আন্তন নাগ(অন্তু): ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪৬ নং ওয়ার্ডসহ ঢাকা শহরের ৩৭টি ওয়ার্ডে কোন খেলার মাঠ বা পার্ক নেই। জনগণ মাঠ-পার্কের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ঘরের কাছে হাঁটা দূরত্বে মাঠ-পার্ক না থাকলে মানুষ দূরবর্তী মাঠ-পার্কে যেতে আগ্রহী হন না। অভিভাবকরাও দূরবর্তী মাঠ-পার্কে শিশুদের যেতে দিতে উৎসাহী হন না। এ পরিস্থিতিতে ঘরের কাছে কম ব্যস্ত সড়কে গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে শিশু-কিশোরদের খেলাধূলার আয়োজন একটি সময়োপযোগী সমাধান।
এই লক্ষ্যে আজ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪৬ নং ওয়ার্ডের সার্বিক সহযোগিতায় হেলথব্রিজ ফাউন্ডেশন অব কানাডা, অক্ষয় দাস লেন (কাঠ বাগিচা) এলাকাবাসী, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে অক্ষয় দাস লেন-গেন্ডারিয়া সড়কে গাড়িমুক্ত সড়ক আয়োজনের উদ্বোধন করা হয়।
সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার বিকাল ৩.০০ থেকে ৫.০০ টা পর্যন্ত গাড়িমুক্ত সড়ক আয়োজনে দাবা-লুডু-ক্যারাম-দড়ি লাফ-ব্যাডমিন্টন, ছবি আঁকা, কারুকাজ শিখানোসহ বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করা হবে।
প্রধান অতিথি হিসেবে গাড়িমুক্ত সড়ক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং প্যানেল মেয়র জনাব শহীদ উল্লাহ্ মিনু।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী।প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪৫, ৪৬, ৪৭ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত কাউন্সিলর সাথী আক্তার, গাড়িমুক্ত সড়ক আয়োজক কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমান।
প্যানেল মেয়র জনাব শহীদ উল্লাহ্ মিনু তার বক্তব্যে বলেন, ৪৬ নং ওয়ার্ডে কোন খেলার মাঠ বা পার্ক না থাকায় এলাকাবাসীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশেষত মেয়ে শিশুরা খেলাধূলার সুযোগ থেকে একেবারেই বঞ্চিত। গাড়িমুক্ত সড়ক আয়োজনের মাধ্যমে ঘরের কাছে হাঁটা দূরত্বেই খেলাধূলার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় মেয়ে শিশু-কিশোরীরাও উপকৃত হবে। ডিএসসিসি’র মাননীয় মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ডিএসসিসি’র প্রতিটি ওয়ার্ডে অন্তত একটি খেলার মাঠ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। প্রয়োজনীয় স্থান সংকুলান করে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন সময় সাপেক্ষ। ওয়ার্ডভিত্তিক বা এলাকাভিত্তিক এ ধরণের খেলাধূলার আয়োজন এলাকাবাসীর জন্য খুবই কার্যকরী।
সাথী আক্তার তার বক্তব্যে বলেন, সুস্থ জীবন লাভের জন্য চাই খেলাধূলা। আধুনিক যুগ যান্ত্রিকতার যুগ। যন্ত্র নির্ভরতার ফলে কায়িক পরিশ্রম হয় নিতান্তই অল্প। শিক্ষার্থীরা যান্ত্রিক বাহনে স্কুলে যায়, বিদ্যালয়ে খেলার সুযোগ নেই। ফলে তাদের বিকাশ সঠিক হচ্ছে না এবং তারা এককেন্দ্রিক মানসিকতায় বেড়ে উঠছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণে গাড়িমুক্ত সড়ক আয়োজন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় এ কার্যক্রম সফল করতে সকলের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
হেলাল আহমেদ বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশে ৮৬% প্রি-স্কুল শিশু স্মার্ট ফোনে আসক্ত। খেলার মাঠের অভাবে ৫২% শিশু স্মার্টফোনে আসক্ত হচ্ছে। আমরা শিশুদের দোষারোপ করি যে তারা ইলেকট্রনিক ডিভাইসে আসক্ত, প্রকৃতপক্ষে আমরাই তাদের মাঠ-পার্কে যাওয়ার সুযোগ দিতে পারিনি। গাড়িমুক্ত সড়কের আয়োজনের মাধ্যমে শিশুদের খেলাধূলার সুযোগ কিছুটা হলেও ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব। এলাকার বাসিন্দারা যদি সচেষ্ট হয়, তাহলে অন্যান্য এলাকায়ও এ কার্যক্রম ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে নগরব্যাপী আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসা সম্ভব।
জিয়াউর রহমান বলেন, ২০১৬ সালে প্রথম বাংলাদেশে সরকারিভাবে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস পালন হয়ে আসছে। বর্তমানে মোহাম্মাদীয়া হাউজিং সোসাইটি,শ্যামলী বাবর রোড ও খিলগাঁও গাড়িমুক্ত সড়ক আয়োজিত হচ্ছে। এ উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা এলাকাভিত্তিক সামাজিকীকরণের সুযোগ তৈরির পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়ির বিভিন্ন অসুবিধা, যেমন- যানজট, দূষণ, দুর্ঘটনা ইত্যাদি বিবেচনায়, ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছি।
গাউস পিয়ারী বলেন, বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রতি ১২,৫০০ মানুষের জন্য পার্কের জন্য ১ একর এবং খেলার মাঠের জন্য ২ একর জায়গা প্রয়োজন। ঢাকা শহরের মাত্র ১৬% মানুষের খেলার মাঠে প্রবেশগম্যতা রয়েছে, বাকি ৮৪% মানুষ এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত। সড়ক আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গণপরিসর। কিন্তু আমরা ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং পার্কিং সুবিধা দিয়ে এ গণপরিসর থেকে মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছি। গাড়িমুক্ত সড়ক আয়োজনের মাধ্যমে সড়কে জনগণের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার বার্তাটিই আমরা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে চাই। এ ধরণের কার্যক্রম শিশুদের বিকাশে ভূমিকা রাখবে এবং তাদের মধ্যে নের্তৃত্বের বিকাশ ঘটবে।
Inauguration of car-free road in Gandaria to control private vehicles
Anton Nag (Antu): There is no playground or park in 37 wards of Dhaka city including ward 46 of Dhaka South City Corporation. People are deprived of the facilities of fields and parks. People are not interested in going to distant parks unless they are within walking distance of their homes. Parents are also reluctant to send their children to distant field-parks. In this situation, organizing sports activities for children and teenagers by controlling traffic on less busy roads near the house is a timely solution.