হলি রিপোর্ট :
কাহিনী সংক্ষেপ ঃ বাড়ির নাম দখিনা হাওয়া। মজার ব্যাপার দক্ষিণ দিক থেকে অন্য বাড়িগুলো এই বাড়িটিকে এমনভাবে ঘিরে রেখেছে যে দখিনা হাওয়ার ছিটে ফোঁটাও কখনও এই বাড়িতে প্রবেশ করতে পারে না। দখিনা বাতাসের ঘাটতি সত্ত্বেও এই বাড়িতে বসবাসকারী মানুষগুলোর মনে সারাক্ষণ কিভাবে যেন দখিনা বাতাস প্রবাহিত হয়। এই বাড়ির যে মালিক তাকে সবাই আ হা খান নামেই চেনে। নামটা সংক্ষেপিত। পুরো নাম আবুল হাসান খান। খুব রসিক। সৌখিন মহাকাশ গবেষক। মনে প্রাণে তিনি বিশ্বাস করেন, খুব প্রতিভাবান একজন মানুষ তিনি কিন্তু পরোলোকগত স্ত্রীর অসহযোগিতার কারণেই যৌবনে তার প্রতিভার প্রকাশ ঘটাতে পারেননি। তার খুব ইচ্ছা ছিল, নিজের তিন মেয়ের যেকোন একটাকে তিনি মহাকাশ গবেষক বানাবেন। নাসায় তার চাকরী হবে। তিনি বুক ফুলিয়ে মেয়ের নাম বলবেন কিন্তু আফসোস তার কোন মেয়েরই মহাকাশ গবেষণায় বিন্দু মাত্রও উৎসাহ নেই।
আ হা খানের বড় মেয়ে চৈতী ইতিহাসে পড়াশুনা শেষ করে বাংলা ভাষা নিয়ে গবেষণা করছে। একটু খটকা লাগার মতই বিষয়। তার গবেষণার বিষয়বস্তু বাংলা ভাষার শব্দ সংকরায়ন ঘটিয়ে কিভাবে একটা রহস্যময় নতুন ভাষার সৃষ্টি করা যায়। তার ধারণা এটা করতে পারলেই সে ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করবে। এ কারণে অনেকের ধারণা তার মাথায় হয়তো গোলমাল আছে। এই বিষয়ে যে তাকে সবসময় সহযোগিতা এবং উৎসাহ দেয় সে তার বাধ্য স্বামী ডাঃ ইয়াকুব। এম বি বি এস ডাক্তার ভেবেই ফেসবুকে ইয়াকুবের সাথে প্রেম করে বিয়ের পর সে জানতে পারে তার স্বামী এ্্যালোপ্যাথী নয় হোমিওপ্যাথী ডাক্তার। প্রথমে চৈতি একটু কষ্ট পেলেও পরে মেনে নেওয়া ছাড়া তার আর কিছু করার থাকে না। বিয়ের পর থেকেই ইয়াকুব ঘরজামাই থাকে। অন্যান্য ঘর জামাইদের মত সেও একটু নির্লজ্জ প্রকৃতির। সকাল বিকাল অপমানিত হয়েও সে দিব্যি এই বাড়িতে টিকে আছে। তার আপন দুই ভাইও মফিজ ও ইজ্জত আলীও এই বাড়িতে থাকে তার কম্পাউন্ডার হিসাবে। পার্সেন্টেজ সুবিধায় রুগি সংগ্রহ করে সে। পুরানো রুগি যদি সাথে করে কোন নতুন রুগি আনতে পারে তাহলে সেদিন সে তার নিজের চিািকৎসা ফিফটি পার্সেন্ট ফ্রি পায়। যদি সে দুইটা রুগি আনে তাহেলে এক’শ পার্সেন্ট আর যদি সে তিনটা রুগি সাথে কওে আনতে পারে তাহলে তৃতীয় রুগির ভিজিট থেকে ফিফটি পাসেন্ট পায়। এভাবে ভালই চলতে থাকে তার ডাক্তারী।
