হলি টাইমস রিপোর্ট :
কতই বা দূর। বড়জোর ৭ ঘন্টা সময় লাগে। ট্রেব বা বাস যাতেই চলি। তাতেই পৌছে যাওয়া যায় কলকাতার বারাসাতে। ইস - ঢাকার খুব কাছাকাছি চলে আসছেন ফুটবলের বরপুত্র দিয়োগো ম্যারাডোনা। যদি ঢাকার মাঠে আসতো । দেশের ফুটবল ভক্তরা আবারো মেতো উঠতো ফুটবল বন্দনায়। হয়তো বাফুফে সেই চেষ্টায় কোনো ত্রুটি করেনি। নয়তো কখনেই ভেবেই দেখেনি এবাবে ঢাকায় ম্যরাডোনাকে আনা যায়। আফসোস লাগে তখনই যখন দেখি সৌরভের আমন্ত্রনেই চলে আসে ফুটবল ঈশ্বর।
তিন দিন কলকাতা মাতাবেন ম্যারাডোনা। ভারতের আজকাল পত্রিকার সাংবাদিক অগ্নিপান্ডের প্রতিবেদনে রয়েছে সেই খবর। অগ্নিপান্ডে জানিয়েছেন, ছবির মতো স্পোর্টস কমপ্লেক্স। বাইরের জগতের সঙ্গে কোনও মিল নেই। একবার ঢুকলে মনে হবে অন্য জগতে পৌঁছে গেছেন। এখানেই মঙ্গলবার পদধূলি পড়বে ফুটবলের রাজপুত্রের। শুধু তাই নয়, মঙ্গলবার বারাসতের উপকণ্ঠে আদিত্য স্কুল অফ স্পোর্টস স্টেডিয়ামে দিয়েগো আরমান্দো মারাদোনা মুখোমুখি হবেন সৌরভ গাঙ্গুলির। যা চলতি বছরে বাংলার ক্রীড়াজগতে অন্য মাত্রা এনে দিতে চলেছে।
বৃষ্টিতে স্টেডিয়ােমর নয়া বারুমুডা ঘাস যেন আরও সতেজ, সবুজ। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মারাদোনাকে এই স্টেডিয়ামে বরণ করে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। রাজ্যের একমাত্র বেসরকারি স্টেডিয়াম। না, রাজ্যে আর কোথাও এমন ঝাঁ–চকচকে বেসরকারি স্টেডিয়াম নেই। রূপকার অর্নিবাণ আদিত্য। সঙ্গী ভাই অঙ্কিত। দুই ভাই মিলে লড়ে যাচ্ছেন বিশ্বের সর্বকালীন অন্যতম সেরা ফুটবলারকে সেরা মাঠ উপহার দেওয়ার জন্য।
হ্যঁা, মঙ্গলবার মারাদোনা এখানেই খেলবেন। সৌরভ গাঙ্গুলির দলের বিরুদ্ধে। আয়তনে বেশ বড় মাঠ। হতেই পারত এগারো বনাম এগারোর লড়াই। কিন্তু উদ্যোক্তাদের মারাদোনা নিজে জানিয়েছেন তিনি ছোট মাঠে খেলতে চান। বড় মাঠে নয়। সে–কারণেই সেভেন–এ–সাইড ম্যাচ হবে। হাসছিলেন অনিবার্ণ। ‘আমরা সব দিক দিয়ে তৈরি। মারাদোনার যেন কোনও সমস্যা না হয় সেদিকে নজর রয়েছে। আমরা সব দিক দিয়ে গোটা স্টেডিয়ামকে অাধুনিক মোড়কে নিয়ে যেতে চাইছি।’
সমস্যা হল অন্য জায়গায়। গোটা স্টেডিয়ামেই বাকেট চেয়ার বসে যেতে পারত। কিন্তু পুলিসের অনুমতি মেলেনি। সেজন্য মারাদোনা ম্যাচে মাত্র হাজার পাঁচেক দর্শক খেলা দেখবেন। দুটো ড্রেসিংরুম দেখলে কোনও অংশে যুবভারতীর থেকে কম মনে হবে না। একটা নীলরঙা। আরেকটি লালরঙা। নীলরঙের ড্রেসিংরুমই ব্যবহার করবেন মারাদোনা জানালেন অনিবার্ণ আদিত্য।
মারাদোনার জন্য আসছেন হলিউডের বিখ্যাত অভিনেতা নিকোলাস কেজের একসময়ের ব্যক্তিগত রাঁধুনি ইভান ম্যাকলাগাসন। তিিন ১২ ডিসেম্বর সকাল থেকে আদিত্য স্কুল অফ স্পোর্টসে মারাদোনার জন্য তাঁর পছন্দের খাবার বানাবেন। সেই তালিকায় থাকছে যেমন রোল সুশি, স্প্যানিশ টুনা ডিস, চিজ কেক, ঠিক তেমনই পাশাপাশি থাকছে আদিত্য স্কুলের পক্ষ থেকে বাংলার নলেন গুড়ের রসগোল্লা এবং পায়েস।
জানা গেল, ম্যাচটি হবে মোট চল্লিশ মিনিটের। কুড়ি মিনিটের দুটি অর্ধ। মাঝে মিনিট দশেকের বিরতি। মারাদোনা, সৌরভ ছাড়াও অনেক নামীদামি ফুটবলারদের থাকার কথা রয়েছে। রবিবার সন্ধেয় মারাদোনা দ্বিতীয় বারের জন্য কলকাতা শহরে পৌঁছছেন। তাঁকে দুবাইয়ে নিতে চলে গেছেন মারাদোনা ম্যাচের উদ্যোক্তা শতদ্রু দত্ত। রবিবার সন্ধ্যায় শহরে পৌঁছে মারাদোনা বিশ্রাম নিয়ে সোমবার সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন জায়গায় যাবেন। যেমন যাবেন শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবে। সেখানে ফুটবল শিক্ষার্থী ছাড়াও ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশুদের সঙ্গে মিলিত হবেন তিনি। ২৫ ফুটের মারাদোনার মূর্তিও বসার কথা ওখানে। বিকেলে যাবেন বোরিয়া মজুমদারের স্পোর্টস মিউজিয়ামে। উপস্থিত থাকবেন সফল মানুষদের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও। মঙ্গলবার যেতে পারেন চেতলায় অগ্রণীতে। অংশ নেবেন একটি কর্মশালায়ও। তারপর খেলবেন ম্যাচ। যা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ফুটবল–পাগল শহর কলকাতা। সব মিলিয়ে শনিবার আদিত্য স্কুল অফ স্পোর্টস কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেল ‘দিয়েগো বনাম দাদা’ ঐতিহাসিক ম্যাচের জন্য সত্যিই তৈরি বারাসতের উপকণ্ঠে নীরবে বেড়ে ওঠা এক অন্য জগৎ।