Contact For add

Fri, Apr 19 2013 - 12:00:00 AM UTC প্রচ্ছদ >> প্রবাস

10 million workers in fear of Saudiসৌদিতে আতঙ্কে ১০ লাখ শ্রমিক

সৌদিতে আতঙ্কে ১০ লাখ শ্রমিক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দুর্বল কূটনৈতিক যোগাযোগের কারণে সৌদি আরবের শ্রমবাজারে অস্থিরতার মাঝে সময় কাটাচ্ছে ১০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি কর্মী। সৌদিতে কর্মরত বাংলাদেশিদের কাছ থেকে জানা গেছে, ইকামা (ওয়ার্ক পারমিট) ট্রান্সফার পদ্ধতি স্থগিত থাকার কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

২০০৭ সাল থেকে ইকামা ট্রান্সফার পদ্ধতি বন্ধ রেখেছে সৌদি সরকার। অথচ কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে ইতিমধ্যে ভারত ও পাকিস্তান সৌদিতে তাদের শ্রমিকদের জন্য ইকামা ট্রান্সফার সিস্টেম চালু করে নিয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে তেমন কোনো কূটনৈতিক উদ্যোগ নেয়া হয়নি ফলে কর্মীরা আতঙ্কে আছেন। এর মধ্যে গত ১৭ এপ্রিল সৌদি আরবের শ্রমমন্ত্রী আদেল আল-ফাকিহ জানান, দেশটিতে যেসব বিদেশি শ্রমিক অবৈধভাবে কাজ করছেন, তাদের ধরতে সরকার শিগগির নতুন অভিযান শুরু করবে।

তিনি জানান, নতুন আইন অনুযায়ী যদি কোনো ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের মালিক গোপনে অবৈধ শ্রমিক নিয়োগ দেন, তবে সেটিকে নিষিদ্ধ করা হবে। প্রত্যেক অবৈধ শ্রমিককে ২৬ হাজার ৭০০ ডলার (প্রায় ২০ লাখ ৮৩ হাজার টাকা) জরিমানা বা দুই বছরের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। শ্রমবাজার সংস্কারের অংশ হিসেবে অবৈধ শ্রমিককে বের করে দিচ্ছে সৌদি সরকার। দেশটিতে এখন বেকারত্বের হার প্রায় ১২ শতাংশ।

সরকার চাইছে, অবৈধ শ্রমিকদের বের করে দিয়ে বেকার নাগরিকদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পদক্ষেপ জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জাফর আহমেদ বলেন, ‘সৌদির আইন অনুসারে সেখানে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনস্যুলারকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। এর পরেও যদি কোনো শ্রমিককে দেশে ফেরত আসতে হয় তাহলে বিষয়টি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্যই ইতিবাচকই হবে। এরপর কারণ সৌদি শ্রমবাজারে বাংলাদেশ নিয়মের ভেতরে থেকে অধিকহারে শ্রমশক্তি রপ্তানির সুযোগ পাবে।’

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের নজরদারিতে রয়েছে।’ তিনি জানান, সমস্যার জন্ম হয়েছে ২০১০ সালে সৌদি সরকারে একটি সিদ্ধান্তের কারণে। সৌদি নাগরিকদের কর্মমুখী করতে সে সময় সরকার যে কোনো কারখানায় ২০ শতাংশ সৌদি নাগরিক থাকা বাধ্যতামূলক করে দেয়। এর ব্যতিক্রম হলে সে প্রতিষ্ঠানটি রেড কেটাগরিতে পড়ে যাবে। আর রেড ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের ইকামা ট্রান্সফার বন্ধ করে দেয় সে দেশের সরকার।

বাংলাদেশি শ্রমিকরা বেশিরভাগই রেড ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকায় এরা ইকামা নবায়ন করতে পারছেন না। ফলে তারা দিন দিন অধিকহারে অবৈধ তালিকায় পড়ে যাচ্ছে। সৌদিতে কর্মরত শামীম আহমেদ জেদ্দা থেকে হলিটাইম্‌স ডটকমকে জানান, বেশ কিছুদিন আগে শ্রমিকদের অবৈধ অবস্থান ১৫ দিন হলেই তাকে গ্রেপ্তারের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সে সময় অনেকটা গণগ্রেপ্তারের মতো ঘটনা ঘটতে থাকলে কিছু শ্রমিক দেশে ফিরতে শুরু করে।