মেঝ মেয়ে আঁখি ব্যস্ত ব্যান্ড সঙ্গীত নিয়ে। গলায় সুরের বেহাল দশা বলেই তার ব্যান্ড সঙ্গীত বেছে নেওয়া। তার ধারণা ব্যান্ড সঙ্গীত গাইতে খুব ভাল সুরেলা গলার দরকার হয় না। তার বেসুরা গলার সঙ্গীত সাধনায় বাড়ির সবাই অতিষ্ঠ। একটু ঝগড়াটে ও বদ মেজাজী টাইপের সে। ঝগড়াটে ও বদ মেজাজী বলেই কোন ছেলে তার ধারে ঘেষতে ভয় পায়। তবে একজন ব্যতিক্রম, সে মফিজ। আঁখিকে পছন্দ করে সে। যেকোন ছল ছুতো নিয়ে সে বার বার আঁখির সামনে আসার চেষ্টা করে। বেশি গায়ে পড়া ভাব একেবারেই সহ্য হয় না আঁখির। সে মনে মনে পছন্দ করে তাদেরই ভাড়াটে বনিকে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে বড় সে। তার ছোট দুই বোনের নাম নিতু ও মিতু। তারা দু’জনেই কলেজে পড়ে। নিতুর বাম পাটা স্বভাবিক না। সে একটু খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটে। বনি আইনে লেখাপড়া করে আইনজীবী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। বাবা মা নেই তাই ফুফু যুথিমালার কাছে মানুষ সবাই। এখনও কুমারী তিনি। একটা কলেজে শিক্ষকতা করেন। বড় ভাইয়ের এতিম তিন সন্তানকে মানুষ করতে গিয়েই জীবনের সমস্ত শখ, স্বাধীনতা বিসর্জন দিয়েছে সে। বিয়েটাও করা হয়ে উঠেনি তার। তবে বর্তমানে আ হা খানকে দেখলেই তার মনের ভেতর যেন কেমন নড়েচড়ে উঠে। একই অবস্থা হয় আ হা খানেরও। আস্তে আস্তে তারা মনের খুব কাছাকাছি চলে আসে। এই নিয়ে নানান বিব্রতকর ঘটনারও উদ্ভব হতে থাকে।
ছোট মেয়ে তিথি খুব দস্যি। বখাটে টাইপের ছেলেদের তার খুব পছন্দ। তার ধারণা এই টাইপের ছেলেরা একটু বেশি মাত্রায় সাহসী হয়। এদের কারো সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে পারলেই মহল্লায় বুক চিতিয়ে চলাফেরা সম্ভব। এই ধরণের ছেলেরা বিয়ের পর স্বামী হিসাবেও বউয়ের অনুগত হয় বেশি। ন্যাটা মাসুদ নামের মহল্লার এক বখাটে ছেলের সাথে তার খুব ভাল সম্পর্ক। বা হাত দিয়েই সে সব কাজ করে বলেই মাসুদের নামের সাথে ন্যাটা বিশেষণের যোগ। দখিণা হাওয়ার পাশেই সাঙ্গ-পাঙ্গ নিয়ে সারাক্ষণ আড্ডা দেয় সে। অদ্ভূত দেখতে একটা মটরসাইকেলে চড়ে সে, যেটা তার অর্ডার দিয়ে বানিয়ে নেওয়া। এই মটরসাইকেল যে অঞ্চল দিয়ে যায় তার শব্দে আধা কিঃ মিঃ মধ্যে সবাই জানতে পারে ন্যাটা মাসুদ এখন কোথায় অবস্থান করছে। ন্যাটা মাসুদের সাথে তিথির মেলামেশা আ হা খান বার চোখে দেখেন না কিন্তু তিথির কাছে তার ভাল লাগাই সবকিছুর উর্ধ্বে। ন্যাটা মাসুদই যে তিথিকে ভালবাসে তা নয় ইজ্জত আলীও তিথিকে ভালবাসে কিন্তু তিথি তার নামও শুনতে পারে না। এরপরও ইয়াকুব তার দুই ভাইকে হাল ছাড়তে নিষেধ করে। কারণ তার দুই ভাই যদি আঁখি ও তিথিকে কোনভাবে পটিয়ে বিয়ে করতে পারে তাহলে ভবিষ্যতে দখিনা হাওয়ার মালিক তারাই তিন ভাই।
