়ে গেলে গর্ভপাত এবং মৃতপ্রসব হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। ডেঙ্গু গর্ভাবস্থার পরবর্তী পর্যায়ে অসুস্থ মায়ের কাছ থেকে সরাসরি প্ল্যাসেন্টার মাধ্যমে তা ভ্রুণকেও সংক্রমিত করতে পারে। সম্প্রতি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিকের একজন নার্সের ১৭ সপ্তাহের ভ্রুণ গর্ভপাত হয়েছে বলে জানা গেছে।
শেখ হাসিনা জাতীয় ইনস্টিটিউট অফ বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারির ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক বলেন, গর্ভকালীন সময়ে নারীদের শরীরে অনেক ধরনের পরিবর্তন আসে। গর্ভকালীন অবস্থায় ডেঙ্গু হলে তাই অনেকেই প্রাথমিক পর্যায়ে বুঝতে পারেন না। মাথা ব্যথা, বুক ও পেটের সংযোগস্থলে ব্যথা হওয়া, বমি ভাব লাগা ইত্যাদি গর্ভকালীন উপসর্গ হলেও এগুলো ডেঙ্গুরও লক্ষণ তাই সতর্ক থাকতে হবে।
ডা. আশরাফুল হক আরও বলেন, গর্ভকালীন সময়ে ফ্লুইড অনেক হিসাব করেই দেওয়া লাগে, যেহেতু এ সময় তাদের শরীরে ফ্লুইড এমনিতেই বেশি থাকে। তাই ফ্লুইড ম্যানেজমেন্টে সতর্ক থাকতে হবে। গর্ভকালীন ডেঙ্গুকে সম্পূর্ণ পৃথকভাবেই দেখা উচিত এবং নিয়মিত চিকিৎসকের অধীনে থাকাটাও একান্ত জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।


Comments

Place for Advertizement
Add