Contact For add

Sun, Mar 24 2024 - 2:34:05 PM +06 প্রচ্ছদ >> অপরাধ

Kishor gang has become terrifying in Mirpurমিরপুরে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং

মিরপুরে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং

আবুল কাশেম, সিনিয়র রিপোর্টার :

রাজধানী ঢাকার মিরপুর অঞ্চলজুরে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং। আধিপত্য নিয়ে গোষ্ঠিদ্বন্দ্ব, ছিনতাই, মারামারি, খুনখারাবিসহ প্রায় সব ধরনের ফৌজদারি অপরাধে জড়িত এই কিশোর গ্যাং গ্রুপগুলো। মিরপুরের পাড়া মহল্লার এই অপরাধী চক্রের তান্ডবে স্থানীয় সাধারন মানুষ দিন কাটাচ্ছে আতংকের মধ্যে।

হলি টাইমসের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাড়া মহল্লায় বা অলি-গলিতে গড়ে ওঠা এই কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যদের বয়স অনেকটা বিশ বছরের মধ্যে । এরা নিম্ন বিত্ত এবং অনেকটা মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে। তবে এদের নেতৃত্বে রয়েছে পাড়ার উচ্চবিত্ত ঘরের বড় ভাই, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা এবং অন্তরালে থাকা অপরাধীদের গডফাদাররা।

মাদক, চোরাকারবারি এবং এলাকার ক্ষমতা ধরে রাখতেই মূলত এদের ব্যবহার করা হয়। এভাবে ব্যবহার হতে গিয়েই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধে হাত পাকিয়ে ভয়ংকর  হয়ে উঠেছে। এতে আইন শৃঙ্খলার অবনতিসহ সামাজিক সুরক্ষার মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।

মিরপুরের স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, এই সব কিশোরদের যে সময় হাতে কলম থাকার কথা, স্কুল কলেজে পড়ার কথা,  সেই সময়ে হাতে মাদক এবং অস্ত্র তুলে দিচ্ছে কারা। কারা অপরাধ জগত সৃষ্টি করছেন | এমন প্রশ্ন তাদের। তারা বলেছেন, কিশোর গ্যাং নির্মুল করতে হলে যারা এই গ্যাং লালনপালন করেন তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা জরুরি ।  দিনেদিনে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য বৃদ্ধি হওয়ার কারণ খুঁজেছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরাও।

ডিএমপির মিরপুর বিভাগের মিরপুর মডেল থানা, পল্লবী থানা, শাহ আলী থানা, দারুস সালাম থানা, কাফরুল থানা, ভাসানটেক থানা, রূপনগর থানায় কিশেোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ,জিডি রয়েছে। বিভিন্ন সময় এদের বিরুদ্ধে মামলা হয়, পুলিশ আইনগত ব্যবস্থাও নেয়। তবে পুলিশের জোরালো তৎপরতা না থাকায় কিশোর গ্যাং আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

হলি টাইমসের এই প্রতিবেদক অনুসন্ধান করে দেখেছেন যে, মিরপুরের পল্লবী এলাকাতে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা সবচেয়ে বেশি । এখানে রয়েছে কুখ্যাত "ভইরা দে" কিশোর গ্যাং গ্রুপ। এই গ্রুপের প্রধান হচ্ছে আশিক। নিজের নামেই গ্রুপটি চালায়  এই কিশোর গ্যাং লিডার। "ভইরা দে" কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা এতটাই ভয়ঙ্কর যে তারা কথায় কথায়  মানুষকে ছুড়িকাঘাত করে আহত করছে। অনেক সময় হত্যাকান্ডের মত ঘটনা ঘটাচ্ছে এই "ভইরা দে" বাহিনীর সদস্যদরা। এই বাহিনীর সদস্যরা চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক সেবন, মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ড জড়িত।  এতে করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে এলাকাবাসি।  স্থানীয়রা বলছে, এর আগেও এই "ভইরা দে" গ্রুপের লিডার আশিকসহ তার সদস্যদের নামে একাধিক মামলা হয়েছে। জামিনে এসে এরা আবার অপরাধমূলক কর্মকান্ড শুরু করে  । এই গ্রুপের নেতা আশিকের বাবা একজন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা। তার প্রশয়ে "ভইরা দে" বাহিনীর সদস্যরা অপরাধে জরাচ্ছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ।

সম্প্রতি, পল্লবী থানাধীন ১১ নম্বর সেকশনের ই- ব্লকের ৫ নাম্বার লাইনে খিচুরি পট্রির তালতলা বস্তির ভাংগারী দোকানের সামনে সিয়াম (৯) নামের এক শিশুর উপর হামলা চালায় "ভইরা দে" আশিক গ্রুপের সদস্যরা। এতে গুরুতর আহত হয় শিশু সিয়াম।

স্থানীয়দের মাধ্যমে শিশু  সিয়ামের আহত হওয়ার কথা শুনে সিয়ামের বড় ভাই স্বাধীন (১৪) এবং তার মা শাহীনুর বেগম (৩০) ও শহীদুল ইসলাম বাবুল ছুটে আসলে তাদের উপরেও অতর্কিত ভাবে লোহার রড, পাইপ , লাঠি ও  দেশি অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। এতে আহত হয় বেশ কয়েকজন।