বাড়ির নাম দখিনা হাওয়া হলেও এলাকার যুবকদের কাছে এই বাড়িটা “ক্যাট হাউস” নামেই পরিচিত। আ হা খানের তিন মেয়ের নামের প্রথম বর্ণ, বড় মেয়ে চৈতীর “সি”, মেঝ মেয়ে আঁখির “এ” এবং ছোট মেয়ে তিথির “টি” নিয়েই যুবকরা মজা করে এই বাড়িটাকে ক্যাট হাউস নামে ডাকে। এভাবে রঙ্গ-রসের মধ্যে দিয়েই ক্যাট হাউজ সারাক্ষণ মেতে থাকে। হঠাৎ রাজু নামে এক আগন্তুকের আর্বিভাব হয়। তার দাবী সে যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে এবং সম্পর্কে সে আ হা খানের ভাগ্নে। দীর্ঘ দিনের যোগাযোগহীনতায় তারা একে অপরকে চেনে না। আ হা খানের বাবার দুই বিয়ে। বড় পক্ষের স্ত্রীর ছিল একটাই মাত্র মেয়ে। বিয়ের পর সপরিবারে সে যুক্তরাজ্যে চলে যায়। এরপর থেকে সে আর কখনও বাংলাদেশে আসেনি। রাজুর আগমন নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়। সে কিছুই পরিস্কার করে বলে না। আ হা খানের বড় মায়ের নামেই ক্যাট হাউজের মালিকানা। রাজুর দাবী যদি সত্যি হয় আইনতঃ রাজুই এই বাড়ির প্রকৃত উত্তরাধিকার। সবার ধারণা সে হয়তো সম্পত্তির দাবী প্রতিষ্ঠা করতেই এতদিন পর বাংলাদেশে এসেছে। আ হা খানেরও এই বাড়ি রাজুকে বুঝিয়ে দিতে কোন আপত্তি নেই কিন্তু রাজু মুখ ফুটে কিছুই বলে না। কোন কিছু পরিস্কার না হয়ে কাহিনী আরো জট পাকাতে থাকে।
ইয়াকুব রাজুকে হাত করে এই বড়ির কিছু অংশ পেতে চেষ্টা করে। বনি চেষ্টা করে এই বাড়ি বিক্রি করিয়ে দিয়ে মোটা একটা অংকের টাকা তার পকেটে ঢোকাতে। তিথির পরিকল্পনায় ন্যাটা মাসুদ হুমকী ধামকী দিয়ে রাজুকে আবার দেশ ছাড়ানোর চেষ্টা করে। কারো কোন পরিকল্পনাতেই যখন কোন কাজ হয় না তখন সবাই মিলে রাঙামাটি পিকনিক করতে গিয়ে রাজু কিডন্যাপ হয়। সন্দেহের আঙুল উঠে একে আপরের দিকে কিন্তু কেউ এই দায় স্বীকার করতে চাই না। প্রশ্ন এসে দাঁড়ায় তৃতীয় কোন পক্ষ কি তাহলে এটা করেছে? করলে সেও বা কে? তারই বা উদ্দেশ্য কি? রাজু কি সত্যিই আ হা খানের ভাগ্নে? সে কি সত্যিই সম্পত্তির দাবী প্রতিষ্ঠা করতে এই বাড়িতে এসেছে? ক্যাট হাউজের ভাগ্যেও বা কি লেখা আছে? অন্যান্য সম্পর্কগুলোর পরিণতিও বা কি হবে? কাহিনীর শেষেই সব প্রশ্নের জবাব মেলে।
ক্যাট হাউজ
রচনা ঃ মানস পাল
পরিচালনা ঃ আকাশ
প্রতি : রবি, সোম, মঙ্গল সন্ধ্যা ৭.৩০ মিনিট
শুধু মাত্র জঃা তে
প্রযোজনা: ঘাসফুল টেলিফিল্ম
অভিনেতা অভিনেত্রী
আ হা খান ঃ আবুল হায়াত
ন্যাটা মাসুদ ঃ মীর সাব্বির
বনি ঃ ইন্তেখাব দিনার
ইয়াকুব ঃ ফজলুল রহমান বাবু
মফিজ ঃ রাশেদ মামুন অপু
যুথিমালা ঃ ডলি জহুর
চৈতী ঃ মনিরা মিঠু
আাঁখ ঃ নাদিয়া
তিথি ঃ ফারজানা রিক্তা
ইজ্জত আলি ঃ জামাল রাজা
নিতু ঃ সানজিদা
মিতু ঃ মৌরী সেলিম
দিলজান ঃ
বাহার ঃ উত্তম
শাহানা ঃ সাইকা অহমেদ
বাইক ঃ শহিদ
বাইক ঃ সেলিম
বাইক ঃ
বাইক ঃ
সহ আর অনেকে