সে পরিস্থিতে সৌদি আরবের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। তখন সৌদি বাদশাহ আব্দুল্লাহ এই ধরপাকড় বন্ধের নির্দেশ দিয়ে আবারও সেই রেড ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৩ মাসের সময় বেঁধে দিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রবাসী শ্রমিকদের ট্রান্সফার করে অন্য কোম্পানিতে স্থানান্তর অথবা দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ২০ শতাংশ হারে সৌদি নাগরিকদের চাকুরির সুয়োগ দিয়ে ওইসব প্রতিষ্ঠানের ও শ্রমিকদের স্ট্যাটাস গ্রিন ক্যাটাগরিতে উন্নীত করার সুযোগ দেয়া হয়। তিন মাস পর যারা তাদের স্ট্যাটাস গ্রিন ক্যাটাগরিতে নিতে ব্যর্থ হবে তাদের প্রতিষ্ঠানের ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আবারো ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হবে।

এমন অবস্থায় বাংলাদেশের শ্রমিকরা বৈধ হতে গেলে একমাত্র উপায় তাদের রেড ক্যাটাগরির কফিল (নিয়োগকর্তা) পরিবর্তন করে গ্রিন ক্যাটাগরির কফিলের কাছে ইকামা ট্রান্সফার করা। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার, শ্রম ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ও সৌদি আরবের রিয়াদস্থ দূতাবাস ও জেদ্দা কনস্যুলেট সৌদি সরকারের সঙ্গে যথার্থ আলোচনা না করে বিভিন্ন মিডিয়ায় বিবৃতি দিচ্ছেন যে, সৌদি সরকারের আইন অনুযায়ী এক কপিলের শ্রমিক অন্য কফিলের অধীনে কাজ করা অবৈধ।

সুতরাং বাংলাদেশ সরকারের কিছু করার নেই। তারা সৌদি প্রবাসীদেরকে নিজস্ব কফিলের অধীনে কাজ করার পরামর্শ দিচ্ছেন। শামীম আহমদ আরো জানান, বর্তমান বাস্তবতা হলো নিজস্ব কফিল রেড ক্যাটাগরিতে থাকায় তার শ্রমিকের ইকামা নবায়ন করতে পারছেন না। ফলে শ্রমিকরা অবৈধ হয়ে যাচ্ছেন এবং ধরপাকড় শুরু হলে ওই শ্রমিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা হিসেবে কয়েক মাসের সাজা ভোগ এবং তারপর খালি হাতে দেশে ফেরত যেতে হবে।

নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে শামীম আহমদ জানান, সমস্যা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হলো, বাংলাদেশিদের বন্ধ থাকা ইকামা ট্রান্সফার অন্তত এক মাস খুলে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার জরুরিভিত্তিতে সৌদি সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা করে একটি ব্যবস্থা করা। তাহলে যেসব শ্রমিক বর্তমানে যেখানে কাজ করছেন তারা সেখানে ট্রান্সফার হয়ে বৈধ হতে পারবেন। একই সঙ্গে ধরপাকড়ের হাত থেকে রক্ষা পাবেন। না হলে আগামী তিন মাস পর কয়েকলাখ বাংলাদেশি শ্রমিক কয়েক মাসের সাজা ভোগ করে খালি হাতে বাংলাদেশে ফেরত যাবে। এর ফলে রেমিট্যান্সে ধস নামবে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্রসচিব শহিদুল হক সাংবাদিকদের জানান, বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনিটরিংয়ের মধ্যে রয়েছে। তিনি জানান, সরকার সৌদি শ্রমবাজারকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। ব্যক্তিগতভাবে তিনি নিজেও এ বিষয়ে নজর রাখছেন। সৌদিতে কর্মরত শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় সম্ভব সব কিছু করা হবে বলে আশ্বাস দেন জানান। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের অর্জিত রেমিটেন্সের ৪০ শতাংশ এসে থাকে সৌদি আরব থেকে।

হলিটাইম্‌স/সাদি



Comments