কিশোর গ্যাংয়ের গোষ্ঠি দ্বন্দ্বে আহত কয়েকজন । ছবি : হলি টাইমস ।

হামলার সময় আহত শিশু সিয়ামের মা শাহীনুরকে শ্লীলতাহানী করা হয় বলে অভিযোগ উঠে। এদিকে আহত অবস্থায় সিএনজি যোগে সিয়াম, স্বাধীন ও তার মা শাহীনুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় আসে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পল্লবী থানায় সিয়ামের বাবা শহীদুল ইসলাম বাবুল (৩৫) বাদী হয়ে "ভইরা দে" কিশোর গ্যাং গ্রুপের লিডার আশিকসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ্য করাসহ ৪০/৫০ জনকে আসামী করে পল্লবী থানায় একটি মামলা করেন ( মামলা নং ২৯ তারিখ ১৬/০৩/২০২৪ইং,ধারা১৪৩/৩২৩/৩২৪/৩২৫/৩০৭/৩৭৯/৫০৬  )। অভিযুক্ত আসামিরা হলেন, ১) আশিক (২২), ২) পিন্টু (২৬), ৩) মোঃ চাঁদ (২২) , ৪) আপ্পিক (২০), ৫) সজিব (২০), ৬) পারভেজ (২০), ৭) ইমন (২১), ৮) সোহেল (২৩), ৯) রোমান (২১) সহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪০/৫০ জন আসামী করা হয়েছে। এ বিষয়ে অভিযোগ তদন্তকারি কর্মকর্তা পল্লবী থানার এস আই দেবাশীষ হালদার " সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনার তদন্ত চলছে, এবং "অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।  অনেক আসামী গ্রেফতার হয়েছে। সব আসামীকে গ্রেফতার করা ।

১৫ই মার্চ তারিখ শুক্রবার বিকেল ৫ টার দিকে  রাস্তার পার হওয়াকে কেন্দ্র করে বাবু (৩২) নামের এক ব্যক্তিকে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা নির্মম প্রহার করে। বাবুর পিতা বাসেদ মাতা হোসেনেয়ারা বেগম । থাকেন শাহ আলী থানার চিড়িয়াখানা রোডের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে।  

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন,কিশোর গ্যাংয়ে ৮/১০ জনের একটি দল দুটি অটোরিকশায় যাচ্ছিলো। অন্যদিকে রাস্তা পার হচ্ছিল বাবু। তখন অটোরিকশার  ধাক্কায় বাবু পরে যায়। এসময় বাবু অটো চালকের ওপর রেগে গেলে  কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা এসে বাবুকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এক পর্যায়  আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে কিশোর গ্যাংয়ের ১৫/২০ জন মিলে বাবু কে তুলে নিয়ে যাবে বলে হুমকি দেয়। এ বিষয়ে শাহআলী থানায় একটি অভিযোগ করেছেন ভিকটিমের পরিবার। প্রতিদিন এমন অনেক ঘটনা ঘটে চলেছে মিরপুরের বিভিন্ন থানায়। কিশোর গ্যাংয়ের অসামাজিক সন্ত্রাসী কাযকলাপে অতিষ্ঠ এলাকার সাধারন মানুষ। অমানিত আর হামলার ভয়ে কেউ কিছু বলতে সাহস পাচ্ছে না। এতে সামাজিক সুরক্ষা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে।

মিরপুরের সাতটি থানায় যে সব কিশোর গ্যাং সক্রিয় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, পটেটো রুবেল গ্রুপ, অতুল গ্রুপ, আশিক গ্রুপ, জল্লা মিলন গ্রুপ, রকি গ্রুপ, পিন্টু-কাল্লু গ্রুপ, মুসা হারুন গ্রুপ ওরফে ভাই ভাই গ্রুপ, রোমান্টিক গ্রুপ, সোহেল গ্রুপ, ইসামিন, ইমন ও জুয়েল গ্রুপ, রিংকু ও এসকে সোহেল ওরফে কাইল্লা সোহেল গ্রুপ, খলিল গ্রুপ, আড্ডু-মিলন ঢালী গ্রুপ, সুজন-রাসেল গ্রুপ, সুমন-বিপ্লব গ্রুপ,রাব্বি ও আশিক গ্রুপ। এছাড়াও চিড়িয়াখানা রোড ঈদগাঁহ মাঠ ও উত্তর বিশিল বালুর মাঠ  এলাকাতে বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং গ্রুপ রয়েছে। এরা আধিপত্য বিস্তার কে কেন্দ্র করে মাঝেমধ্যেই মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। বিঘ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি।

রাতের বেলায় কিশোর গ্যাংয়ের আক্রমনের একটি দৃশ্য : ছবি হলি টাইমস ।

পুলিশের অপরাধ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এই কিশোর গ্রুপের সদস্যরা চুরি, ছিনতাই, লুট, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি করে থাকে। এই গ্রুপগুলোর মধ্যে এমন অনেক কিশোর গ্যাং রয়েছে যারা ভাড়াটিয়া খুনি হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের স্থানীয় কোনো কোনো নেতার  ছত্রছায়ায় এই কিশোর গ্যাং পালিত হওয়ায় পুলিশ অনেক সময় কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারছেনা বলে মনে করেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।

মিরপুর বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার মো. জসিম উদ্দিন হলি টাইমসকে বলেছেন, শুধু কিশোর গ্যাং নয় যে বা যারা অপরাধ করবে, আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাবে তাদেরই পুলিশ আইনের আওতায় আনবে। মিরপুর কিশোর গ্যাং বলে কিছু থাকবে না। পুলিশ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেবে।

মিরপুর অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা এলিট ফোর্স র‌্যাবের কর্মকর্তারা বলেছেন, কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়টি তারা অবহিত আছেন। তাদের কাছে সব অপরাধীই সমান। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে কোনো অপরাধীইকে ছাড় দেওয়া হবে না।

 



Comments

Place for Advertizement
Add